ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্কের বাখমুট শহরের দখল নিতে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে রাশিয়া। এ জন্য শহরটি ঘিরে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে মস্কো। আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেন বলেছে, গতকালও দেশটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ বাহিনী। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।
টুইটে যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বাখমুটের চারপাশে ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছে রুশ বাহিনী। যেকোনো সময় তারা শহরটিতে প্রবেশ করতে পারে। এ শহর দখলে নেওয়া হয়তো রুশ বাহিনীর জন্য বড় ধরনের কৌশলগত অর্জন হবে না। তবে এর মধ্য দিয়ে পার্শ্ববর্তী ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরে হামলার পথ সুগম হবে। তাই বাখমুটের নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে মস্কো।
বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যেও হামলা বন্ধ রাখেনি রুশ বাহিনী। বাখমুট, খেরসন, আভদিভকাসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে গতকাল শুক্রবার পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন এলাকায় বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনার ওপর আকাশপথে ২৭টি হামলা ও ৪৪টি রকেট লঞ্চার ছুড়েছে রুশ বাহিনী। এ তথ্য জানিয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রাতভর হামলা হয়েছে ইউক্রেনের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের ঝাপোরিঝঝিয়ায়। সেখানকার গভর্নর ওলেকজান্দ্রা স্টারুখ জানান, আঞ্চলিক রাজধানীর কয়েকটি ভবনে রুশ হামলা হলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে ইউক্রেনের জরুরি সেবা বিভাগ গতকাল জানিয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করা খেরসনের বিভিন্ন এলাকায় পুঁতে রাখা ৭ হাজার ৪২টি মাইন অপসারণ করেছেন তাদের কর্মীরা। ৭০০ হেক্টর উন্মুক্ত ভূমি, ৬০ কিলোমিটার রেলপথ ও ৩২৬টি আবাসিক ভবনে এসব মাইন পুঁতে রাখা হয়েছিল।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শর্ত সাপেক্ষে বৈঠকে বসা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তাতে পানি ঢেলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখনই পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো ইচ্ছা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেই। আর রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও পশ্চিমারা চাপ দিচ্ছে না।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেছিলেন, রাশিয়া যদি যুদ্ধ শেষ করার উপায় খুঁজতে চায়, তাহলে তিনি পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। তবে তার আগে মস্কোকে ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।
এর জবাবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল জানান, বাইডেনের এমন শর্ত মানা সম্ভব নয়। যুদ্ধ চলবে। পাল্টা শর্ত দিয়ে তিনি বলেন, আলোচনায় বসতে হলে রুশ অধিকৃত ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিতে হবে ওয়াশিংটনকে।
বিশ্বজুড়ে ইউক্রেনের ১৭টি দূতাবাস ও কূটনৈতিক মিশনে সন্দেহজনক পার্সেল পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। আজ কুলেবা জানান, পার্সেলগুলো খুলে পাওয়া গেছে পশুর চোখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশ।
গত বুধবার ইতালির মাদ্রিদ শহরে ইউক্রেনের দূতাবাসে একটি পার্সেল পাঠানো হয়। সেটির ভেতরে বিস্ফোরক ছিল। ওই ঘটনায় দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা আহত হন।
এরপরই পার্সেল পাঠানোর ঘটনা ঘটে হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও ইতালিতে অবস্থিত ইউক্রেন দূতাবাসসহ দেশটির ১৭টি মিশন ও দূতাবাসে। এসব ঘটনায় রাশিয়ার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে দাবি কুলেবার।
প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে হক এয়ার–ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম দিয়েছে স্পেন। আজ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ টুইটে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, স্পেন তাঁর দেশকে আরও ছয়টি এই আকাশ–প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ করে আসছে।