ঋষি সুনাক (ওপরে বাঁ থেকে), কিয়ার স্টারমার, এড ডেভি ও নাইজেল ফারাজ
ঋষি সুনাক (ওপরে বাঁ থেকে), কিয়ার স্টারমার, এড ডেভি ও নাইজেল ফারাজ

কোন দল কী প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে

যুক্তরাজ্যে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। আগামী ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। যুক্তরাজ্যের প্রধান দুই দল কনজারভেটিভ পার্টি ও লেবার পার্টি ভোটারদের মন জয় করতে তাদের ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনের জন্য অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা, অভিবাসন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক উন্নয়নের মতো নানা বিষয়ে তারা নানা কথা বলছে।

যুক্তরাজ্যের অনেক পুরোনো একটি দল কনজারভেটিভ। এটি ইউনিয়নিস্ট পার্টি বা টোরি পার্টি নামেও পরিচিত। যুক্তরাজ্যে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তখন বরিস জনসনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় আসে। দলটির মধ্যে গত পাঁচ বছরে অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। দলটির বর্তমান নেতা ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন। দলটি এবার তাদের ইশতেহারে নানা ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ধার ও ঋণ কমানো, ২০২৯-৩০ সাল নাগাদ বার্ষিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান কর কমানো, জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় বাড়ানো এবং ৯২ হাজার নতুন নার্স ও ২৮ হাজার নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা বাজেট ব্যয় জিডিপির আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো, ব্রেক্সিট–পরবর্তী ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করা, অভিবাসীর বৈধতার সীমা নির্ধারণ ও আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর মতো বিষয়গুলো তাদের ইশতেহারে রয়েছে।

বর্তমানে পার্লামেন্টে দলটির আসনসংখ্যা ৩৪৪। জনমত জরিপে দলটির পরিস্থিতি এবার অনেক খারাপ। জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ইউগভের জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ এই দলকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। এর আগে ২০১৯ সালে দলটির জনপ্রিয়তা ছিল ৪৩ শতাংশ।

এদিকে যুক্তরাজ্যে জনমত জরিপে বিরোধী দল লেবার পার্টি এগিয়ে রয়েছে। সামনের এই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা সরকার গঠন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন অনেকে। মধ্য বামপন্থী দলটি ১৯০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনের অধীনে দলটি সর্বশেষ ক্ষমতায় ছিল। বর্তমানে পার্লামেন্টে তাদের আসনসংখ্যা ২০৫। ইউগভের জরিপে দলটির সমর্থন এবার ৩৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে দলটির সমর্থন ছিল ৩২ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে দলটির ইশতেহারে বলা হয়েছে, তারা নতুন শিল্পকৌশল প্রবর্তন করবে। এ ছাড়া কর বাড়ানোর পরিবর্তে সম্পদ সৃষ্টিতে মনোযোগ দেবে তারা। জাতীয় স্বাস্থ্য সেবাখাতে অপেক্ষারত সময় কমাবে এবং প্রতি সপ্তাহে নতুন ৪০ হাজার স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার চেষ্টা করবে। আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠানোর পরিকল্পনা বাতিল করবে ও সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করবে। এর বাইরে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করবে।

যুক্তরাজ্যের এবারের নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দল হচ্ছে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি। ১৮৫৯ সালে গঠিত লিবারেল পার্টির সঙ্গে মিলে ১৯৮৮ সালে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি গড়ে ওঠে। বর্তমানে দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন এড ডেভি। ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কনজারভেটিভদের সঙ্গে মিলে ক্ষমতায় ছিল দলটি। বর্তমানে পার্লামেন্টে দলটির ১৫টি আসন রয়েছে। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, দলটির সমর্থন রয়েছে ১৪ শতাংশ। দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জোর দেবে তারা। চিকিৎসকদের সংখ্যা ও নার্সদের বেতন বাড়ানো হবে। প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি রুয়ান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করা হবে। ২০৪৫ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো ও প্রতিটি স্কুলে পেশাদার মানসিক চিকিৎসক যুক্ত করা হবে।

যুক্তরাজ্যে ১৯৯০ সালে গঠিত আরেকটি দল হচ্ছে গ্রিন পার্টি। দলটির নেতারা হচ্ছেন ক্লারা ডেনিয়ার ও আদ্রিয়ান র‍্যামসে। বর্তমান পার্লামেন্টে তাদের আসন একটি। তাদের ইশতেহারে বলা হচ্ছে, বিত্তবানদের কর বাড়ানোর পাশাপাশি রেল, পানি, ও জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা। এবারের নির্বাচনে তাদের ৭ শতাংশ সমর্থন রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের আরেকটি দল এবারের আলোচনায় রয়েছে। তারা হচ্ছে রিফর্ম ইউকে। ২০১৯ সালে গঠিত ডানপন্থী দলটির নেতা নাইজেল ফারাজ। বর্তমানে তাদের আসন একটি। কিন্তু এবারের জনমত জরিপ বলছে, দলটি ১৮ শতাংশ সমর্থন পেতে যাচ্ছে। তাদের ইশতেহারে দ্রুত অবকাঠামো প্রকল্প শেষ করা, কর্মসংস্থান আইন বাতিল করে আমলাতন্ত্র অপসারণ করার মতো বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে।