যুক্তরাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল ৭৫ হাজার বছর আগের এক নিয়ান্ডারথাল নারীর মুখচ্ছবি প্রকাশ করেছে। গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া খুলিতে তাঁর মুখাবয়ব পুনর্গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সেই মুখাবয়বের ছবি প্রকাশ করা হয়।
এ নারীর নাম দেওয়া হয়েছে শানিদার জেড। যে গুহা থেকে খুলিটি উদ্ধার হয়েছে, সেটির নামানুসারে এ নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে ইরাকের কুর্দিস্তানের শানিদার গুহা থেকে তাঁর খুলি উদ্ধার হয়।
ধারণা করা হয়, ১৯৬০ সালে শানিদার জেডের কঙ্কালের নিচের অংশ উদ্ধার হয়েছিল। মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিক রালফ সোলেসকি এটি খুঁজে পান। গুহা খনন করে তিনি তখন নিয়ান্ডারথালদের কমপক্ষে ১০টি দেহাবশেষ খুঁজে পেয়েছিলেন।
দেহাবশেষগুলো খুঁজে পাওয়ার প্রায় পাঁচ দশক পর কেমব্রিজ ও লিভারপুল জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুমতি পায়। ইরাকের জাগ্রোস পর্বতমালায় এর অবস্থান।
ধারণা করা হয়, শানিদার জেডের খুলিটি এই শতাব্দীতে নিয়ান্ডারথালদের পাওয়া দেহাবশেষগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুরক্ষিত অবস্থায় ছিল। তবে তাঁর খুলিটি দুই সেন্টিমিটার চ্যাপটা হয়ে গেছে। মৃত্যুর পরপরই একটি পাথরের আঘাতে এমন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
শানিদার গুহা খননের কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কেমব্রিজের ম্যাকডোনাল্ড ইনস্টিটিউট ফর আর্কিওলজিক্যাল রিসার্চের অধ্যাপক গ্রায়েমে বার্কার। এএফপিকে গ্রায়েমে বার্কার বলেন, তাঁর দল ওই গুহায় আরও নিয়ান্ডারথালের দেহাবশেষ পাবে বলে ধারণা করেনি।
বার্কার বলেন, তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা এসব সমাধি কোন সময়ের তা শনাক্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিয়ান্ডারথালদের অস্তিত্ব কেন বিলীন হয়ে গেল তা জানার চেষ্টা করছিলেন। আর এরপর তাঁরা সেখানে আরও দেহাবশেষ খুঁজে পান।
শানিদার জেডের দেহাবশেষটি হলো ওই গুহার মধ্যভাগের পাথরের পেছনের সমাধিতে শনাক্ত হওয়া পঞ্চম দেহাবশেষ। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, নিয়ান্ডারথালরা পাথরটিকে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করত, যেন আর কেউ মারা গেলে তারা সেখানে নিয়ে আসতে এবং সমাহিত করতে পারে।
জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস হান্ট বলেন, মৃতদেহগুলোকে একই জায়গায় জড়ো করে রাখা, একইভাবে একই দিকে মুখ করিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে বোঝা যায় এটি তাদের ঐতিহ্য।
শানিদার জেডের কঙ্কাল এবং আশপাশের ভাঙা অংশগুলোকে উদ্ধার করার আগে আঠার মতো একধরনের উপকরণ দিয়ে শক্ত করে তোলা হয়েছিল। পরে এগুলোকে জোড়া দেওয়া হয়। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিও অ্যানথ্রোপোলজিস্ট এমা পোমেরয়।
পোমেরয় বলেন, কাজটি খুব সাবধানে করতে হয়েছে। কারণ, খুলির অংশগুলো খুব নরম ছিল। চায়ে ডুবালে বিস্কুট যেমন নরম হয়ে পড়ে, তেমনটাই নাজুক ছিল এগুলো।
ভাঙা ভাঙা অংশ জোড়া দিয়ে খুলি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এর থ্রিডি ছবি তৈরি করা হয়। নেদারল্যান্ডসের দুই বিশেষজ্ঞ এদ্রি ও আলফনস কেনিস খুলিতে নকল মাংস ও ত্বক বসিয়ে মুখাবয়ব পুনর্গঠন করেন।
পোমেরয় বলেন, নিয়ান্ডারথালের খুলি মানুষের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন। মানুষের চেয়ে তাদের ভ্রু অনেক বেশি কুঁচকানো থাকে এবং তাদের চিবুক নেই।
নিয়ান্ডারথালরা হলো আধুনিক মানুষের প্রাচীন নিকটাত্মীয়। পৃথিবী থেকে নিয়ান্ডারথালদের অস্তিত্ব পুরোপুরি হারিয়ে গেছে ৪০ হাজার বছর আগে।