আগামী জুন মাসে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউক্রেন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমন্ত্রণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত দুই বছরে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে সংলাপের মাধ্যমে ইউক্রেন সংকট সমাধানের একাধিক উদ্যোগ দেখা গেছে। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনা এখনো হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে আগামী জুন মাসে উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে সুইজারল্যান্ড। এতে ইউক্রেনসহ প্রায় ১০০ দেশ অংশ নেবে বলে ধরে নেওয়া হলেও রাশিয়াকে কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সম্মেলনে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, রাশিয়াকে ছাড়া তা কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
রাশিয়া শান্তি আলোচনা চায় না—এমন ধারণাকে ‘ভ্রান্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেন পুতিন। তাঁর মতে, বাস্তবতার ভিত্তিতে রাশিয়া অবশ্যই সংলাপের জন্য প্রস্তুত।
সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত রুশ দূতাবাস গত বুধবার জানিয়েছিল, আমন্ত্রণ পেলেও ইউক্রেন-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবে না রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে সুইজারল্যান্ডের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির শান্তি ফর্মুলার ভিত্তিতেই সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে। ইউক্রেনের স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার, মস্কোর তরফে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে রুশ কর্মকর্তাদের বিচার চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর রাশিয়ার লাগাতার হামলার ফলে সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। ইউক্রেনের ‘বেসামরিকীকরণ’-এর স্বার্থে এমন পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন পুতিন। তাঁর মতে, এভাবেই সে দেশের সামরিক-শিল্প খাতের ওপর প্রভাব রাখা যায়। তা ছাড়া ইউক্রেন যেভাবে রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা চালাচ্ছে, তারও জবাব দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ইউক্রেনের পূর্বে খারকিভ শহরে ক্রমাগত হামলার প্রেক্ষাপটে সেখান থেকে শিশুদের উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনের সরকার। সেই সঙ্গে সীমান্তের কাছে ৪৭টি গ্রাম থেকেও শিশুসহ পরিবারগুলোকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কাছেই সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে গোলাগুলি ও বোমা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ইউক্রেন এখনো সেই সব হামলা প্রতিহত করতে পারছে না।
তবে রুশ সেনাবাহিনী স্থলপথে খারকিভ ও সংলগ্ন এলাকা দখল করতে পারবে না বলে ইউক্রেন আশ্বাস দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে দ্রুত অস্ত্র ও গোলাবারুদ চেয়েছেন। তাঁর মতে, দীর্ঘ আলোচনার বদলে এখনই এমন সহায়তার প্রয়োজন। বিশেষ করে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিউস সফরে গিয়ে আরও সামরিক সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছেন জেলেনস্কি। সেখানে তিনি ‘থ্রি সিস ইনিশিয়েটিভ’ নামের উদ্যোগের আওতায় ১৩টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশের নেতাদের সঙ্গে এক সম্মেলনে অংশ নেন।