ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে রাশিয়া। চলতি মাসে কিয়েভ লক্ষ্য করে এটা রাশিয়ার তৃতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। তবে কিয়েভ দাবি করেছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তারা। এতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনো জানা যায়নি। অন্যদিকে রাশিয়ার ভেতরে কুরস্ক অঞ্চলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের বাহিনী। তারা সেখানে আরও একটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে। এর আগে কুরস্ক অঞ্চলে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করেছে ইউক্রেন।
কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান শেহরি পপকো বার্তা আদান–প্রদান করার অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেন, আগস্টে কিয়েভ লক্ষ্য করে তৃতীয় হামলা করা হলো। প্রতি আক্রমণের ছয় দিন করে বিরতি দেওয়া হয়েছে।
পপকো দাবি করেন, এ হামলায় উত্তর কোরিয়ার তৈরি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর কমান্ডার মাইকোলা ওলেশচুক দাবি করেন, আটটি রুশ আক্রমণকারী ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেনে হামলায় ব্যবহৃত আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে পাঁচটি ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে কিয়েভ লক্ষ্য করে উৎক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে।
কিয়েভের কর্মকর্তারা বলছেন, এ হামলায় রাজধানী কিয়েভে কোনো হতাহত হয়নি। তবে কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর রুশলান ক্রাভচেঙ্কো বলেন, ২টি ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং ১৬টি বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, কোথায় হামলা করছে রাশিয়া, তা জেনেবুঝেই বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। এটা ইচ্ছাকৃত রাশিয়ার সন্ত্রাস। তিনি বলেন, রুশ শহর ও গ্রামগুলো লক্ষ্য করে এক সপ্তাহে রাশিয়া ৪০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র, ৭৫০টি বোমা ও ২০০ ড্রোন হামলা করেছে।
রুশ বাহিনীর এই হামলার পর কিয়েভ ও এর আশপাশের এলাকা বিশেষ করে ইউক্রেনের মধ্য ও উত্তর–পূর্ব এলাকায় নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা জারি করা হয়।
আড়াই বছর আগে ইউক্রেনে পরিপূর্ণ হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী এবং বর্তমানে দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণের ১৮ শতাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শর্ত দিয়েছেন, তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকাগুলোর দাবি ইউক্রেন ছেড়ে দিলে তিনি শান্তি আলোচনায় বসতে রাজি। ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এর মধ্যে ৬ আগস্ট থেকে রাশিয়ার ভেতরে কুরস্ক অঞ্চলে হামলা শুরু করে ইউক্রেন। এরই মধ্যে রাশিয়ার ১ হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকা ও ৮২টি সেনা স্থাপনা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে তারা।
গত শুক্রবার ইউক্রেন দাবি করে, কুরস্কের সিম নদীর ওপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি সেতু তারা ধ্বংস করেছে। এদিকে গতকাল কিয়েভে হামলার সময় ইউক্রেন কুরস্কে জাভানো নদীর ওপর আরেকটি সেতু ধ্বংস করার কথা বলেছে। এ সেতুগুলো রুশ সেনাদের রসদ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে ইউক্রেন।
মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, কুরস্কে ইউক্রেনের আক্রমণ রুশ বাহিনীর ওপর চাপ তৈরি করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই এলাকা উদ্ধারে চেষ্টা করবেন। কিন্তু এ জন্য অন্য জায়গা থেকে আরও লোকবল এবং সরঞ্জামের প্রয়োজন হবে তাঁর।
রাশিয়ার মিত্র উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রুশবিরোধী নীতি বৈশ্বিক নিরাপত্তার পরিবেশকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। গতকাল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এ কথা জানানো হয়। রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের হামলার নিন্দা জানিয়েছে উত্তর কোরিয়া।