তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া লোকজন দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই এখন খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য ছুটছেন। যাঁদের স্বজন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন, তাঁদের অসহায়ত্ব আরও বেশি। কেউ কেউ বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে স্বজনদের উদ্ধারের আকুতি তাঁরা শুনেছেন। তবে তাঁরা কিছু করতে পারেননি। কিন্তু এখন আর তাঁরা কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছেন না।
তুরস্কের হাতায়ে শহরের একটি কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক সেমির কোবান। তিনি ভূমিকম্প থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন। এই শিক্ষক বলেন, তাঁর ভাগ্নে, ভগ্নিপতি, ভগ্নিপতির বোন ধ্বংসস্তূপের নিচে আছেন। এখন তাঁদের বেঁচে থাকার কোনো আলামত তাঁরা পাচ্ছেন না।
সেমির কোবান বলেন, তাঁরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা স্বজনদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাঁরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্বজনেরা কোনো সাড়া দিচ্ছেন না। তাঁরা সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। ভূমিকম্পের পর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।
গত সোমবার সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি হয়। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে।
ভূমিকম্পে তুরস্কে নিহত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৯১। সিরিয়ায় ২ হাজার ৯৯২ জন। দুই দেশ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিহত ১৫ হাজার ৩৮৩ জন।
উভয় দেশে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অজ্ঞাতসংখ্যক মানুষ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ভূমিকম্পের তিন দিন পেরিয়ে যাওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত মানুষ উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে আসছে।
তুরস্কের গাজিয়ানতেপের বাসিন্দা মেলেক হালিসি। গতকাল বুধবার গভীর রাতে তিনি তাঁর দুই বছর বয়সী মেয়েকে কম্বলে মুড়িয়ে উদ্ধারকাজ দেখেছিলেন। তিনি বলেন, ধ্বংসস্তূপের ওপরে বসতেও তাঁদের ভয় হয়। মনে হয়, হয়তো কেউ এই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছেন।
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত জিন্দারিসের বাসিন্দা হাসান। তিনি বলেন, যে ভবনগুলো ধসে পড়েনি, সেগুলোও ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ রয়েছেন।
হাসান বলেন, ধসে পড়া প্রতিটি ভবনের নিচে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ মানুষ আটকা পড়ে আছেন। কিন্তু মাত্র ১০ জন লোক তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এই উদ্ধারকারীদের কাছে যন্ত্রপাতিও নেই।
সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় উদ্ধারকাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটস। তারা বলছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উদ্ধারকাজ করতে হচ্ছে। উদ্ধারকাজে তারা আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আবেদন জানিয়েছে।