যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কিনতে চান তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এই আগ্রহের কথা তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বলেছেন। কিন্তু বাইডেন তাঁকে পাল্টা শর্ত দিয়েছেন। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে সুইডেনের আবেদনে আপত্তি জানিয়ে আসছে তুরস্ক। বাইডেন চান, এই আপত্তি তুলে নেবেন এরদোয়ান।
তুরস্কের রাজনীতিতে দুই দশক ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছেন এরদোয়ান। প্রথমে ছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী, পরে হন প্রেসিডেন্ট। গত রোববার তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। আগামী পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে চলা দেশটির নেতৃত্ব দেবেন এরদোয়ান।
নির্বাচনে জয়ের পর এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানাতে গতকাল সোমবার ফোন করেছিলেন বাইডেন। এই ফোনালাপে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কিনতে আঙ্কারার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এরদোয়ান। বাইডেনও তাঁকে ন্যাটো এবং সুইডেন ইস্যুতে ওয়াশিংটনের আগ্রহের কথা জানিয়ে দেন। সংবাদমাধ্যমকে এই আলাপের কথা জানিয়েছেন বাইডেন নিজেই।
গতকাল হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, ‘আমি এরদোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তিনি (এরদোয়ান) এখনো এফ–১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে কিছু কাজ করতে চান। আমি তাঁকে বলেছি, আমরা সুইডেনের সঙ্গে একটি চুক্তি চাই। আসুন, একসঙ্গে এটা করা যাক। এটা নিয়ে আমরা একে অপরের সঙ্গে আবার যোগাযোগ করব।’
ন্যাটোতে সুইডেনের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এরদোয়ান কোনো উদ্যোগ নেবেন, এমন প্রত্যাশা করেন কি না? সাংবাদিকেরা বাইডেনের কাছে জানতে চান। জবাবে বাইডেন বলেন, ‘আমি তাঁর (এরদোয়ান) সঙ্গে আলাপে প্রসঙ্গটি তুলেছি। আগামী সপ্তাহে এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে আরও আলোচনা হবে।’
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিরপেক্ষতার নীতি মেনে চলেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। কিন্তু গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে রুশ হামলার শুরুর পর দেশ দুটির নিরপেক্ষ নীতিতে পরিবর্তন আসে। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ধারণা, তাদের দেশেও হামলা চালাতে পারে মস্কো। তাই দেশ দুটি আগাম নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোতে যোগ দিতে চায়। কারণ, কোনো সদস্যদেশে আক্রমণ হলে একযোগে পাল্টা জবাব দেবে ন্যাটোর বাকি সদস্যরা। এটাই এই সামরিক জোটের নিয়ম।
সুইডেন ও ফিনল্যান্ড গত বছর ন্যাটোর সদস্য হতে আবেদন করে। আপত্তি তোলে তুরস্ক। ন্যাটোর আরেকটি নিয়ম হলো, নতুন সদস্য যুক্ত করতে হলে বর্তমান সব সদস্যের সম্মতির দরকার হবে। তাই ন্যাটোর সদস্য তুরস্কের বাধার কারণে এই উদ্যোগ আটকে যায়।
পরে নানা জল ঘোলার পর ফিনল্যান্ডের বিষয়ে নমনীয় হয় তুরস্ক। তুলে নেয় আপত্তি। এর ফলে ন্যাটোভুক্ত হয় ফিনল্যান্ড। কিন্তু সুইডেনের বিষয়ে এখনো অনড় অবস্থানে আছে এরদোয়ানের তুরস্ক। সেই সঙ্গে ঝুলে রয়েছে সুইডেনের আবেদন। তাই এখন সুইডেনের বিষয়ে এরদোয়ানকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে ন্যাটোর প্রভাবশালী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–১৬ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে তুরস্কের আগ্রহ বেশ পুরোনো। এ জন্য দেশটি ২ হাজার কোটি ডলার খরচ করতেও রাজি। কিন্তু আপত্তি তুলেছে মার্কিন কংগ্রেস। কংগ্রেসের মতে, ন্যাটোর সম্প্রসারণের বিষয়ে এখনো সবুজসংকেত দেয়নি আঙ্কারা। এ ছাড়া এরদোয়ানের সিরিয়া নীতি ও তুরস্কের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। তাই আপাতত আঙ্কারার কাছে এফ–১৬ বিক্রি করতে চাইছে না মার্কিন কংগ্রেস।
এদিকে বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়ে এরদোয়ানের দপ্তর এক বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে সহযোগিতার বিষয়গুলো আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা। দ্বিপক্ষীয় এ সম্পর্ক আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।