রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিতে শিগগির নিজের তিন কিশোর ছেলেকে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ চেচনিয়া অঞ্চলের প্রধান রমজান কাদিরভ। এ ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ছোট থেকেই সামরিক প্রশিক্ষণ পাওয়া তাঁর ছেলেদের এখন সত্যিকারের যুদ্ধ করার সময় এসেছে। তাঁর তিন ছেলের বয়স যথাক্রমে ১৪, ১৫ ও ১৬ বছর।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছেলেদের যুদ্ধে পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রমজান কাদিরভ লিখেছেন, ‘একজন বাবার উচিত, তাঁদের সন্তানদের এ শিক্ষা দেওয়া যে কীভাবে তারা তাদের পরিবার, দেশের মানুষ ও পিতৃভূমি রক্ষা করবে।’ বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া ওই বার্তায় কাদিরভ আরও লিখেছেন, তাঁর ছেলেরা যখন অনেক ছোট, তখন থেকেই তিনি তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। এখন তাদের সত্যিকারের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নেওয়ার সময় এসেছে।
কাদিরভের ওই পোস্টে দেওয়া একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, তাঁর তিন ছেলে একটি প্রশিক্ষণ মাঠে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের মহড়া চালাচ্ছে। ২০০৭ সাল থেকে রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের শাসক কাদিরভ। ওই বছর রমজান কাদিরভকে চেচনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন ভ্লাদিমির পুতিন।
তখন থেকে চেচনিয়া অঞ্চলের পরিস্থিতি তুলনামূলক স্থিতিশীল। এর আগে এক দশক ধরে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়েছেন চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। কাদিরভ ভ্লাদিমির পুতিনের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক। এদিকে চেচেন বাহিনী যুদ্ধের শুরু থেকে রুশ বাহিনীর সঙ্গে মিলে ইউক্রেন সেনাদের বিরুদ্ধে লড়ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিরোধের মুখে রুশ বাহিনীর পিছু হটার বিষয়টি মানতে পারছেন না রমজান কাদিরভ। এ জন্য একাধিকবার রুশ বাহিনীর নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন তিনি।
সম্প্রতি খারকিভ ও দোনেৎস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনী কিছুটা শক্তি হারানোর পরে কাদিরভ তাদের নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন। তিনি রুশ বাহিনীর একজন কমান্ডারকে ‘মাঝারি গুণসম্পন্ন ব্যক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। একই সঙ্গে জরুরি অস্ত্র সরঞ্জাম নিয়েও আক্ষেপ করেন তিনি।
ইউক্রেনে আরও ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সম্প্রতি রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানান কাদিরভ। প্রয়োজনে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন তিনি। তবে কাদিরভের এমন আহ্বানের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আবেগের বশবর্তী হয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
চেচেন নেতা কাদিরভ সামরিক অভিযানের জন্য তাঁর প্রিয়জনদের ইউক্রেনে কেন পাঠাচ্ছেন না, তা নিয়ে সম্প্রতি চেচনিয়ায় অনেকে তাঁর সমালোচনা করেন। কাদিরভও উল্টো তাদের সমালোচনা করেছেন। সন্তানদের যুদ্ধে পাঠানোর ঘোষণা দিয়ে সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, এসব কথা ‘ফাঁকা বুলি’ ছাড়া কিছু নয়।
যেকোনো সংঘাতে ১৮ বছরের কম বয়সীদের সরাসরি অংশগ্রহণ ঠেকাতে জাতিসংঘের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশের একটি রাশিয়া। এদিকে সংঘাতে ১৫ বছরের কম বয়সীদের অংশগ্রহণ যুদ্ধাপরাধ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। যদিও আইসিসির এই বিধানকে রাশিয়া স্বীকৃতিই দেয়নি।