রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

বাঁধভাঙা পানিতে ভাসছে খেরসন

কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধটি গত মঙ্গলবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইউক্রেনের নিপ্রো নদীর ওপর নোভা কাখোভকা বাঁধটি বোমায় গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর বন্যার পানিতে ভেসে যায় পুরো এলাকা। দুর্গতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। গতকাল দেশটির খেরসনে
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসনে নোভা কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ধ্বংসের পর নিপ্রো নদীর তীরের বিশাল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তীরের রাশিয়া ও ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত এলাকায় প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে পড়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এমনটাই বলছেন।

নিপ্রো নদীতে নির্মিত সোভিয়েত আমলের বাঁধটি গত মঙ্গলবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বাঁধটি ধ্বংসের জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া পরস্পরকে দায়ী করেছে।

জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তাবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস খেরসনের এই গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় গুরুতর ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

বাঁধটি ধ্বংসের পর যুদ্ধাঞ্চলসহ আশপাশের একটা বড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে হাজারো মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের হিসাবমতে, বাঁধ ধ্বংসের জেরে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে।

বাঁধটি থেকে খেরসন শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। গতকাল বুধবারই শহরের নিম্নাঞ্চলের পানির স্তর ৩ দশমিক ৫ মিটার বেড়ে যেতে দেখা গেছে।

নদীতীরবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা ওলেকসান্দার রিভা বলেন, ‘যদি পানি আরেক মিটার বাড়ে, তাহলে আমাদের ঘর ছাড়তে হবে।’ তিনি ইতিমধ্যে ঘরের জিনিসপত্র পাশের উঁচু জায়গায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে এসেছেন।

গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বাঁধটি ধসের ফলে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য, নিরাপদ পানি ও জীবিকা বিনষ্ট হবে। এই ঘটনা দক্ষিণ ইউক্রেনে উভয় পক্ষ নিয়ন্ত্রিত এলাকার হাজারো মানুষের জন্য মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে। তিনি আরও বলেন, বাঁধধসের বিপর্যয়ের মাত্রা আগামী দিনগুলোতে পুরোপুরিভাবে বোঝা যাবেি

বাঁধটি ধসের কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রাথমিকভাবে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, বন্যার কারণে সম্ভবত ‘অনেকের মৃত্যু’ হয়েছে।

খেরসন অঞ্চলের নিপ্রো নদী রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পৃথক করেছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কাখোভকা বাঁধটি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আছে। খেরসন শহর রুশ বাহিনী দখল করে নিলেও পরে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়।

চীনের ‘গভীর উদ্বেগ’

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নোভা কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় গতকাল ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন। বেইজিং বলছে, এ ঘটনায় মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে তারা।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সৃষ্ট মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’

ওয়াং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে এবং বেসামরিক লোকজন ও স্থাপনার সুরক্ষায় নিজেদের সর্বোচ্চটা করতে আমরা বিবদমান সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত ও স্পষ্ট। তিনি বলেন, চীন আশা করে, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি সব পক্ষ প্রতিশ্রুতিশীল হবে এবং যৌথভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে।

বাখমুতে এগোচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী

গতকাল কিয়েভ বলেছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতের আশপাশে এক কিলোমিটারের বেশি অগ্রসর হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। চলতি সপ্তাহে ইউক্রেনীয় বাহিনী হামলা শুরু করেছে বলে রাশিয়া জানায়। এরপর এই প্রথম সামনে অগ্রসর হওয়ার স্পষ্ট দাবি করল ইউক্রেন। অবশ্য ইউক্রেনের হামলা ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।

এদিকে ইউক্রেনের বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা হামলার বিষয়ে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পর্ষদের সচিব ওলেকসি দানিলভ রয়টার্সকে বলেছেন, এখন স্থানীয়ভাবে হামলা চালানো হচ্ছে। পুরোদমে পাল্টা হামলা এখনো শুরু হয়নি। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা পাল্টা হামলা শুরু করব, প্রত্যেকে বিষয়টি জানতে পারবে; তারা দেখবে।’