যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের আট বন্ধুর উদ্যোগে সংগ্রহ করা তহবিলে মৌলভীবাজারের ৬২ পরিবারকে পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হয়েছে
যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের আট বন্ধুর উদ্যোগে সংগ্রহ করা তহবিলে মৌলভীবাজারের ৬২ পরিবারকে পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হয়েছে

বন্যার্তদের জন্য যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডের আট প্রবাসী বন্ধুর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশের আট প্রবাসী বন্ধু উবারে রাইড শেয়ারিং করে এক দিনের আয় মৌলভীবাজারে বন্যাদুর্গতদের জন্য দান করেছেন। তাঁদের উদ্যোগে উৎসাহী হয়ে পরিচিত ব্যক্তিরাও এগিয়ে এসেছেন। আট বন্ধুর এক দিনের আয় ও পরিচিতিজনদের সহায়তায় ৩ হাজার ৮০০ পাউন্ড ৬১ পেন্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এ তহবিল দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার ৬২ পরিবারকে পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

উবার রাইড শেয়ারিং করে তহবিল সংগ্রহকারীদের মধ্যে লন্ডন থেকে রয়েছেন শামীম, সবুর, শাওন, তাহের, সাইদুল, হাসান এবং আয়ারল্যান্ড থেকে রয়েছেন আকতার ও সুজন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পানি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের সাম্প্রতিক বন্যায় তাঁরা বিচলিত হয়ে পড়েন। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্যায় বাড়িঘর হারানো মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে তাঁরা কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। এই ভাবনা থেকে তাঁরা উবারে রাইড শেয়ারিং করে তহবিল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেন।

ওই আট প্রবাসী জানান, তাঁরা আট বন্ধু মিলে একটি দিন নির্দিষ্ট করেন। দুপুর থেকে শেষ রাত পর্যন্ত নিজেদের গাড়ি দিয়ে উবারে রাইড শেয়ারিং করে আয়ের সব অর্থ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

নিজেদের উদ্যোগের কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করলে পরিচিতজনেরাও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন। আট বন্ধুর এক দিনের আয় ও পরিচিতিজনদের সহায়তায় ৩ হাজার ৮০০ পাউন্ড ৬১ পেন্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। সেই অর্থ দেশে পাঠিয়ে প্রণোদনাসহ ৬ লাখ ২০ হাজার ৩০০ টাকার টিন, সেলাই মেশিন ও নগদ টাকা দিয়ে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার ৬২ পরিবারকে পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়ন পরিষদ, কান্দিরকুল ও তারাপাশা উচ্চবিদ্যালয় পয়েন্ট, মৌলভীবাজার উপজেলার চাঁদনীঘাট পয়েন্ট এবং কুলাউড়া উপজেলার চৌমুহনা ও টিলাগাঁও এলাকায় ৬২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আকমল হোসেন নিপু, মনসুরগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, রাজনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান সোহেল, ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ রুবেল, ক্যাম্পেইন ফর মিডিয়া ফ্রিডমের (সিএমএফ) সভাপতি ও যুগান্তরের মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি হোসাইন আহমদ, দৈনিক দেশ রূপান্তরের জেলা প্রতিনিধি শাহবান রশীদ চৌধুরী অনি, সহসভাপতি আশরাফ আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন, দপ্তর সম্পাদক কামরান আহমদ, কুলাউড়ার সমন্বয়ক তানিম হোসেন রুহিন, সমাজসেবী কাওসার আহমদ, সংবাদ সারাবেলার কুলাউড়া প্রতিনিধি শুভ গোয়াল প্রমুখ।

যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশ যখন প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট কোনো সংকটে পড়ে, তখন প্রবাসীরাও বিচলিত হয়ে পড়েন। ঐতিহাসিকভাবে প্রবাসীরা দেশমাতৃকার জন্য বড় ভূমিকা রেখেছেন। আমাদের সামান্য সহায়তা যদি দেশের একটি পরিবারের কষ্ট লাগব করতে পারে, তাতেই নিজেরা সার্থক বলে মনে করব। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এটা আমাদের ছোট একটি প্রচেষ্টামাত্র।’