ইউক্রেন কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না: জেলেনস্কি

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল বুধবার, ওয়াশিংটনে
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন জয় না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বিদেশ সফরে গতকাল বুধবার তিনি পোল্যান্ড হয়ে ওয়াশিংটনে যান। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

ভাষণে জেলেনস্কি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাঁর দেশকে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ–অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এটা সহায়তা নয়, বরং বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ।’

যুদ্ধে জয়লাভ করতে তাঁর দেশের দীর্ঘ মেয়াদে আরও অস্ত্রসহায়তা এবং মস্কোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন বলে এ সময় জেলেনস্কি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের মনে করিয়ে দেন। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগ তাঁর দেশকে টিকে থাকতে ও এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

এর আগে জেলেনস্কি হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনকে ‘একজন সাহসী প্রেসিডেন্ট’ উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ‘একটি স্বাধীন দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমি অবশ্যই শান্তি চাই। তবে নিজ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বিসর্জন দিয়ে নয়।’

অন্যদিকে বাইডেন বলেন, ‘জেলেনস্কি বিশ্ববাসীকে অনুপ্রাণিত করছেন। আপনি কখনোই একা নন। যুদ্ধের প্রতিটি পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র আপনার পাশে ছিল ও থাকবে। একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারলে অবশ্যই অন্ধকারের বিরুদ্ধে জয় হবে।’

জেলেনস্কির এ সফরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে চার্চিল মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছিলেন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। চার্চিলের মতো আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জেলেনস্কিও কংগ্রেসের অধিবেশনে ঘোষণা দিলেন, তাঁর দেশ আত্মসমর্পণ করবে না।

অস্ত্রসহায়তার ঘোষণা

জেলেনস্কির ওয়াশিংটন সফরের সময় গতকাল মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের জন্য ১৮৫ কোটি ডলারের নতুন সহায়তা প্যাকেজের ঘোষণা দেওয়া হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানান, এর আওতায় অত্যাধুনিক প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের আরও প্যাট্রিয়ট চাই...তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারব।’

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আজ বৃহস্পতিবার বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ারে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে বাইডেনের বৈঠকে যুদ্ধে রাশিয়ার উদ্বেগের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়নি। তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের আরও অস্ত্র সরবরাহ সংঘাত পরিস্থিতি জটিল করে তুলবে। এতে ইউক্রেনের ক্ষতি হবে।

অন্যদিকে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার কোনো লক্ষণ ওয়াশিংটন দেখছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল বুধবার, হোয়াইট হাউসে

যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী

রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের একটি ইউনিট পরিদর্শন করেছেন। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ আজ এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এ সফরের বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে রাশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি রোগোজিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের রুশ অধিকৃত দোনেৎস্কে গোলার আঘাতে আহত হয়েছেন বলে আজ নিজেই টেলিগ্রাম বার্তায় জানিয়েছেন। তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্টের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। রুশ সংবাদমাধ্যমের খবর, গতকালের এ হামলায় আহত হয়েছেন রুশ অধিকৃত দোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের প্রধানমন্ত্রী ভিতালি খোৎসেঙ্কোও। তবে দুজনেরই আঘাত সামান্য।