প্রিন্সেস ডায়ানার জন্মদিন আজ। ১৯৬১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মা-বাবার দেওয়া নাম ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেনসার। বেঁচে থাকলে ‘জনমানুষের রাজকুমারী’ হিসেবে পরিচিত প্রিন্সেস ডায়ানার বয়স হতো ৬৩ বছর।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এই ব্রিটিশ রাজবধূ। ডায়ানার সাবেক স্বামী প্রিন্স চার্লস বর্তমানে রাজা তৃতীয় চার্লস উপাধি নিয়ে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আসীন।
ডায়ানা ১৯৮১ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রথম সন্তান প্রিন্স চার্লসকে বিয়ে করার পর প্রিন্সেস অব ওয়েলস হিসেবে পরিচিত হন। ১৯৯৬ সালে বিবাহবিচ্ছেদের আগে প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি নামে তাঁদের দুই সন্তানের জন্ম হয়।
ডায়ানা যখন মারা যান, তখন বড় ছেলে প্রিন্স উইলিয়ামের বয়স ছিল ১৫ আর ছোট ছেলে প্রিন্স হ্যারির বয়স ছিল ১২ বছর। ওই দিন বাবা চার্লস কীভাবে হ্যারিকে তাঁর মায়ের মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছিলেন, হ্যারি তা তুলে ধরেছেন নিজের স্মৃতিকথা ‘স্পেয়ার’-এ।
হ্যারি ও তাঁর বড় ভাই উইলিয়াম ঘটনার দিনই জানতে পারেন সড়ক দুর্ঘটনায় ডায়ানা, তাঁর প্রেমিক দোদি আল-ফায়েদ এবং তাঁদের গাড়িচালক হেনরি পল মারা যান। স্মৃতিকথায় হ্যারি তুলে ধরেন কীভাবে সেদিন তাঁর বাবা চার্লস মায়ের মৃত্যুর কথা জানান। সে কথাটি তাঁর মাথায় কীভাবে তিরের মতো বিদ্ধ হয়েছিল।
স্মৃতিকথায় হ্যারি লিখেন, কীভাবে তাঁর বাবা বিছানার এক পাশে বসে হাঁটুর ওপর হাত রেখে ছোট ছেলেকে মর্মান্তিক সে খবর দিয়েছিলেন। হ্যারি বলেন, তাঁর বাবা অদ্ভুত চাহনিতে তাঁর দিকে তাকিয়েছিলেন। বাবাকে আগে কখনো এভাবে তাঁর দিকে তাকাতে দেখেননি তিনি।
দুর্ঘটনার খবর শোনার পর প্রথম মাথায় কী চিন্তা এসেছিল, সেটাও জানান হ্যারি। ভেবেছিলেন, তখনো মা বেঁচে আছেন। হয়তো বাবা সেটা বুঝিয়ে বলবেন, ‘তাঁকে (ডায়ানা) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, মাথায় যে আঘাত পেয়েছেন, চিকিৎসকেরা তা সারিয়ে তুলবেন। আমরা যাব এবং তাঁকে দেখব। আজ; অন্তত রাতের মধ্যে।’
কিছুক্ষণের মধ্যেই হ্যারি বুঝতে পারেন, ঘটনা আসলে যা ভাবছিলেন, সেটা নয়। মা আর বেঁচে নেই। বাবার যে কথায় বুঝতে পারেন মা আর বেঁচে নেই, সেটি তুলে ধরেন হ্যারি। তাঁকে বাবা বলেছিলেন, ‘তাঁরা (চিকিৎসকেরা) চেষ্টা করেছিলেন, প্রিয় ছেলে। আমার আশঙ্কা, সে (ডায়ানা) আর সাড়া দেয়নি।’
বাবার এই কথাগুলো হ্যারি খুব স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। কথাগুলো যেন ওই সময় সবকিছুকে থামিয়ে দিয়েছিল। হ্যারি বলেন, ‘এ সময় আমি তাঁকে কী বলেছিলাম, তার কিছুই আমার মনে নেই।’ তিনি বলেন, ‘খুব সম্ভবত আমি কিছু বলিনি। যেটা আমি স্পষ্টভাবে মনে করতে পারি, সেটা হলো আমি কাঁদিনি; এক ফোঁটা অশ্রুও নয়।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের উত্তরসূরি প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিয়ের মধ্য দিয়ে শুরু। এরপর স্বামীর পরকীয়া, বিচ্ছেদ এবং নিজেরই প্রেমে জড়িয়ে পড়া—রূপকথার রাজকুমারীর মতোই ঘটনাবহুল জীবন ডায়ানার।
বিশেষ করে মানবকল্যাণমূলক কাজের জন্য বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন প্রিন্সেস ডায়ানা। তিনি যখন মারা যান, তখন তাঁর বয়স সবে ৩৬ বছর। কিন্তু এখনো বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের ‘হৃদয়ের রাজকুমারী’ হয়ে রয়ে গেছেন তিনি।