দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল কালো মার্সিডিজ গাড়িটি। দুর্ঘটনার পর প্রথম যে কজন ব্যক্তি সবার আগে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন, তাঁদের একজন ফরাসি ফায়ার সার্ভিস কর্মী জেভিয়ের গোরমেলন। তিনি জানতেন না গাড়ির ভেতরে কারা রয়েছেন। শুধু গাড়ির ভেতরে রক্তাক্ত সোনালি চুলের এক নারীকে দেখেছিলেন। তাঁকে টেনে বের করে আনেন জেভিয়ের। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। অস্ফুট স্বরে তিনি কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন।
জেভিয়ের পরে বুঝতে পারেন, ওই নারী সাধারণ কেউ নন। তিনি প্রিন্সেস ডায়ানা, ‘জনমানুষের রাজকন্যা’। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট দুর্ঘটনায় ডায়ানার মৃত্যু সংবাদ শুনে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে বিশ্ববাসী। আর জেভিয়ের হন ইতিহাসের অংশ।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের পন্ত দে ল’আলমা টানেলে মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার পরও ডায়ানা প্রাণে বেঁচে যাবেন, এমনটাই আশা ছিল জেভিয়েরের। কিন্তু তাঁর সেই আশা পূরণ হয়নি। ডায়ানা, তাঁর প্রেমিক দোদি আল-ফায়েদ এবং গাড়িচালক হেনরি পল মারা যান। ডায়ানার দেহরক্ষী ট্রেভর রিস জোনস কেবল বেঁচে গিয়েছিলেন।
দুর্ঘটনার দুই দশক পর জেভিয়ের দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান ডায়ানা শেষ কী কথা বলেছিলেন তাঁকে। সেই সাক্ষাৎকারে সেই রাতের অভিজ্ঞতার কথা জানান জেভিয়ের।
ব্রিটিশ রাজপরিবারে এসে ডায়ানা যেন অথই সাগরে পড়েন। রাজকর্তব্য আর রাজপরিবারের কঠোর নিয়মনীতির বেড়াজালে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে চাওয়া ডায়ানা যেন ছোট্ট খাঁচায় আটকা পড়েন। রীতিমতো দম আটকে আসতে চায় তাঁর। মুক্তি পেতে বিচ্ছেদের পথে হাঁটেন চার্লস-ডায়ানা দম্পতি।
অবশ্য এরও আগে ২০০০ সালে ডায়ানার দেহরক্ষী রিস জোনস ‘দ্য বডিগার্ডস স্টোরি: ডায়ানা, দ্য ক্রাস অ্যান্ড দ্য সোল সার্ভাইভার’ নামে একটি বই লিখেছেন।
পাপারাজ্জিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ডায়ানা-দোদিকে বহনকারী গাড়িটি দ্রুতগতিতে চলছিল। তাঁরা রিটজ হোটেল থেকে বেরিয়ে দোদির অ্যাপার্টমেন্টে ফিরছিলেন। টানেলের মধ্যে কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় গাড়িটির। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জেভিয়ের আরও ৯ ফায়ার সার্ভিস কর্মীর সঙ্গে সেখানে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন, মার্সিডিজ-বেঞ্জের ডব্লিউ১৪০ মডেলের একটি প্রাইভেট কারের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে রয়েছে। পেছনের আসনে একজন পুরুষ ছিলেন, সম্ভবত মারা গেছেন। জেভিয়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পেছনের আসনে এক নারীকে দেখতে পান। তখনো তিনি বেঁচে ছিলেন। খুবই ক্ষীণভাবে শ্বাস নিচ্ছিলেন ওই নারী।
আহত ডায়ানাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেভিয়ের জানান, হাসপাতালে পাঠানোর সময় মনে হচ্ছিল, ওই নারী বেঁচে যাবেন। পরে যখন জানতে পারেন, ডায়না মারা গেছেন! ভীষণ অবাক হন জেভিয়ের। মনে পড়ে যায়, ডায়ানা তাঁকে ফিসফিস করে কিছু কথা বলে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন সেসব কথা গোপন রেখেছিলেন জেভিয়ের।
বৈবাহিক সূত্রে প্রিন্সেস হয়েছিলেন ডায়ানা। তাঁর পুরো নাম ডায়ানা স্পেনসার। তাঁর পরিবার নরফকে স্যান্ডরিংহাম প্রাসাদের পাশে বসবাস করত। ডায়ানার জন্ম সেখানেই। পরে লন্ডনে চলে আসেন ডায়ানা। শৈশব থেকেই ডায়ানা অনিন্দ্য সুন্দরী। স্বভাবে বেশ নম্র ও লাজুক। তাঁর এই ব্যক্তিত্ব তখনকার যুবরাজ (বর্তমান ব্রিটিশ রাজা) চার্লসের নজর কেড়েছিল। ডায়ানার প্রেমে পড়েছিলেন চার্লস। যদিও তখন ডায়ানার বড় বোন সারার সঙ্গে প্রেম ছিল চার্লসের।
চার্লস-ডায়ানা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই সেই শুভদিন। মহাধুমধামে প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসকে বিয়ে করে ডায়ানা হয়ে যান প্রিন্সেস। তাঁদের বিয়ের আসর বসেছিল সেন্ট পল’স ক্যাথেড্রালে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ কোটি মানুষ রাজকীয় এই বিয়ে টিভির পর্দায় দেখেন। সেই আয়োজন যেন রূপকথার গল্পের মতো। তবে চার্লস ও ডায়নার দাম্পত্য জীবন রূপকথার রাজা–রানির মতো সুখের ছিল না।
ব্রিটিশ রাজপরিবারে এসে ডায়ানা যেন অথই সাগরে পড়েন। রাজকর্তব্য আর রাজপরিবারের কঠোর নিয়মনীতির বেড়াজালে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠেন তিনি। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে চাওয়া ডায়ানা যেন ছোট্ট খাঁচায় আটকা পড়েন। রীতিমতো দম আটকে আসতে চায় তাঁর। রাজরক্ত না হওয়ায় প্রাসাদে তিক্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক নিয়েও ছিলেন হতাশ।
তত দিনে উইলিয়াম ও হ্যারি নামের দুই ফুটফুটে ছেলের মা ডায়ানা। কিন্তু ডায়ানার শক্তি ছিল সাধারণ মানুষের ভালোবাসা। দেশে-বিদেশে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তিনি। অসহায় মানুষের কল্যাণে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছুটেছেন। ডায়ানা মানুষকে ভালোবাসতেন। সাধারণের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করতেন। মানুষও তাঁকে ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছিল। তাই তো তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘জনমানুষের রাজকন্যা’।
আলোচিত প্রেম, বিয়ে, পরিবার, বিচ্ছেদ, সমাজকর্ম, ব্যক্তিজীবনের কারণে সংবাদমাধ্যমে সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকতেন ডায়ানা। যা করতেন, তাতেই যেন শিরোনামে উঠে যেত তাঁর নাম। পাপারাজ্জিরা হন্যে হয়ে ছুটতেন ডায়ানার একটি ছবি পাওয়ার আশায়। আর এটাই কাল হয় তাঁর জন্য। পাপারাজ্জির ধাওয়া থেকেই গাড়ি দুর্ঘটনা, পরে মারা যান ডায়ানা।
মাত্র ৩৬ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবন ডায়ানার। এমনও শোনা গেছে, বিচ্ছেদের আগে থেকে ডায়ানা একের পর এক প্রেমে জড়ান। তাঁর প্রেমিকের তালিকায় চার্লসের পাশাপাশি গায়ক ব্রায়ান অ্যাডামস, আর্ট ডিলার অলিভার হোর, ধনকুবের থিওডোর ফোরস্টম্যান, মেজর জেমস হিউইট, দেহরক্ষী পল ম্যানাকি, ব্যবসায়ী দোদি আল ফায়েদ—এমন নানা নাম রয়েছে
রাজপরিবার সব সময় চার্লস-ডায়ানার একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের ছবি মানুষকে দেখাতে চাইত। কিন্তু এ ছবির আড়ালে ছিল তাঁদের দাম্পত্যের তিক্ততা। যার চূড়ান্ত পরিণতি বিচ্ছেদ। ১৯৯২ সাল থেকে চার্লস ও ডায়ানা আলাদা থাকা শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়।
পরে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, চার্লস ও ডায়ানা পরস্পরকে ঠকিয়েছেন। বিবাহিত জীবনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। ডায়ানা অবসাদে ভুগেছেন। পরে চার্লস পুরোনো বন্ধু ক্যামিলাকে বিয়ে করেন। ডায়ানা ঝুঁকে পড়েন মানুষের সেবায়।
অনেকের মতে, ক্যামিলার সঙ্গে চার্লসের সম্পর্ক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ডায়ানা। দিনের পর দিন নীরবে সহ্য করেছেন। অবসাদে ভুগেছেন। একসময় আর আভিজাত্যের আড়ালে অন্ধকার জীবন এগিয়ে নিতে পারেননি তিনি, বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন। যদিও বিচ্ছেদে ডায়ানার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি।
মাত্র ৩৬ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবন ডায়ানার। এমনও শোনা গেছে, বিচ্ছেদের আগে থেকেই ডায়ানা একের পর এক প্রেমে জড়ান। তাঁর প্রেমিকের তালিকায় চার্লসের পাশাপাশি গায়ক ব্রায়ান অ্যাডামস, আর্ট ডিলার অলিভার হোর, ধনকুবের থিওডোর ফোরস্টম্যান, মেজর জেমস হিউইট, দেহরক্ষী পল ম্যানাকি, ব্যবসায়ী দোদি আল ফায়েদ—এমন নানা নাম রয়েছে।
ডায়ানার রূপলাবণ্য ও ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত নাম ব্রিটিশ-পাকিস্তানি চিকিৎসক হাসনাত খান। এই সম্পর্কের খবর মানুষের চোখের আড়ালে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন ডায়ানা। তবে ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কাছে হাসনাতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলেছিলেন তিনি।
বলা হয়, ডায়ানার কষ্টের জীবনে আলো হয়ে এসেছিলেন হাসনাত। হাসি ফুটিয়েছিলেন তাঁর মুখে। ভ্যানিটি ফেয়ার জানায়, হাসনাত-ডায়ানা গোপনে বিয়ের পরিকল্পনাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। পরবর্তীকালে ডায়ানা ও হাসনাতের প্রেমের কথা সংবাদমাধ্যমে জানিয়ে দেন ইমরান খান। তখন পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার ইমরান। পরে দেশটির প্রধানমন্ত্রীও হয়েছিলেন। ডায়ানার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন তিনি।
৩০ আগস্টের সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের (ততক্ষণে ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩১ আগস্ট) দুর্ঘটনা অবধি পাপারাজ্জিরা ডায়ানা-দোদিকে তাড়া করে ফিরেছিল। হোটেল থেকে বের হওয়ার মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে ডায়ানা-দোদির গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। গাড়িটি শুরুতে ওই টানেলের দেয়ালে, পরে একটি কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়।
চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের বছরখানেক পর দোদি আল-ফায়েদের সঙ্গে প্রেম হয় ডায়ানার। দোদি মিসরের ধনকুবের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আল-ফায়েদের ছেলে। ফ্রান্সের দক্ষিণে অভিজাত ভিলা রয়েছে মোহাম্মদ আল-ফায়েদের। ছুটি কাটাতে সেখানে পূর্বপরিচিত ডায়নাকে আমন্ত্রণ জানান এই ব্যবসায়ী। দুই ছেলেকে নিয়ে সেখানে যান ডায়ানা।
ভাগ্য যেন ডায়ানাকে সেখানে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। কেননা, সেখানেই দোদির সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর প্রেম। অবকাশ কাটিয়ে ফ্রান্স থেকে লন্ডনে ফেরার মাস দুয়েক পর চিকিৎসক হাসনাত খানের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান ডায়ানা। বলেছিলেন, এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁর হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু এটাই নিয়তি।
ধনী পরিবারে জন্ম দোদির। তবে বাবার পরিচয়ের বাইরেও একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তুলেছিলেন তিনি। ডায়ানা-দোদির অবকাশ কাটানোর ছবি তখন সাময়িকীগুলোতে আলোচিত। যদিও দুই পক্ষেই এই প্রেম লুকাতে চেয়েছে। শেষ পর্যন্ত একই দিনে পৃথিবী ছেড়ে যেতে হয় দুজনকে।
ওই সময় ভ্যানিটি ফেয়ারে খবর বের হয়, ডায়ানার জন্য দামি আংটি কিনেছিলেন দোদি। পরে ডায়ানা তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রোসা মঙ্কটনকে বলেছিলেন, তিনি ওই আংটি তাঁর ডান হাতে পরতে চান। এ থেকে ধারণা করা হয়, ডায়ানা আর দোদি তাঁদের প্রণয়ের সম্পর্ককে পরিণয়ে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। এমনকি দোদির বাবাও বিশ্বাস করতেন, ডায়ানার সঙ্গে তাঁর ছেলে বাগ্দান সেরেছিলেন।
বাস্তব পরিস্থিতি যা–ই হোক না কেন, ডায়ানা-দোদি তাঁদের সময়টা দারুণ উপভোগ করছিলেন। ১৯৯৭ সালের জুলাইয়ে তাঁরা সার্দিনিয়ায় নৌবিহারে যান। দারুণ সময় কাটান দুজনে। সেখানেও পাপারাজ্জিরা তাঁদের পিছু নেন। ইয়টের ওপর তোলা ডায়ানা-দোদির সেই ছবি সংবাদমাধ্যম লুফে নেন। ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে।
অবকাশ কাটিয়ে জুলাইয়ের শেষের দিকে ডায়ানা-দোদি ফ্রান্সে যান। রিটজ হোটেলে ওঠেন। এ হোটেলের মালিক ছিলেন দোদির বাবা। খোশমেজাজে ছিলেন এই জুটি। ৩০ আগস্ট রাতে তাঁরা পছন্দের একটি রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন। কিন্তু পাপারাজ্জিদের কবলে পড়ে সেই পরিকল্পনা বাদ দিতে হয় তাঁদের। এরপর তাঁরা দোদির অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার জন্য বের হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।
৩০ আগস্টের সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাতের (ততক্ষণে ক্যালেন্ডারের পাতায় ৩১ আগস্ট) গাড়ি দুর্ঘটনা অবধি পাপারাজ্জিরা ডায়ানা-দোদিকে তাড়া করে ফিরেছিল। রিটজ হোটেল থেকে বের হওয়ার মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যে ডায়ানা-দোদির গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। গাড়িটি শুরুতে ওই টানেলের দেয়ালে, পরে একটি কংক্রিটের পিলারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা খায়। তখন মোটরসাইকেলে চেপে পাপারাজ্জিরা ওই গাড়ির পেছনে ছিল।
লেখাটা শুরু হয়েছিল ফরাসি ফায়ার সার্ভিস কর্মী জেভিয়েরের অভিজ্ঞতার গল্প দিয়ে। ডায়ানার মৃত্যুর ২০ বছর পর দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘গাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে আমরা এটিকে খুবই সাধারণ সড়ক দুর্ঘটনা ভেবেছিলাম। হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম।’
জেভিয়ের বলেন, ‘চালক ঘটনাস্থলে মারা যান। তাঁকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিল না।’ জেভিয়ের জানান, পেছনের আসনে দোদিরও প্রাণবায়ু ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে। বেঁচে ছিলেন ডায়ানার দেহরক্ষী রেস-জোনস। গুরুতর আহত হলেও তিনি ডায়ানার নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন। বারবার বলছিলেন, ‘তিনি (ডায়ানা) কোথায়?’
ওই সময় জেভিয়ের ডায়ানার দেহরক্ষীকে চুপ করে থাকতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা হতাহত সবাইকে উদ্ধারে কাজ করছি। আমাদের দলের আর কেউ ইংরেজি বোঝেন না। তাই আপনি চুপ করে থাকুন।’ জেভিয়েরের ভাষ্য, ডায়ানার দেহরক্ষী নিজেও গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাঁর মুখের সব হাড় ভেঙে গিয়েছিল। পরে তিনি দিন দশেক কোমাতে ছিলেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে। এসব ঘটনা তাঁর লেখা বইতেও আছে।
দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ির পেছনের আসনের সামনে ছোট্ট মেঝেতে পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত ডায়ানা। সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন জেভিয়ের। তখন ডায়ানার চোখ খোলা ছিল বলে জানান তিনি। জেভিয়ের ডায়ানাকে অক্সিজেন সরবরাহ করেন। পরে হাত ধরে গাড়িটি থেকে বের করে আনেন। দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। দ্য সানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেভিয়ের বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেওয়ার পর একজন প্যারামেডিক আমাকে বলেন, এটা প্রিন্সেস ডায়ানা।’
শেষ সময়টায় পাশে থাকা জেভিয়ের প্রিন্সেস ডায়ানার শেষ কথা শুনেছিলেন। দুই দশক পর দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা, রক্ত, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন ডায়ানা। অস্ফুট স্বরে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, ‘হায় ঈশ্বর, এটা কী ঘটে গেল!’ সম্ভবত এটাই ছিল জনমানুষের প্রিন্সেসের শেষ কথা। তবে ডায়ানার এ কথার উত্তর দিয়েছিলেন কি না, সাক্ষাৎকারে তা নিশ্চিত করে বলেননি জেভিয়ের।
তবে জেভিয়েরের ভাষ্য, গুরুতর আহত ডায়ানা সম্ভবত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান। পরে ভোর চারটা নাগাদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে।
দুই দশক পরও পুরো ঘটনা এখনো চোখে ভাসে জেভিয়েরের। দ্য সান পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেভিয়ের বলেন, ‘আমি এখনো পুরো ঘটনা চোখের সামনে দেখতে পাই। আমি কখনো ভুলতে পারব না। প্রতিবছর এই দিন যখন আসে, আমি সেই ভয়াবহ ঘটনা মনে করি।’
ফ্যানসাইডেড ডটকম অবলম্বনে লিখেছেন অনিন্দ্য সাইমুম।