ইউক্রেন যুদ্ধের ৩০০ দিন

কঠিন পরিস্থিতিতে অধিকৃত চার অঞ্চলের বাসিন্দারা: পুতিন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর ৩০০তম দিন ছিল আজ মঙ্গলবার। এ সময়ের মধ্যে যুদ্ধের মোড় কয়েকবার পাল্টেছে। তবে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি দুই পক্ষের কেউই। এই পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের অধিকৃত চারটি অঞ্চলে চাপে থাকার কথা জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। অন্যদিকে পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আহ্বান, যুদ্ধে জিততে হলে তাঁর দেশকে আরও অস্ত্রসহায়তা দিতে হবে। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট ও রয়টার্সের।

রাজধানী মস্কোয় স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন পুতিন। এ সময় তিনি ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলের পরিস্থিতিকে ‘অত্যন্ত জটিল’ বলে মন্তব্য করেন। পুতিন বলেন, ‘জটিল এ পরিস্থিতিতে এখানে যাঁরা বসবাস করছেন, তাঁরা সবাই রুশ নাগরিক। তাঁরা নিরাপত্তার জন্য আপনাদের (রুশ নিরাপত্তা বাহিনীর) ওপর নির্ভরশীল। তাই তাঁদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব।’

এ সময় রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিসের (এফএসবি) সদস্যদের সীমান্তে দেখা দেওয়া যেকোনো ‘নতুন চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করেছিলেন পুতিন। সেপ্টেম্বরে এসে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করে মস্কো। এর মধ্য চারটি অঞ্চলে নিজেদের অধিভুক্ত করে নেয় রাশিয়া। যদিও পশ্চিমা বিশ্ব এই গণভোটকে স্বীকৃতি দেয়নি। এসব অঞ্চলে যুদ্ধও থামেনি। গণভোটের আড়াই মাস পরে এখন পুতিন নিজেই জানান, চারটি অঞ্চলের যুদ্ধপরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল অবস্থায় রয়েছে।

যুদ্ধের প্রায় ১০ মাসের মাথায় এসে ইউক্রেনজুড়ে ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। এসব হামলার পাশাপাশি শীত জেঁকে বসেছে ইউক্রেনে। শীত যত বাড়ছে, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পানির সরবরাহব্যবস্থা লক্ষ্য করে হামলা তত জোরদার করেছে রাশিয়া। গতকাল সোমবারও কিয়েভজুড়ে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালায় মস্কো। এসব হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল হিটিং–ব্যবস্থা।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী সোমবার জানায়, তারা ৩০টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এসব ইরানের তৈরি। গত ছয় দিনের মধ্যে কিয়েভ লক্ষ্য করে এটা ছিল তৃতীয় দফার হামলা। অন্যদিকে গতকাল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলেও রুশ হামলা অব্যাহত ছিল।

যুদ্ধের শুরুতে হামলা চালিয়ে কিয়েভ দখল করতে গিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পিছু হটে রুশ বাহিনী

এর বিপরীতে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা রুশ হামলায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ আবারও চালু করার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। দেশটির সরকারের ভাষ্য, শীতে কিয়েভসহ পুরো ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুশবাহিনী।

এই পরিস্থিতিতে রুশ হামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের প্রতি সহায়তা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। আজ জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের আরও অস্ত্র, গোলাবারুদ...আধুনিক ট্যাঙ্ক প্রয়োজন। আমাদের দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দরকার।’

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক অঞ্চলের বাখমুট শহরকে এখন যুদ্ধের ‘কেন্দ্রস্থল’ বলে অভিহিত করেছেন জেলেনস্কি। যুদ্ধ শুরুর ৩০০তম দিনে আজ বাখমুটের যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শনে যান তিনি। এ সময় যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখা সেনাসদস্যদের পদক তুলে দেন জেলেনস্কি।

চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে রয়েছে ইরান ও বেলারুশ। রুশবাহিনীকে ড্রোন সরবরাহ করেছে তেহরান, যা ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যদিকে গতকাল বেলারুশ সফরে গিয়ে দেশটির নেতা আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। এ সময় পুতিন বেলারুশকে ‘শুধু ভালো প্রতিবেশী নয়, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বস্ত মিত্র’ বলেও মন্তব্য করেন। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে টেলিফোনে পরামর্শ করার পরই ইউক্রেনে হামলা শুরুর নির্দেশ দিয়েছিলেন পুতিন।

অপরদিকে কিয়েভের পাশে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর পশ্চিমা মিত্ররা। মার্কিন প্রশাসন দেশটিকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারের সহায়তার পরিকল্পনা সামনে এনেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, জাপানসহ অনেক দেশ ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে রাশিয়াকে চাপে ফেলতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে পশ্চিমারা। মস্কোও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মাঝে যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দেখা গেলেও তা হালে পানি পায়নি। তাই বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা অর্থ ও অস্ত্রে শক্তি অর্জন করছে ইউক্রেন। তাই ইউক্রেন যুদ্ধ শিগগিরই থামছে না, এটি প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা ব্যাপক।