ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। মৃত্যুর দুই শতাধিক বছর পরও তাঁর স্মৃতিজড়িত জিনিসপত্র নিজের করে রাখতে চান অনেকে। যেমন নেপোলিয়নের ব্যবহৃত দুটি পিস্তল। গতকাল রোববার ওই পিস্তল দুটি নিলামে ১ কোটি ৮০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছে, বাংলাদেশের হিসাবে যা ২১১ কোটি টাকার বেশি।
পিস্তল দুটি বেশ নজরকাড়া। তাতে রয়েছে সোনা ও রুপার কারুকাজ। খোদাই করা নেপোলিয়নের ছবিও। সেগুলো নিলামে তুলেছিল প্যারিসের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান ওসেনা। এর পাশেই ফোতেনব্ল্যু প্রাসাদ। সেখানে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন নেপোলিয়ন। অবাক করা তথ্য হলো, নিজের প্রাণ নেওয়ার চেষ্টায় নাকি রোববার বিক্রি হওয়া পিস্তলগুলো ব্যবহার করেছিলেন তিনি।
বলা হয়ে থাকে, ঘটনাটি ছিল ১৮১৪ সালের এক রাতের। নেপোলিয়নের বাহিনী তখন বিদেশি শক্তির সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। রাজক্ষমতা ছাড়তে হবে তাঁকে। এর আগে নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন নেপোলিয়ন। তবে বিষয়টি বুঝতে পেরে আগেই পিস্তল থেকে বারুদ সরিয়ে রেখেছিলেন তাঁর এক পরিচারক। পরে নেপোলিয়নকে গ্রেপ্তার করে নির্বাসনে পাঠানো হয়।
পিস্তল দুটি তৈরি করেছিলেন প্যারিসের বন্দুক নির্মাতা লুইস-মারিন গোসে। রোববারের নিলামে পিস্তল দুটির সঙ্গে সেগুলোর বাক্স, বারুদ রাখার পাত্র ও পিস্তলে বারুদ ভরার দণ্ডও বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে দাম ১ কোটি ৬২ লাখ ডলার উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। নিলামের দরাদরিতে তা বেড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। পিস্তলগুলো যিনি কিনেছেন, তাঁর নাম গোপন রাখা হয়েছে।
এমন সময় পিস্তল দুটি বিক্রি হলো, যখন সম্প্রতি সেগুলোকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে দেশটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেগুলো দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর ফরাসি সরকার চাইলেই ৩০ মাসের মধ্যে সেগুলো নতুন মালিকের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারবে। তবে তাঁর ওপর জোরাজুরির করার এখতিয়ার নেই সরকারের।
১৮১৪ সালে নেপোলিয়নকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে। এক বছর পর ১৮১৫ সালের আবার ক্ষমতায় ফিরেছিলেন তিনি। তবে বেশি দিন টিকতে পারেননি। ঐতিহাসিক ওয়াটারলুর যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর আবার নির্বাসনে পাঠানো হয় তাঁকে। সেন্ট হেলেনা দ্বীপে সেই নির্বাসনে থাকা অবস্থায় ১৮২১ সালে মৃত্যু হয় এই সেনানায়কের।