জনি ওয়ার্ড
জনি ওয়ার্ড

বিশ্বের সব দেশ, ৭ সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ঘুরেছেন তিনি

অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা ভিনসন মাসিফ (৪ হাজার ৮৯২ মিটার উঁচু)। এ বছরের জানুয়ারির শুরুর দিকে এর বরফাচ্ছাদিত চূড়ায় ওঠেন জনি ওয়ার্ড। পেশায় তিনি ভ্রমণবিষয়ক ভ্লগার। আয়ারল্যান্ডের নাগরিক তিনি।

ভ্রমণই জনির ধ্যানজ্ঞান। ভ্রমণপ্রিয় মানুষটির দখলে অনন্য একটি রেকর্ড রয়েছে—বিশ্বের প্রতিটি দেশে ভ্রমণে গেছেন তিনি। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। সব দেশ ভ্রমণ করা প্রথম আইরিশ জনি। ২০১৭ সালে তিনি এ অনন্য রেকর্ড গড়েন।

শুধু কি তা–ই, বিশ্বের সব মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে আরোহণের রেকর্ড জনির দখলে। সেই সঙ্গে করেছেন উত্তর ও দক্ষিণ মেরু ভ্রমণ।

ভ্রমণে গিয়ে শুধু ঘুরে বেড়ান না জনি। ভিডিও করেন। ভ্লগ বানান। এসব করে তিনি লাখ লাখ ডলার আয় করেছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে ইংরেজি শিখিয়ে আয় করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চাকরি করেছেন। চিকিৎসাসংক্রান্ত গবেষণায়ও ছিলেন যুক্ত।

ভিনসন মাসিফ জয় করে সবে থাইল্যান্ডের বাড়িতে ফিরেছেন জনি। ভ্রমণ নিয়ে সেখানে সিএনএন ট্রাভেলের সঙ্গে আলাপে জনি বলেন, ‘ঘুরতে গেলে আমি স্বস্তি বোধ করি।’

জনি আরও বলেন, ‘সব সময় সচেতন থাকি যে আমি একজন সাধারণ মানুষ; বিশ্বমানের কোনো ক্রীড়াবিদ নই। তাই আমার মনে হয়, এসব অর্জনের পেছনে সক্ষমতা ও প্রাণোচ্ছলতার চেয়ে ইচ্ছাশক্তি বেশি কাজ করেছে।’

এর আগে পুরো এক দশক ভ্রমণ করে কাটিয়েছেন জনি। ২০০৭ সাল থেকে শুরু। ২০১৭ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে পা রাখেন তিনি। সব দেশ বলতে জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশকে বোঝানো হয়েছে। সঙ্গে ভ্যাটিকান, ফিলিস্তিন, তাইওয়ান ও কসোভোয় গেছেন।

সব সময় সচেতন থাকি যে আমি একজন সাধারণ মানুষ; বিশ্বমানের কোনো ক্রীড়াবিদ নই। তাই আমার মনে হয়, এসব অর্জনের পেছনে সক্ষমতা ও প্রাণোচ্ছলতার চেয়ে ইচ্ছাশক্তি বেশি কাজ করেছে।
জনি ওয়ার্ড, ভ্রমণপিপাসু আয়ারল্যান্ডের নাগরিক

এ যাত্রায় বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়েছেন জনির ঝুলিতে। ভ্রমণ করেছেন উড়োজাহাজ, ট্রেন, জাহাজ, বাস, এমনকি নৌকায়। হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল। সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ।

জনি জানান, ওমান থেকে ইয়েমেন অবধি কনটেইনার জাহাজে চড়ে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। বাসে চড়ে মিসরের কায়রো থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা, কেপটাউন অবধি গেছেন। নৌকায় পাড়ি দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিপৎসংকুল সমুদ্রপথ।

জনি সব সময় মুক্ত পাখির মতো থাকতে চেয়েছেন। আর এ জন্য বিশ্বের সব দেশ ঘুরে দেখতে চেয়েছেন, এমনটাই জানান তিনি। বলেন, ‘যখন ১০০টি দেশ ভ্রমণের কাছাকাছি পৌঁছে যাই, তখন ঠিক করি, বিশ্বের সব দেশ ভ্রমণ করা প্রথম আইরিশ হব আমি। সবচেয়ে কম বয়সেই আমি এ লক্ষ্য পূরণ করেছি।’

বিশ্বভ্রমণে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়েছেন জনির ঝুলিতে। ভ্রমণ করেছেন উড়োজাহাজ, ট্রেন, জাহাজ, বাস, এমনকি নৌকায়। হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল। সাইকেল চালিয়ে পাড়ি দিয়েছেন দীর্ঘ পথ।

জীবনের এক দশক টানা ভ্রমণ করার পর নিজের লক্ষ্য থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন জনি। তাঁর ভাষায়, ‘লক্ষ্য অর্জনের পর আমি যা ইচ্ছা তা–ই খাওয়া, পান করা শুরু করি। এতে আমার ওজন বেড়ে যায়। আমি আমাদের ব্যবসাকে উপেক্ষা করতে থাকি।’

পরে অবশ্য নিজের দুরবস্থা অনুধাবন করতে পারেন জনি। এরপর নিজেকে আবার চ্যালেঞ্জ জানান। শরীরচর্চা করেন। নিজেকে আবারও পথে নামার জন্য প্রস্তুত করেন। অংশ নেন আল্ট্রাম্যারাথনে। পর্বতে চড়েন। এসবের মধ্য দিয়ে নতুন করে জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পান তিনি।

এরই ধারাবাহিকতায় সাতটি মহাদেশের সবচেয়ে উঁচু সাত পর্বতশৃঙ্গে পা রাখেন জনি। যান উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে। এ পৃথিবীতে খুব কম মানুষই এমন কৃতিত্ব দেখাতে পেরেছেন।

ভ্রমণে গিয়ে শুধু ঘুরে বেড়ান না জনি; ভিডিও করেন। ভ্লগ বানান। এসব করে তিনি লাখ লাখ ডলার আয় করেছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডে ইংরেজি শিখিয়ে আয় করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে চাকরি করেছেন। চিকিৎসাসংক্রান্ত গবেষণায়ও ছিলেন যুক্ত।

এখন আগামী এক দশক সমাজসেবা করে কাটাতে চান জনি। বলেন, ‘বিদ্যালয়ে পড়ার সময় যেসব সহপাঠী স্পেন কিংবা ফ্লোরিডায় ছুটি কাটাতে যেত, ওদের দেখে হিংসা করতাম। পরে ঘুরে বেড়ানো আমার অন্যতম কাজ হয়ে ওঠে।’