প্রায় দুই মাস বিরতির পর ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এসব হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোরে এ হামলা চালানো হয়। এমন সময় রুশ বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে, যখন রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ড উদ্ধারে পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেন।
শুক্রবারের হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে মধ্যাঞ্চলীয় শহর উমানে। শহরটির একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপরের তলায় ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে চার শিশুসহ ২৩ জন নিহত হন। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ওই ভবনের ৪৬টি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ২৭টিই পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নিপ্রো শহরের একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে দুই বছরের একটি শিশু ও ৩১ বছর বয়সী এক নারী নিহত হয়েছেন। আঞ্চলিক গভর্নর সের্হি লিসাক এ কথা জানিয়েছেন। ওই হামলায় আরও তিনজন আহত হন।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়ার ছোড়া ২৩টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ২১টিই ভূপাতিত করা হয়েছে। বার্তা আদান-প্রদানের সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রামে ধ্বংসস্তূপের ছবি পোস্ট করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি লিখেছেন, ‘ইউক্রেন এবং বিশ্বের পক্ষ থেকে রাশিয়ার এ সন্ত্রাসের অবশ্যই সমুচিত জবাব দিতে হবে এবং সেটি দেওয়া হবে।’
দীর্ঘ বিরতির পর হামলা
শুক্রবার কিয়েভসহ এমন কয়েকটি শহরে হামলা চালানো হয়েছে, যেসব শহরে ৫০ দিনের বেশি সময় এ ধরনের হামলা চালানো হয়নি। রুশ হামলার লক্ষ্যবস্তু কী ছিল তা এখনো স্পষ্ট নয়, যদিও শীতকালজুড়ে ইউক্রেনের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ স্থাপনার মতো বেসামরিক স্থাপনায় নিয়মিত হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী।
গত বছরের শেষ দিকে রাশিয়া মোটামুটি প্রতি সপ্তাহে এ ধরনের হামলা চালাত, যদিও শীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের হামলা কমে আসে। পশ্চিমা দেশগুলোর দাবি, শীতকালে ইউক্রেনের শহরগুলোকে ঠান্ডায় জমিয়ে ফেলার চেষ্টায় চালানো এসব হামলায় রাশিয়া তার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুতের অধিকাংশই ব্যবহার করে ফেলেছে।
শুক্রবারের হামলায় রাজধানী কিয়েভও কেঁপে ওঠে। কর্মকর্তারা বলেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র ও দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তাঁরা বলেন, কিয়েভের ঠিক দক্ষিণে ইউক্রেয়িঙ্কায় দুজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ইউক্রেনের বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স বলেছে, মধ্যরাতের পর মধ্যাঞ্চলীয় শহর ক্রেমেনচুক ও পোলতাভা এবং দক্ষিণের শহর মিকোলাইভেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।
পাল্টা হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন
প্রায় মাসব্যাপী শীতকালীন রুশ বাহিনীর হামলার পর যুদ্ধটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়েছে। এখন পশ্চিমা মিত্রদের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে ইউক্রেন। এখন মূলত হামলা শুরু করতে প্রস্তুত দেশটি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ এ কথা বলেছেন। এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ঈশ্বরের ইচ্ছা, আবহাওয়া এবং কমান্ডারদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে যত দ্রুত সম্ভব আমরা সেটা (হামলা) শুরু করব।’ হামলার কোনো দিনক্ষণ না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবে এ নিয়ে কথা হচ্ছে, আমরা অনেক বেশি প্রস্তুত।’
কিয়েভ আশা করছে, পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের চিত্র পাল্টে যাবে এবং দেশটির বাহিনী রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ডে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ফেরাতে সক্ষম হবে। রেজনিকভ বলেন, অস্ত্রসহ অনেক অত্যাধুনিক সরঞ্জাম হাতে পেয়েছে ইউক্রেন, যা ‘কঠোর আঘাত হানতে’ সাহায্য করবে।
প্রতিশ্রুত অস্ত্র পেয়েছে ইউক্রেন
এদিকে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতিশ্রুত প্রায় সব অস্ত্র হাতে পেয়েছে ইউক্রেন। গত বৃহস্পতিবার ন্যাটোর প্রধান ইয়ানেস স্টলটেনবার্গ এ কথা বলেছেন।
ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘কিয়েভকে প্রতিশ্রুত যুদ্ধযানগুলোর ৯৮ শতাংশের বেশি ইতিমধ্যে সরবরাহ করেছে ইউক্রেনের ন্যাটো মিত্ররা। এর অর্থ হলো বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ১ হাজার ৫৫০টির বেশি সাঁজোয়া যান, ২৩০টি ট্যাংক ও অন্যান্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছে।’