পুলিশ বলেছে, গত কয়েক বছরে লন্ডনে এক হাজারের বেশি গোপন গাঁজার খামার খুঁজে পেয়েছে তারা
পুলিশ বলেছে, গত কয়েক বছরে লন্ডনে এক হাজারের বেশি গোপন গাঁজার খামার খুঁজে পেয়েছে তারা

শোবার ঘরে ঢুকে দেখলেন মেঝেতে তিন ফুট মাটি বিছানো, হচ্ছে গাঁজা চাষ

যুক্তরাজ্যের উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা চার্লস রিভস কর্মসূত্রে বিদেশ যাওয়ার আগে তাঁর বাড়িটি ভাড়া দিয়ে গিয়েছিলেন। কয়েক মাস পর ফিরে এসে দেখেন বাড়ির সিলিং কেটে বড় ছিদ্র করা হয়েছে, ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে পর্দা, ওপরে শয়নকক্ষের মেঝেতে তিন ফুট পুরু মাটি বিছানো। সেখানে হচ্ছে গাঁজার চাষ।

পুলিশ বলেছে, গত কয়েক বছরে লন্ডনে এক হাজারের বেশি গোপন গাঁজার খামার খুঁজে পেয়েছে তারা। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৬টি পাওয়া গেছে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। যদিও তারা মনে করে, গাঁজার যত গোপন খামার খুঁজে পাওয়া গেছে, বাস্তবে সে সংখ্যা আরও অনেক।

নিজের বাড়িকে গাঁজার আস্ত খামারে পরিণত হতে দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন রিভস। বাড়িতে ঢোকার পরের মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি ঘরে ঢুকে বাতি জ্বালালাম। হায় ঈশ্বর, আমার শয়নকক্ষে তিন ফুট পুরু মাটি।’

রিভস আরও বলেন, ‘আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। গাঁজাখোরেরা আমাদের শয়নকক্ষে ১০ টন মাটি ফেলে গেছে। পুরো বাড়ি গাঁজার কারখানায় পরিণত হয়েছে। সিলিংয়ে অনেক ছিদ্র, চারদিকে তার ছড়ানো এবং পুরো বাড়িতে ভয়ানক দুর্গন্ধ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে প্রতারণার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গাঁজা চাষের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতারকেরা ভাড়া বাড়ি থেকে ভাড়াটে উচ্ছেদের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিচ্ছেন এবং গাঁজা চাষ শেষ করে উধাও হয়ে যাচ্ছেন।

আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। গাঁজাখোরেরা পুরো বাড়ি গাঁজার কারখানায় পরিণত করেছে। মেঝেতে টন টন মাটি, সিলিংয়ে ফুটো এবং পুরো বাড়িতে ভয়ানক দুর্গন্ধ।
চার্লস রিভস, উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা

এমন ভাড়াটেরা বাড়িভাড়াও ঠিকমতো পরিশোধ করেন না। যেমনটা ঘটেছে রিভসের বেলায়। দীর্ঘদিনের জন্য বিদেশে যেতে হবে বলে বাড়ি খালি না রেখে অনলাইনে বাড়ি ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন রিভস। একজন এজেন্ট তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও জানতে পারেন যে তিনি লম্বা সময়ের জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছেন। এজেন্ট তাঁকে একজন ভালো ভাড়াটে পাওয়ার কথা বলেছিলেন। ভাড়াটে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন এবং তাঁর সন্তান আছে বলে রিভসকে বলা হয়েছিল।

পরে সেই ‘ভালো ভাড়াটেই’ প্রতারক হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি রিভসকে কখনোই ভাড়ার অর্থ দেননি, বরং বাড়িকে গাঁজার খামার বানিয়ে ফেলেন। রিভস পরে আবিষ্কার করেন, যে এজেন্টের মাধ্যমে তিনি বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন তিনিও একজন প্রতারক। ভুয়া ওয়েবসাইট চালাতেন। তাঁর সব ভাড়াটে প্রতারক।

পুলিশ জানায়, তারা এ ধরনের যত অপরাধ দেখেছে, সেগুলোর মধ্যে এটাই সবচেয়ে বাজে। রিভসের বাড়ি থেকে চার শতাধিক গাঁজার গাছ উদ্ধার করেছে পুলিশ। যেগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক কয়েক হাজার পাউন্ড।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে প্রতারণার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া নিয়ে গাঁজা চাষের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে প্রতারকেরা ভাড়া বাড়ি থেকে ভাড়াটে উচ্ছেদের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার সুযোগ নিচ্ছেন এবং গাঁজা চাষ শেষ করে উধাও হয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে ভাড়াটে বাড়িভাড়া পরিশোধ না করায় রিভস আগেই আদালতের শরণাপন্ন হন এবং আদালতের আদেশ নিয়ে নিজের বাড়িতে প্রবেশ করেন। বাড়িতে ঢুকে ভেতরে বেশ কয়েকজনকে দেখতে পান। কিন্তু আধা ঘণ্টার মধ্যেই ওই ব্যক্তিরা হাওয়া হয়ে যান। রিভসের স্ত্রী জুলিয়া বলেন, ‘এটা আসলে ভয়ংকর অনুভূতি।’

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গত কয়েক বছরে লন্ডনে এক হাজারের বেশি গোপন গাঁজার খামার খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৬টি পাওয়া গেছে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে। যদিও পুলিশ মনে করে, তারা গাঁজার যত গোপন খামার খুঁজে পেয়েছে, বাস্তবে সে সংখ্যা আরও অনেক।

ভাড়াটেরা ভাড়া নেওয়া বাড়িতে কী করছেন, সে বিষয়ে নজরদারির ঘাটতির কারণে প্রতারকদের জন্য এ ধরনের খামার গড়ে তোলা সহজ হচ্ছে। আবার যাঁরা ভাড়াটে জোগাড় করে দিতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের যোগ্যতাও যাচাই-বাছাই করা হয় না। ফলে বাড়ির মালিকেরা প্রতারকদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন এবং নানা অপরাধ সংঘটিত হয়।

বিশ্বজুড়ে গাঁজার কোটি কোটি পাউন্ডের অবৈধ সাম্রাজ্য গড়ে উঠছে; যা আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্র পরিচালনা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। গাঁজার বড় বাজার রয়েছে লন্ডনেও।