গুলি–বিস্ফোরণের পর ক্রোকাস সিটি হলে আগুন ধরে যায়। শুক্রবার, রাশিয়ার মস্কোয়
গুলি–বিস্ফোরণের পর ক্রোকাস সিটি হলে আগুন ধরে যায়। শুক্রবার, রাশিয়ার মস্কোয়

যেসব হামলা কাঁপিয়ে দিয়েছিল মস্কোকে

মস্কোর একটি কনসার্ট হলে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্দুকধারীদের হামলা ও আগুনে ৬০ জনের বেশি নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। কনসার্ট উপভোগ করতে যাওয়া লোকজনের ওপর এ আকস্মিক হামলায় হতবিহ্বল মস্কোবাসী। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। কিন্তু এবারই প্রথম নয়, আগেও বেশ কয়েকটি বড় হামলায় কেঁপে উঠেছিল রাশিয়ার রাজধানী।

মস্কোয় গত ২৫ বছরে যেসব বড় হামলা ও তাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, আসুন সে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

সময়টা ১৯৯৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। ওই দিন সকালে দক্ষিণ–পূর্ব মস্কোর একটি আটতলা ভবনে বোমার বিস্ফোরণ হয়। এতে নিহত হন ১১৮ জন।
মস্কো ও রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় সেই সময় দুই সপ্তাহে পাঁচটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে হামলা হয়। ওই ঘটনা ছিল সেগুলোরই একটি। এসব হামলায় মোট ২৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

হামলাগুলোর জন্য মস্কো প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর ককেশাসের চেচনিয়া প্রজাতন্ত্রের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বিদ্রোহীদের দায়ী করে।

২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি ছিল মস্কোবাসীর জন্য আরেকটি রক্তাক্ত দিন। এদিন মস্কোর দোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী হলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান এক ব্যক্তি। তাতে ৩৭ জন নিহত হন। এ হামলারও দায় স্বীকার করে ‘দ্য ককেশাস আমিরাত’।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ হামলাকে চেচনিয়ায় বিদ্রোহ দমনে পরিচালিত অভিযানের পক্ষে যুক্তি হিসেবে খাড়া করেন।

থিয়েটারে জিম্মি সংকট, নিহত ১৩০ জন (২০০২)

২০০২ সালের ২৩ অক্টোবর মস্কোর দুবরোভকা থিয়েটারে ঝোড়ো অভিযান চালায় চেচনিয়ার স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের একটি দল। দলটির ২১ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী সদস্য অনুষ্ঠান চলার সময় থিয়েটারে ৮০০ জনের বেশি দর্শক–শ্রোতাকে জিম্মি করেন।

জিম্মি নাটক অবসানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে দুই দিন ও তিন রাত চলে দর–কষাকষি। তাতে সমাধান না হলে জিম্মিকারীদের অচেতন করতে থিয়েটারের ভেতর বিশেষ গ্যাস ছড়িয়ে দেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর সেখানে অভিযান চালান। এ ঘটনায় ১৩০ জিম্মি মারা যান। তাঁদের অধিকাংশের মৃত্যু হয় দম বন্ধ হয়ে।

রক কনসার্টে হামলা, ১৫ জন নিহত (২০০৩)

থিয়েটারে জিম্মি নাটক অবসানের পরের বছর ২০০৩ সালের ৫ জুলাই মস্কোর কাছে তুশিনো বিমানঘাঁটিতে একটি রক কনসার্টে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান দুই নারী। রাশিয়া তাঁদের চেচেন বিদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করে।

আত্মঘাতী এ হামলায় ১৫ জন নিহত ও ৫০ জনের মতো আহত হন। বার্ষিক ওই উৎসবে রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড দলগুলো অংশ নিয়েছিল। তাতে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার ব্যান্ড সংগীতপ্রেমী।

পাতালরেলে বোমা হামলা, ৪১ জন নিহত (২০০৪)

এক বছর পর ২০০৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকালের ব্যস্ত সময়ে মস্কোর পাতাল রেলপথে (সাবওয়ে) একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় স্বল্পপরিচিত এক চেচেন গোষ্ঠী। এতে ৪১ জন নিহত হন।

মেট্রো আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৪০ জন (২০১০)

২০১০ সালের ২৯ মার্চ। মস্কোর পাতালপথে দুটি হামলা চালান দুজন আত্মঘাতী নারী। হামলায় ৪০ জন নিহত হন। এর একটি হামলা চালানো হয় এফএসবি গোয়েন্দা সার্ভিসের সদর দপ্তরের কাছে লুবিয়াংকা স্টেশন লক্ষ্য করে।

এ দুই নারী হামলাকারী উত্তর ককেশাসের বিক্ষুব্ধ দাগেস্তান অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন বলে পরে জানা যায়। হামলার দায় স্বীকার করেন চেচেন স্বাধীনতাকামীদের একটি গোষ্ঠী ‘দ্য ককেশাস আমিরাত’-এর নেতা দোকু উমারভ।

বিমানবন্দর হামলা, ৩৭ জন নিহত (২০১১)

২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি ছিল মস্কোবাসীর জন্য আরেকটি রক্তাক্ত দিন। এদিন মস্কোর দোমোদেদোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগমনী হলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালান এক ব্যক্তি। তাতে ৩৭ জন নিহত হন। এ হামলারও দায় স্বীকার করে ‘দ্য ককেশাস আমিরাত’।