ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি নিহত হয়েছেন। এক উপাত্ত বিশ্লেষণ থেকে বিবিসি এ তথ্য জানতে পেরেছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এ যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে অংশ নিচ্ছেন দেশটির সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়া অনেক স্বেচ্ছাসেবী–বেসামরিক নাগরিকও। ফলে নিহত রুশ সেনার সংখ্যা এতটা বেড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই ইউক্রেনে নিহত রুশ সেনাদের নাম, শেষকৃত্যানুষ্ঠান ও ছবি নিয়ে খবর রাশিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
ইউক্রেনে নিহত ৭০ হাজার ১১২ রুশ সেনার নাম শনাক্ত করতে পেরেছে বিবিসি। তবে নিহত সেনার প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা কিছু পরিবার তাদের নিহত স্বজনদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেনি। এই ব্যক্তিদের, যাঁদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করা যায়নি, তাঁদের নাম নিহত সেনাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার তাঁদের নামও যুক্ত করা হয়নি, যাঁরা ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে নিহত হয়েছেন।
বিবিসি রাশিয়া ও স্বাধীন ওয়েবসাইট মিডিয়াজোনা নিহত ওই সেনাদের নাম সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও উন্মুক্ত সূত্রগুলো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে নিহত সেনাদের নাম। পরে সরকারি কর্তৃপক্ষ ও নিহত সেনাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে পাওয়া এ–সংক্রান্ত তথ্যগুলো যাচাই করেছে বিবিসি।
বিভিন্ন সমাধিসৌধে খোঁড়া নতুন কবরও ইউক্রেনে নিহত রাশিয়ার সেনাদের নাম সংগ্রহের ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে। কেননা কবরগুলো সাধারণত রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরবরাহ করা পতাকা ও পুষ্পমাল্য দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে।
বিবিসি বলেছে, ইউক্রেনে নিহত ৭০ হাজার ১১২ রুশ সেনার নাম শনাক্ত করতে পেরেছে তারা। তবে নিহত সেনার প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা কিছু পরিবার তাদের নিহত স্বজনদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শেয়ার করেনি। এই ব্যক্তিদের, যাঁদের বিষয়ে তথ্য যাচাই করা যায়নি, তাঁদের নাম নিহত সেনাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার তাঁদের নামও যুক্ত করা হয়নি, যাঁরা ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে নিহত হয়েছেন।
নিহত রুশ সেনাদের মধ্যে ১৩ হাজার ৭৮১ জন স্বেচ্ছাসেবী; যা মোট নিহতের সংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। স্বেচ্ছাসেবীর এ সংখ্যা নিহত রুশ সেনাদের অন্য সব ক্যাটাগরিকেই ছাড়িয়ে গেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া রুশ সেনাদের মধ্যে রয়েছেন ওই সব অপরাধীও, যাঁরা সাজা মওকুফের বিনিময়ে এতে যোগ দিয়েছেন। নিহত রুশ সেনাদের মধ্যে আগে এই শ্রেণির সেনার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি ছিল। এখন তাঁদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশ। আর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাধারণ বেসামরিক–সেনাসদস্যের হার ১৩ শতাংশ।
গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে নিহত স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা ১০০–এর নিচে নামেনি। কোনো কোনো সপ্তাহে এ সংখ্যা ৩১০ জন পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধে ইউক্রেনের নিহত সেনাদের বিষয়ে কদাচিত মন্তব্য করে থাকে দেশটি। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে তাঁদের ৩১ হাজার সেনা প্রাণ হারিয়েছেন। তবে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের অনুমান, এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
রিনাত খুসনিয়ারভের কাহিনি ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত রুশ স্বেচ্ছাসেবী সেনাদের অনেকের অবস্থার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। রাশিয়ার ব্যাশকোর্তোস্তানের ইউফা এলাকার বাসিন্দা খুসনিয়ারভ পরিবারের সদস্যদের অন্ন জোটাতে একটি ট্রাম ডিপো ও একটি কাঠের কারখানায় কাজ করতেন। ৬২ বছর বয়সের খুসনিয়ারভ গত নভেম্বরে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরে ইউক্রেনে গিয়ে লড়াই শুরুর পর তিন মাসের কম সময় বেঁচে ছিলেন তিনি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নিহত হন তিনি।
ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া এসব স্বেচ্ছাসেবী ও বেসামরিক লোকজনের অধিকাংশ দৃশ্যত স্বেচ্ছায় রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। যদিও চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের কেউ কেউ মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীদের বলেছেন, নির্যাতন ও হুমকির মুখে রুশ বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।