রুশ বাহিনীর ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা শুরু করার কথা অবশেষে স্বীকার করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গত শনিবার এ কথা জানান। অন্যদিকে এই পাল্টা হামলা ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে রাশিয়া।
কয়েক দিন ধরেই মস্কো দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিত পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে কিয়েভ হামলা শুরুর বিষয়ে মুখ খুলছিল না। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞ ও রুশপন্থী ব্লগাররা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জানান, ইতিমধ্যে পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে।
পাল্টা হামলা চালাতে কিয়েভ মোট ১২টি ব্রিগেডে ৫০-৬০ হাজার সেনা প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে ৯টি ব্রিগেড পশ্চিমা অস্ত্রে সজ্জিত এবং কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এই হামলা ঠেকাতে কয়েক মাস ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া।
অঘোষিত সফরে ইউক্রেনে যান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। শনিবার কিয়েভে ট্রুডোর সঙ্গে একান্ত বৈঠক ও যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন জেলেনস্কি। সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, পাল্টা হামলা ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে ইউক্রেন। এ সময় এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলবেন না বলেও জানান তিনি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, কিয়েভের পাল্টা হামলা ব্যর্থ হচ্ছে। তাঁর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জেলেনস্কি বলেন, ‘পাল্টা হামলা নিয়ে পুতিন যা বলেছেন, তা কৌতূহলোদ্দীপক। রাশিয়া সব সময়ই যে এমনটা ভাবে, এর গুরুত্ব আছে। আমার মতে, তাদের আর বেশি দিন নেই।’
সেনা কমান্ডারদের সঙ্গে তাঁর প্রতিদিনই যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘পুতিনকে বলে দেন, (জেনারেলদের) সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে।’
এমন সময় জেলেনস্কি এ কথা বলেছেন, যখন ইউক্রেনীয় বাহিনী পূর্বে বাখমুত অঞ্চলে আর দক্ষিণের জাপরোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। এ ছাড়া রাশিয়ার বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে দূরপাল্লার হামলাও চালাচ্ছে ইউক্রেন।
এর আগে গত শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, এখন পর্যন্ত পাল্টা হামলায় সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। তবে তাদের ‘হামলার সম্ভাবনাকে’ এখনো একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া যায়নি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানির তৈরি চারটি লেপার্ড ট্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পাঁচটি ব্র্যাডলি যুদ্ধযান ধ্বংসকারী সেনাদের পুরস্কৃত করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল সেনাদের এ সামরিক পদক দেওয়া হয়। ইউক্রেন পাল্টা হামলায় পশ্চিমাদের দেওয়া এসব ট্যাংক ও যুদ্ধযান ব্যবহার করেছিল।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, সেনাদের দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘হিরো অব রাশিয়া গোল্ড স্টার’ পদক দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। এই সেনারা ওই সব ট্যাংক ও যুদ্ধযান ধ্বংসের দাবি করেছিলেন।
কয়েক দিন ধরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা একাধিক ভিডিওতে দেখা যায়, ইউক্রেনের সেনাবাহী সাঁজোয়া যান ও ট্যাংকে কা-৫২ হেলিকপ্টার ও ড্রোন থেকে অসংখ্যবার হামলা চালানো হচ্ছে। তবে রয়টার্স আলাদাভাবে এসব ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কিয়েভ সফরে এলেন ট্রুডো। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই কিয়েভের পাশে রয়েছে কানাডা। ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে দেশটি। ট্রুডো বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার জন্য তাঁর দেশ ৫০ কোটি ডলার তহবিল বরাদ্দ দেবে। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমানের পাইলটদের কানাডা প্রশিক্ষণ দেবে বলেও তিনি জানান।
কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়া একে অন্যকে দায়ী করেছে। বাঁধ ধ্বংসের জন্য ট্রুডো রাশিয়াকে দায়ী করেছেন।
মস্কো গতকাল রোববার জানিয়েছে, কৃষ্ণসাগরে গ্যাস পাইপলাইন পাহারায় থাকা রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলার চেষ্টা ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাহাজটি তুর্কস্ট্রিম ও ব্লু-স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন পাহারায় নিয়োজিত ছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কৃষ্ণসাগর নৌবহরের প্রিয়াজোভিয়ে যুদ্ধজাহাজে আক্রমণের ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, হামলায় ছয়টি চালকবিহীন বোট ব্যবহার করা হয়েছিল। সব বোটই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে গতকাল দিনের শুরুতে রাশিয়ার কালুগা অঞ্চলে দুটি ড্রোন বিধ্বস্ত হয়েছে। আঞ্চলিক গভর্নর ভ্লাদিস্লাভ শাপশা বার্তা আদান-প্রদানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম অ্যাপে এ কথা জানিয়েছেন। একটি ড্রোন স্ত্রেলকোভকা গ্রামের কাছে বিধ্বস্ত হয়। অন্যটি মেদিনস্কি পৌর জেলায় বিধ্বস্ত হয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক দিন আগে কাখোভকা বাঁধ ধ্বংস হওয়ার কারণে সৃষ্ট বন্যার পানি নিপ্রো নদী হয়ে কৃষ্ণসাগরে গিয়ে পড়ছে। এতে কৃষ্ণসাগর উপকূল রীতিমতো আবর্জনার ভাগাড় আর প্রাণীদের সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এ কথা বলেছে।