ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অধিবেশন

ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীরা ফিরে এলে যা ঘটতে পারে

ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে কট্টর ডানপন্থীরা ক্ষমতায় আসছেন। এ বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনে এর কেমন প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে লিখেছেন পত্রিকাটির ইউরোপ-বিষয়ক কলামিস্ট। লেখাটি গত ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়।

ইউরোপে কট্টর ডানপন্থীদের পুনর্জাগরণ নিয়ে ইদানীং বেশ কথাবার্তা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী জুনে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচনের আবহে রক্ষণশীলেরা শক্ত অবস্থানে যাবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। আর সত্যি এমনটা হলে সেটা আমাদের কী বার্তা দেবে, তা-ও জানতে চান অনেকেই।

এ ভীতি কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। ২০২২ সালে যখন ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনি ক্ষমতায় আসেন, তখন এটা শুরু হয়েছিল। ওই সময় মেলোনির কট্টর ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ‘ব্রাদার্স অব ইতালি’ নির্বাচনে জিতে যায়। একই সময়ে সুইডেনের কট্টর ডানপন্থী দল ‘সুইডেন ডেমাক্র্যাটস’-এর এগিয়ে আসার কথা বলা যায়। এই দল সুইডেনে ক্ষমতাসীন ডানপন্থী রাজনৈতিক জোটের শরিক হয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখছে।

পরের মাসগুলোয় ফিনল্যান্ড ও গ্রিসে রক্ষণশীলদের বিজয় দেখা যায়। ডানপন্থীদের উত্থান অনিবার্য, এমন দৃঢ় ধারণা মুখ থুবড়ে পড়ে গত বছরের জুলাইয়ে। সে সময় স্পেনে কট্টর ডানপন্থী ভক্স ও রক্ষণশীল পপুলার পার্টি জোট বেঁধেও নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়। পেদ্রো সানচেজের নেতৃত্বে প্রগতিশীল জোটের প্রত্যাবর্তন ঘটে।

এর ঠিক তিন মাস পর একই চিত্র দেখা যায় পোল্যান্ডে। দেশটির ভোটাররা জনতোষী ডানপন্থী দল ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পোল্যান্ডে ইউরোপীয় কাউন্সিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কের নেতৃত্বে ক্ষমতায় বসে এক উদারপন্থী সরকার।

তবে কট্টর ডান ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রবল প্রতিহিংসায় ফিরে আসে নেদারল্যান্ডসে গত নভেম্বরের নির্বাচনে ফ্রিডম পার্টির (পিভিভি) অপ্রত্যাশিত বিজয়ের পর। হিয়ার্থ উইলডার্সের নেতৃত্বে ২৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে দেশটির পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে দলটি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি প্রভাবশালী দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও পোল্যান্ড। এর মধ্যে দুটি (জার্মানি ও স্পেন) সমাজতান্ত্রিকদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুটি (ফ্রান্স ও পোল্যান্ড) দেশে ক্ষমতায় আছেন উদারপন্থীরা। মাত্র একটি (ইতালি) দেশের সরকারপ্রধান কট্টর রক্ষণশীল। যদি আগামী গ্রীষ্মে ইতালির মেলোনির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের উইলডার্স যোগ দেন, এরপরও ইউরোপে রাজনৈতিক সমাবেশ মিশ্র ঘরানার থাকবে।

জাতীয় নির্বাচনগুলোর এসব ফলাফল আগামী মাসগুলোয় ইউরোপের জন্য দুটি রাজনৈতিক ও তিনটি নীতিগত তাৎপর্য নির্দেশ করছে। ঢালাও কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না টানতে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সেটা অবশ্য একদিক থেকে স্বস্তিকর। এটা ঠিক, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনসহ সব নির্বাচনেই জাতীয় অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়। আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ক্ষমতার গতি-প্রকৃতি তুলনীয়ও বটে। তবে তা সত্ত্বেও এগুলো দেশে দেশে একই রাজনৈতিক ফলাফল আনে না।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গত দুই বছরের জাতীয় নির্বাচনগুলো আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়। যদিও চলতি বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউরোপীয় নির্বাচনের ফলাফল অনুমান করা অসম্ভব, পরবর্তী ইউরোপীয় কমিশনেও হয়তো ইউরোপীয় ঐক্য-সমর্থক, মধ্য ডানপন্থী, সামাজিক-গণতান্ত্রিক, উদারপন্থী ও পরিবেশবাদী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ধারা প্রতিফলিত হবে। এ ধারাই বর্তমান ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সমর্থন জোগাচ্ছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সবচেয়ে বড় সংগঠন বা গোষ্ঠী (গ্রুপ) তাদের প্রধান প্রার্থীকে কমিশনের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন দেয়। আর কমিশনই হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী কর্তৃপক্ষ।

জনতোষী ভাবধারার মদদে ইউরোপীয়রা অভিবাসন নিয়ে যত বেশি উত্তেজিত হবে, বাগাড়ম্বর করবে, ততই হয়তো এর নীতিগত সমাধান খোঁজার বিষয়টি ঝুলে যাবে। একটা বিষয়ে ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী দলগুলো একমত। তারা অনিয়মিত অভিবাসী আর রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের চায় না। কিন্তু এসব মানুষের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য আছে।

তার ওপর কমিশনের পদগুলোয় নিয়োগ চূড়ান্ত করতে আগামী গ্রীষ্মে ইউরোপীয় কাউন্সিলের টেবিলের চারপাশে যে ২৭ সরকারপ্রধান বসবেন, তাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘরানার মানুষ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচটি প্রভাবশালী দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন ও পোল্যান্ড। এর মধ্যে দুটি (জার্মানি ও স্পেন) সমাজতন্ত্রপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দুটি (ফ্রান্স ও পোল্যান্ড) দেশে ক্ষমতায় আছেন উদারপন্থীরা। মাত্র একটি (ইতালি) দেশের সরকারপ্রধান কট্টর রক্ষণশীল। যদি আগামী গ্রীষ্মে ইতালির মেলোনির সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের উইলডার্স যোগ দেন, এরপরও ইউরোপে রাজনৈতিক সমাবেশ মিশ্র ঘরানার থাকবে।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান

তবে নিরুদ্বেগ থাকার সুযোগ নেই। কেননা, রাজনৈতিক বাতাস এখন কট্টর ডানপন্থার দিকে বইছে। বিশেষত জার্মানি ও ফ্রান্সে এটা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এটাকে কয়েকটি ঘটনা বা প্রবণতার পরিণতি হিসেবে ভাবা যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, মধ্যপন্থী দলগুলোর কট্টরপন্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা করার এক আত্মঘাতী রাজনৈতিক প্রবণতা। মধ্যপন্থী দলগুলো ভাবে, এমন মৈত্রী কট্টরদের রাজনৈতিক পালের হাওয়া চুপসে দেবে। কিন্তু যতবার তারা এ পথে যায়, ততবারই ক্ষতি হয় তাদেরই। হয় তারা নিজেদের সমর্থন বাড়াতে ব্যর্থ হয় (স্পেনের পিপলস পার্টির হাল), নয়তো কট্টর ডানপন্থীদের কাছে তাদের ভোট হারায় (যেমনটা হয়েছে ইতালি আর নেদারল্যান্ডসে)।

সেই রাজনৈতিক মৌসুম এখনকার মতো শেষ হয়েছে। অন্তত ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা না আসা পর্যন্ত। তেমন বিপর্যয় ঘটলে কী হবে, তা নিয়ে বাজি ধরার কোনো অবকাশ নেই। তখন অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। ইউরোপের কট্টর ডানপন্থীদের এমন কুৎসিত চেহারা তখন সামনে চলে আসতে পারে, যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।

এটা আশ্চর্যজনক নয়। মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো যখন কট্টরপন্থীদের সঙ্গে জোট গড়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়, তখন ভোটাররা ভাবেন, কট্টরদের ভোট দিলে তা নষ্ট হবে। কেননা, তাঁরা মনে করেন, এসব দল কখনোই সরকার গড়তে পারবে না। কিন্তু যখন মধ্যপন্থীরা কট্টর ডানপন্থীদের নেকনজরে দেখেন, তখন ভোটারদের এই নিরুৎসাহ দূর হয়ে যায়।

তদুপরি মধ্যডান দলগুলো যখন ডানপন্থী জনতোষী কোনো দাবিকে আপন করে নেয়, ভোটাররা সেগুলোর কিছুটা জোলো সহনীয় সংস্করণের বদলে আদি ও অকৃত্রিম কট্টর ডানপন্থী রূপকেই বেছে নেন। এমন একটি উদাহরণ হচ্ছে, অভিবাসনকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে অগ্রাধিকার নীতি হিসেবে তুলে ধরা। একই কাজ বারবার করে ভিন্ন ফল আশা করা—পাগলামির এই বিখ্যাত সংজ্ঞায়ন মনে আসে। মনে হয়, ইউরোপে এখন সেটাই চলছে।

জার্মানির ম্যানফ্রেড ওয়েবারের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য-ডানপন্থী সংগঠন। আমি বুঝতে পারছি, তারা কট্টর ডানপন্থী ইউরোপিয়ান কনজারভেটিজম অ্যান্ড রিফরমিস্ট দলের সঙ্গে সহযোগিতার ব্যাপারে নমনীয় হচ্ছে। সংগঠনটিতে মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি এবং পোল্যান্ডের ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টিও রয়েছে।

আমরা যদি ইউরোপে আরও ডানপন্থী রাজনৈতিক দৃশ্যপট কল্পনা করি, তাহলে তার নীতিগত তাৎপর্য কেমন হবে? প্রথমত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইউক্রেনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ইতিমধ্যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের মতো কট্টর ডানপন্থী ও জনতোষী নেতারা এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগ দেওয়ার আলোচনা আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ ছাড়া কিয়েভের জন্য পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর অর্থনৈতিক সহায়তা ও দুই হাজার কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তা প্রস্তাব আটকে দেওয়ার কথাও তাঁরা বলেছেন।

ভিক্টর অরবানের রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতির ব্যাপারটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন যে তিনি এটা খোলাখুলি প্রকাশ করতে সাহসী হচ্ছেন, সেটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। তিনি হয়তো হিসাব কষে ভাবছেন, রাজনৈতিক হাওয়া এখন তাঁর পক্ষে বইছে। যদিও জর্জিয়া মেলোনির মতো অতি ডানপন্থী নেতারা এখনো ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলছেন, তবু উদ্বেগের আলামত দেখা যাচ্ছে।

কয়েক মাস আগের একটি ঘটনা মনে করা যেতে পারে। রাশিয়ার দুজন কৌতুকাভিনেতা মেলোনিকে ফোনে একটি তামাশার কল (প্রাঙ্ককল) করেছিলেন। তাঁদের একজন নিজেকে আফ্রিকান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেন। প্রশ্নের উত্তরে মেলোনি মনের কথা ফাঁস করে দেন। উদ্বেগের বিষয় প্রাঙ্ককল আসা নয়। কেননা, এর আগেও অনেক ইউরোপীয় নেতা এমন কল পেয়েছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, আফ্রিকার কোনো রুশদরদি নেতার সঙ্গে আলাপ করছেন ভেবে মেলোনি যা বলেছিলেন, সেসব কথা।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা যুদ্ধক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এ থেকে রাশিয়ার সঙ্গে আপসের একটি পথ তৈরি হতে পারে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ কথা থেকে বোঝা যায়, ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা মিত্রদের সমর্থন অবিচল নয়।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি

দ্বিতীয় নীতিগত তাৎপর্য হলো, জলবায়ু সংকটের ক্ষেত্রে। এ বিষয়েও ডানপন্থীদের প্রতিরোধ শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তাঁরা ইতিমধ্যে জল ঢেলে ইউরোপীয় সবুজ চুক্তিকে তরল করে দিয়েছেন। বিশেষত, বন ধ্বংস করা এবং কৃষির মতো বৃহত্তর টেকসই জলবায়ুর প্রসঙ্গগুলোতে। সামনের দিনগুলোয় এ হাওয়া আরও বাড়তে পারে।

ডানপন্থীরা সম্ভবত কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার উদ্যোগ পুরোপুরি আটকে দেবেন না। তবে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপকে তাঁরা যদি সমর্থন দেন, সেটা সম্ভবত প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও শিল্পনীতির আঙ্গিকে উপস্থাপিত হবে। সেই অর্থে জলবায়ুর কথা বলে কোনো সমর্থন তাঁরা জানাবেন না। এরপরও কথা থাকে। জোরালো ডানপন্থীরা নতুন তহবিল লাগার মতো ইউরোপীয় কোনো শিল্পনীতিকে সমর্থন করবেন, এমনটা হওয়া কঠিন। একই কারণে কঠোরতর ডানপন্থী ইউরোপ নীতিগতভাবে প্রতিরক্ষার প্রতি জোর হয়তো দেবে, তবে সেই লক্ষ্যে ইউরোপীয় তহবিল থেকে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দে অনুমোদন দেওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

তিন নম্বর তাৎপর্যটি অভিবাসন প্রসঙ্গে। এখানে আপাতবিরোধী সত্যটি হলো, জনতোষী ভাবধারার মদদে ইউরোপীয়রা অভিবাসন নিয়ে যত বেশি উত্তেজিত হবে, বাগাড়ম্বর করবে, ততই হয়তো এর নীতিগত সমাধান খোঁজার বিষয়টি ঝুলে যাবে। একটা বিষয়ে ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী দলগুলো একমত। তারা অনিয়মিত অভিবাসী আর রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের চায় না। কিন্তু এসব মানুষের দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্য আছে। সুতরাং তারা এ সমস্যার ভার অভিবাসনপ্রত্যাশী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের উৎস দেশ কিংবা যাতায়াতের দেশের ওপর চাপিয়ে দিতে চান। তবে ২০১৬ সালে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চুক্তি ছাড়া কোথাও এটা কার্যকর হয়নি। তিউনিসিয়ার সঙ্গে করা সমঝোতা স্মারককে ব্যর্থতার সর্বশেষ নজির বলা যেতে পারে।

এর কোনোটাই ভালোকিছুর আভাস দিচ্ছে না। তবে ডানপন্থী ঝোঁক ইউরোপ মহাদেশে উদার গণতন্ত্রের অবসান ঘটাবে বলে মনে হয় না। এমনও মনে হয় না যে ইউরোপীয় ঐক্যের প্রতি সন্দিহান হয়ে ইইউ ছাড়তে দেশগুলোর লাইন পড়ে যাবে। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের পর তেমন ভয় করা হয়েছিল।

সেই রাজনৈতিক মৌসুম এখনকার মতো শেষ হয়েছে। অন্তত ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফিরে আসা না আসা পর্যন্ত। তেমন বিপর্যয় ঘটলে কী হবে, তা নিয়ে বাজি ধরার কোনো অবকাশ নেই। তখন অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। ইউরোপের কট্টর ডানপন্থীদের এমন কুৎসিত চেহারা তখন সামনে চলে আসতে পারে, যা আগে কখনোই দেখা যায়নি।

অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্য সাইমুম