ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনার গ্রুপের বিদ্রোহের পর বাহিনীটির যোদ্ধাদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে ভাগনারপ্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র কোমেরসান্তকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন পুতিন।
রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে গত ২৪ জুন বিদ্রোহ ঘোষণা করেন প্রিগোশিন। রুশ সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতে মস্কোর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন ভাগনার যোদ্ধারা। পরে ক্রেমলিনের সঙ্গে সমঝোতার জেরে বিদ্রোহ থামান প্রিগোশন। এরপর ২৯ জুন প্রিগোশিনসহ ভাগনারের ৩৫ কমান্ডারের সঙ্গে ক্রেমলিনে বৈঠক করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
কোমেরসান্তকে পুতিন বলেন, ওই বৈঠকে বিদ্রোহের পর ভাগনার যোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের জন্য কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এর একটি ছিল ভাগনারের একজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারের অধীনে বাহিনীটির যোদ্ধাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া। প্রস্তাব শুনে ভাগনারের অনেক যোদ্ধা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন। তবে তাঁদের সামনে থাকা প্রিগোশিন তা খেয়াল করেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘না, ভাগনারের যোদ্ধারা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন।’
ভাগনারের যোদ্ধাদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট হিসেবে দেখতে চান কি না—সাক্ষাৎকারে পুতিনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘বেসরকারি সামরিক বাহিনীগুলো নিয়ে রাশিয়ায় কোনো আইন নেই। তাই ভাগনারের কোনো অস্তিত্ব নেই।’ পুতিন বলেন, ভাগনারের যোদ্ধাদের কীভাবে আইনের আওতায় আনা যায়, তা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা করা হবে।
রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ অংশ নিয়েছিলেন ভাগনার যোদ্ধারা। কয়েকটি লড়াইয়ে সফলতাও এসেছিল তাঁদের হাত ধরে। তবে বিদ্রোহ প্রত্যাহারের পর এই যোদ্ধাদের দুটি শর্ত দেয় ক্রেমলিন। হয় তাঁদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে, অথবা বেলারুশে চলে যেতে হবে। প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র।
এদিকে শুক্রবার বেলারুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, দেশটির আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ভাগনারের যোদ্ধারা। রাজধানী মিনস্ক থেকে ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ–পূর্বে ওসিপোভিচি শহরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আর গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার জানিয়েছিলেন, ভাগনার যোদ্ধাদের অধিকাংশই এখনো ইউক্রেনে রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে প্রিগোশিন বর্তমানে কোথায় আছেন, তা স্পষ্ট নয়। গতকাল ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, বিষ প্রয়োগ থেকে প্রিগোশিনকে সতর্ক থাকা উচিত। তিনি বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তাই জানেন প্রিগোশিন কী করতে যাচ্ছেন। তিনি কোথায় আছেন, আর কী অবস্থায় আছেন, তা আমরা নিশ্চিত নই। আমি যদি প্রিগোশিন হতাম, তাহলে খাবার নিয়ে সতর্ক থাকতাম। আমার খাবারের মেনুর ওপর নজর রাখতাম।’