ইরানে ১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত হলেও যুক্তরাজ্যের স্বীকার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ওয়েন। ওই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইরানে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সর্বশেষ নেতাকে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করা হয়েছিল।
এক দশক আগে মার্কিন গোয়েন্দা নথি অবমুক্ত করার মধ্য দিয়ে ওই অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার বিষয়টি কার্যত স্বীকার করে নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ওই গোয়েন্দা নথিতে স্পষ্ট করা হয়, ৭০ বছর আগে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ইরানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক যে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন, সেটা ছিল সিআইও এবং এমআই৬-এর যৌথ চেষ্টার ফসল।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েই মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ইরানে একক আধিপত্য করা ব্রিটিশ একটি তেল কোম্পানিকে জাতীয়করণ করেন। এরপরই মূলত তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬। মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে সরাতে ‘অপারেশন বুট’ নামে একটি অভিযান শুরু করে এমআই৬। তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্র্যুম্যান। তাঁর প্রশাসন মোসাদ্দেককে সমাজতন্ত্রবিরোধী মনে করত। এ কারণে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছিল না তারা।
কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মোসাদ্দেককে হুমকি মনে করতেন। ট্র্যুমানের মেয়াদ শেষে ডুইট আইজেন হাওয়ার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হন। এরপর চার্চিল মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে অপসারিত করতে আইজেন হাওয়ারকে রাজি করাতে সক্ষম হন। এরপর ১৯৫৩ সালের বসন্তে এমআই৬-এর সঙ্গে যৌথভাবে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএও মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার পরিকল্পনা শুরু করে। নতুন অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অ্যাজাক্স’।
মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ওই অভ্যুত্থানের ৭০তম বার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ডেভিড ওয়েন। আজ মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘১৯৫৩ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে ক্ষমতা থেকে উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের যে ভূমিকা ছিল, সেটা স্বীকার করে নেওয়া উচিত যুক্তরাজ্যের। এটা স্বীকার করার অনেক যৌক্তিক কারণ আছে। আমরা যে তখন ভুল করেছিলাম এবং ইরানে গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে পথ তখন তৈরি হয়েছিল, সেটা যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত করেছি, তা স্বীকার করতে হবে।’