স্লোভেনীয় দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক ইসরায়েলকে নিয়ে সমালোচনা করায় ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হট্টগোল হয়েছে। এবার এই মেলার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উদ্যাপিত হচ্ছে। এবারের মেলায় অতিথি দেশ স্লোভেনিয়া।
স্লোভেনিয়ার ৭৫ জন লেখক, অনুবাদক ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবার ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেছেন। ফ্রাঙ্কফুর্টের পাউল গির্জাতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্লোভেনিয়া দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক বক্তব্য দেওয়ার সময় দর্শকদের কেউ কেউ চিৎকার শুরু করেন। জিজেকের বক্তৃতা থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।
স্লোভেনিয়া দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি হামাসের হামলার নিন্দা করছি এবং ইসরায়েলেরও আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, সেটাও বলছি। কিন্তু আমাদের ফিলিস্তিনের অন্ধকার পটভূমি ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ফিলিস্তিনিদের কথা শুনতে হবে এবং যদি কেউ সংঘাত বুঝতে চায়, তবে তার পটভূমি বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
ফিলিস্তিনিদের কথা শুনতে হবে আজকের পরিস্থিতির জন্য, গাজার ফিলিস্তিনি জনগণকে একচেটিয়াভাবে একটি সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অথচ মধ্যপ্রাচ্য সংঘাতে আমরা ইসরায়েলের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা দেখি না।’
৭৪ বছর বয়সী দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক আরও বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বইমেলার সব মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু গাজায় লাখো মানুষের বিরুদ্ধে দমন–পীড়ন মেনে নেওয়া যায় না।
জিজেক ফিলিস্তিনি লেখিকা আদানিয়া শাবলির সাহিত্য পুরস্কার বাতিলকে একটি ‘কলঙ্কজনক সিদ্ধান্ত’ বলে অভিহিত করেন। জিজেক বলেন, যারা সংস্কৃতিতে বৈচিত্র্য দেখতে চান, তারাই আবার মতের অমিল হলে তাঁকে বাদ দিতে চান, তা মেনে নেওয়া কঠিন।
জিকেক বলেন, ‘সুতরাং আমি এখানে এসে শুধু গর্বিতই নই, আমি একটু লজ্জিতও।’
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত লেখিকা আদানিয়া শাবলিকে এই বছর তার উপন্যাস ‘আ মাইনর ম্যাটার’–এর জন্য লিবারাটুর পুরস্কার দেওয়ার কথা ছিল। ফ্রাঙ্কফুর্টের বইমেলা পুরস্কারটি ২০ অক্টোবর দেওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শুরু হওয়ার কারণে এখন তা স্থগিত করা হয়েছে। লেখিকা আদানিয়া শাবলির উপন্যাসটি ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলি সৈন্যদের একজন বেদুইন নারীকে ধর্ষণ ও পরে হত্যার বিষয় নিয়ে লেখা হয়েছে। বইটি ইতিমধ্যেই আমেরিকান ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে।
জার্মানির টাজ পত্রিকাটি জানিয়েছে, জার্মানিতে লেখকদের সংগঠন পেন ক্লাবের বার্লিনের মুখপাত্র ইভা মেনাসে শুক্রবার বলেছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে ‘কোনো বই আলাদাভাবে, ভালো বা খারাপ বা বিপজ্জনক হয়ে উঠবে—এ ধারণা ভুল। তাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা রাজনৈতিক ও সাহিত্য উভয় দিক থেকেই মৌলিকভাবে ভুল হবে।’
দার্শনিক স্লাভোজ জিজেকের বক্তৃতা চলকালে হেসেন রাজ্যের অ্যান্টিসেমিটিজম কমিশনার উভে বেকার প্রথমে মঞ্চে এসে এবং পরে দর্শকসারি থেকে বক্তৃতা থামানোর চেষ্টা করেন। সরাসরি জিজেকের বক্তব্যের বিরোধিতা করে কিছু অতিথি হল ছেড়ে চলে যান। জিজেককে হামাসের অপরাধকে আপেক্ষিক করার জন্য অভিযুক্ত করেন উভে বেকার। তিনি বেশ কয়েকবার হল ত্যাগ করলেও পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ফিরে আসেন।
ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার পরিচালক জুর্গেন বুস জিজেকের বক্তৃতার পরে বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসের নিন্দা করি। আমরা সবকিছুই আমরা মানবিকভাবে চিন্তা করি, তা ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েল উভয়ের জন্য।’
স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি নাতাসা পিরক মুসার ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্লোভেনিয়া এবং জার্মানি এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। ইসরায়েলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই “সহিংসতার উন্মাদনা” অগ্রহণযোগ্য। তাই আমি জনগণকে সহিংসতা বন্ধ করার এবং মানবতা ও মানবাধিকারকে সম্মান করার আহ্বান জানাই।’