বিশ্ব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার কী? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলবেন চাকা, আবার কেউ কেউ বলতে পারেন পাউরুটি। তবে সবচেয়ে বেশি যে উত্তর আসবে, তা হলো জন্মনিরোধক পিল। এর চেয়ে আর কোনো বিষয়ই এককভাবে সমাজে বড় পরিবর্তন আনেনি।
১৯৫০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মনিরোধক পিল আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে তা যৌন স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে, যা ষাট ও সত্তরের দশকের নারী মুক্তি আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে আছে। ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) পিলটি অনুমোদন দেওয়ার ৬০ বছরের বেশি সময় পরও যুক্তরাজ্যের প্রজননক্ষম এক-তৃতীয়াংশ নারীর কাছে জন্মনিরোধকের প্রধান পিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর সারা বিশ্বে ১৫ কোটির বেশি নারী এই জন্মনিরোধক পিল ব্যবহার করেন।
যদিও সম্মিলিত পিল ও ‘মিনি পিল’ উভয়কেই প্রায়ই আধুনিকতার প্রতীক ও নারীবাদের মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়। মুখে খাওয়ার জন্মনিরোধকগুলোতে নারীদের ইচ্ছাকৃত গর্ভধারণ এড়ানোর ক্ষেত্রে ঝামেলাও আছে। আবার এটি অন্যদিকে যৌন স্বাধীনতা দিয়েছে। এ কারণে অনেক বছর ধরেই বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায় একটি প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠেছে—পুরুষদের ক্ষেত্রে বিষয়টি কী হবে?
অর্ধশতাব্দীতে পুরুষের জন্মনিরোধক পিলের জন্য অসংখ্য সম্ভাব্য পদ্ধতির প্রস্তাব করেছেন গবেষক ও বিজ্ঞানীরা। এর কোনোটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে, কোনোটির প্রস্তাব শুরুতেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক উন্নতি হলেও এত বছরে পুরুষদের জন্য কোনো জন্মনিরোধক পিল আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
নারীদের জন্য যে পিল আবিষ্কার হয়েছে, তাতে দাগ হওয়া, রক্ত জমাট বাধা বা বিষণ্নতা সৃষ্টির মতো সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ আছে। এদিকে বর্তমানে পুরুষের জন্মনিরোধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগও স্থগিত আছে। যদিও দেখা গেছে, এই পিল গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে কার্যকর হবে। তবে বলা হচ্ছে, এ পিলেও অনেক ‘অগ্রহণযোগ্য’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
গত মাসে গবেষকেরা একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ইঁদুরের ওপর এ-সংক্রান্ত একটি গবেষণায় নতুন ফল পাওয়া গেছে। গবেষণায় ব্যবহৃত একটি মলিকুলার সুইচ শুক্রাণুকে দুই ঘণ্টার জন্য নিশ্চল করে দিতে পারে। ফলে শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর সঙ্গে নিষিক্ত হতে পারে না। তবে মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য আরও অনেক গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পুরুষদের মুখে খাওয়ার জন্মনিরোধক বাজারে আসতে পারে বলে আশাবাদী তাঁরা।
নারীদের পিলের মতো এ পিল হরমোনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই এটি টেস্টোস্টেরনকে কোনো প্রভাবিত করবে না বা এতে হরমোন-সম্পর্কিত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, পিলটি গ্রহণের পর পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত এটি শতভাগ কার্যকর থাকে। তিন ঘণ্টা পর পিলের কার্যকারিতা ৯১ শতাংশে নেমে আসে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটির কার্যকারিতা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যায়।
পিলটি কি তাহলে আরও বেশি যৌন স্বাধীনতা দেবে? পুরুষেরা কি পিলটি সানন্দে গ্রহণ করবে বা এ বিষয়ে তাঁদের ভাবনা আসলে কেমন?
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের চেস্টার মেডিকেল স্কুলের ম্যাটারনাল অ্যান্ড ফেটাল হেলথ অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক গ্যারেথ নয়ি বলেন, ‘পুরুষের জন্মনিরোধক পিলের ধারণা একটি চমৎকার বিষয় হওয়া উচিত। পুরুষদের সীমিত বিকল্প যেমন কনডম বা ভ্যাসেকটমির (বন্ধ্যকরণের জন্য অস্ত্রোপচার) কারণে নারীদের ওপর গর্ভনিরোধের চাপ অনেক দিন ধরেই কমে গেছে।’
এই চিকিৎসক বলেন, নারীরা স্বাভাবিক নিয়মে একটি ডিম্বাণু নিঃসরণ করে। এর তুলনায় পুরুষেরা ক্রমাগত শুক্রাণু উৎপাদন করে। এ কারণে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ করা ও গর্ভধারণ সক্ষমতা রাখতে নানা অসুবিধা হয়েছে। ফলে এত দিন পুরুষের পিল তৈরির অগ্রগতি ধীর হয়েছে। তবে তিনি মনে করেন, পুরুষদের নতুন এ পিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। তবে এটি মানুষের ব্যবহার করতে আরও অনেক সময় লাগবে।
গ্যারেথ নয়ি আরও বলেন, শারীরবৃত্তীয় সমস্যাগুলো বাদ দিলেও পিলটি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা নিয়ে নানা প্রশ্নে উঠবে। তিনি বলেন, ‘ধারণা করতে পারি, অনেক পুরুষ পিলটির সুবিধার কথা বাদ দিয়ে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলবে। নারীদের ক্ষেত্রে অরক্ষিত যৌনতার ঝুঁকি বেশি, পুরুষদের ক্ষেত্রে তা একই রকম নয়। পিলটির কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। এ কারণে নতুন ধরনের জন্মনিরোধক ব্যবহারে অনেক বেশি অনিচ্ছা দেখা যাচ্ছে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, পুরুষেরা তাঁদের যৌনসঙ্গীর জীবন সহজ করতে কতটা ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক।’
টিমের (ছদ্মনাম) বয়স বিশের মাঝামাঝি। তিনি বলেছেন, তিনি বর্তমানে এ-বিষয়ক কোনো ওষুধ খান না। খেলে জীবনধারায় পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, এটি খেলে সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে।’
ধারণা করতে পারি, অনেক পুরুষ পিলটির সুবিধার কথা বাদ দিয়ে সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কথা বলবে। নারীদের ক্ষেত্রে অরক্ষিত যৌনতার ঝুঁকি বেশি, পুরুষদের ক্ষেত্রে তা একই রকম নয়। পিলটির কারণে যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে। এ কারণে নতুন ধরনের জন্মনিরোধক ব্যবহারে অনেক বেশি অনিচ্ছা দেখা যাচ্ছে।গ্যারেথ নয়ি, চেস্টার মেডিকেল স্কুলের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক
একই বয়সী হ্যারিও (ছদ্মনাম) এ বিষয়ে টিমের মতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটা যদি নিরাপদ ও কার্যকর হয়, তাহলে পছন্দ করতাম। তবে যেকোনো নতুন ওষুধের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সমস্যা হবে। যদিও এ পিলের ব্যাপক লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমার মনে হয়, এ কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান পিলটির সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পুরোপুরি অনুসন্ধান না-ও করতে পারে।’
হ্যারি নিরাপদ যৌনতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও উত্থাপন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, এখানে একটি বিপদ আছে। তা হলো পুরুষেরা এটিকে কনডমের বিকল্প হিসেবে দেখবে, যা যৌনবাহিত রোগের ক্ষেত্রে কিছুই করতে পারবে না।’
৪২ বছর বয়সী জেমস (ছদ্মনাম) এ পিলের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা রাখেন। অন্য চিকিৎসার মতোই বিষয়গুলো তিনি মূল্যায়ন করবেন। তবে তিনি যা সহ্য করবেন, তার একটি সীমা আছে। তিনি বলেন, পিল তাঁর সঙ্গীর অনেক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এ কারণে তিনি তাঁকে অন্যান্য গর্ভনিরোধক ব্যবহারের কথা বলেছেন। এখন পুরুষের পিল যদি একই বিপর্যয় নিয়ে আসে, তাহলে তিনি অবশ্যই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন। এ ক্ষেত্রে পিলের পরিবর্তে কনডমের মতো পণ্যগুলোকে দুজনের জন্যই ভালো বিকল্প হিসেবে দেখবেন।
জেমস মনে করেন, পুরুষের জন্য পিল যৌন স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনাকে সহায়কভাবে পরিবর্তন করতে পারে। তিনিও হ্যারির মতোই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, পুরুষেরা পিলটি কনডমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
মার্কেট রিসার্চ ও ডেটা অ্যানালিটিকস ফার্ম ইউগভ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ ব্রিটিশ পুরুষ এই পিল গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় একই সংখ্যক নারী গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহার করছেন। ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা আসলে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এ হার যথেষ্ট ভালো নয়।
কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে পিল নেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁদের সম্পর্কের অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। গ্রেগ (ছদ্মনাম) বলেছেন, ‘আমি যদি অবিবাহিত হতাম, তাহলে পুরুষ জন্মনিরোধক পিল নিতে চাইতাম না। তবে বর্তমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যেখানে আমার সঙ্গীর কাছে গর্ভনিরোধক নেই, তখন আমি ঝুঁকি জেনেও আনন্দের সঙ্গে পিলটি গ্রহণ করব।’
গ্রেগ বলেন, তাঁর সহকর্মীরা হয়তো পিলটি নিতে চাইবেন না। কারণ, তাঁদের নারী সঙ্গীরা ইতিমধ্যেই পিল গ্রহণ করেন। এটি ভয়ানক যুক্তি হলেও এটাই দুঃখজনকভাবে বাস্তবতা। তিনি আরও বলেন, ‘নারী গর্ভনিরোধক পিল সম্পর্কে জানার অভাব থেকেই এ ধরনের ধারণা আসতে পারে। কারণ, এই পিল নারীর জীবনে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা খুব কম পুরুষই বুঝতে পারেন।’
গ্রেগের সঙ্গী ও প্রেমিকা ফোবি বলেন, ‘আমি মনে করি, পুরুষের জন্মনিরোধক পিল একমাত্র উপায় যার কারণে গর্ভাবস্থা, যৌনবাহিত রোগ ও নারীদের যৌনতার বিষয়ে সমাজে ইতিবাচক অগ্রগতি হতে পারে। আমার সন্তান হওয়ার পর যদি পুরুষের পিল পাওয়া না যায়, তাহলে আমি আমার টিউবগুলো বন্ধ করে রাখতে চাইব। নারীদের গর্ভনিরোধকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এত গুরুতর যে আমি মেনোপজ না হওয়া পর্যন্ত সেগুলো ধরে রাখতে পারব না।’
গত পাঁচ বছরে বেশির ভাগ গবেষণায় দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক পুরুষ জন্মনিরোধক পিল নিতে চান। ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের অনলাইনভিত্তিক মার্কেট রিসার্চ ও ডেটা অ্যানালিটিকস ফার্ম ইউগভ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩০ শতাংশ ব্রিটিশ পুরুষ এই পিল গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে প্রায় একই সংখ্যক নারী গর্ভনিরোধক পিল ব্যবহার করছেন। ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এ সংখ্যা আসলে ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এ হার যথেষ্ট ভালো নয়।
গর্ভধারণ রোধ করার জন্য হাজারো নতুন ও উদ্ভাবনী উপায় আছে। তবে এ শিল্প গর্ভধারণ রোধ করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন বা পুরুষ জন্মনিরোধক পদ্ধতির জন্য সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না।অ্যালাইস পেলটন, প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম দ্য লোডাউনের প্রতিষ্ঠাতা
যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম দ্য লোডাউনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালাইস পেলটন বিশ্বাস করেন, সবার জন্য জন্মনিরোধক উদ্ভাবন ও এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ খুবই প্রয়োজন। এ বিষয়ে তিনি ওষুধশিল্পের ওপর দোষ চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গর্ভধারণ রোধ করার জন্য হাজারো নতুন ও উদ্ভাবনী উপায় আছে। তবে এ শিল্প গর্ভধারণ রোধ করার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন বা পুরুষ জন্মনিরোধক পদ্ধতির জন্য সময় ও অর্থ বিনিয়োগ করতে চায় না।’
পেলটন বলেন, এর অনেক কারণ রয়েছে। জন্মনিরোধকগুলো ব্যয়বহুল ও এগুলোর বিকাশ করা কঠিন। আর ওষুধ কোম্পানিগুলো ভয় পায়, পুরুষের জন্মনিরোধক বাজারে এলে প্রচলিত নারী গর্ভনিরোধকের বাজার হারিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘এসব ছাড়াও পুরুষ জন্মনিরোধক পিলের সম্ভাবনা যৌন দায়িত্ব সম্পর্কে কিছু প্রশ্নও উত্থাপন করে। আমরা কি পুরুষদের জন্মনিরোধক অবস্থা প্রমাণের জন্য টিকার মতো “গর্ভনিরোধক পাসপোর্ট” বহন করতে চাই?’
জন্মনিরোধকের বিষয়গুলো একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় হলেও এগুলো নৈতিকতা, সমাজ ও শারীরিক স্বাধীনতা সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। যুক্তরাজ্যের ডুরহাম ইউনিভার্সিটির বায়ো ল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এলিজাবেথ ক্লোয়ি রোমানিস প্রজননের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জন্মনিরোধক কীভাবে সংশ্লিষ্ট, তা ব্যাখ্যা করেছেন। ক্রিস্টেল লিটলজোনের ‘জাস্ট গেট অন দ্য পিল: দ্য আনইভেন বারডেন অব রিপ্রোডাকটিভ পলিটিকস’ বই থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ‘শ্বেতাঙ্গ নারীদের জন্য পিলটি সব সময় স্বাধীনতার প্রতীক ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গ ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের নারীদের ক্ষেত্রে তা সত্য নয়। কারণ, সেখানে কে কোন পরিস্থিতিতে গর্ভধারণ করবে, তা রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
তবে সত্য এই, পুরুষের জন্মনিরোধক এখনো মানুষের শরীরে প্রয়োগ পর্যন্ত এগোয়নি। তা এখনো ইঁদুরের ওপরই গবেষণার পর্যায়ে আছে। তাই এসব প্রশ্ন এখনো ভাবনার স্তরেই থেকে যাচ্ছে। তবু সঠিক ভাবনা বাস্তবায়নপ্রক্রিয়াকে অর্ধেক পথ এগিয়ে নিয়ে যায়। এলিজাবেথ ক্লোয়ি রোমানিস বলেছেন, ‘বিশ শতকের বেশির ভাগ সময় একজন নারীর গর্ভধারণ রোধ করার চেয়েও কীভাবে শুক্রাণুকে শুরুতেই নিশ্চল করা যায়, তা নিয়ে ভাবনা ছিল। কল্পনা করুন, যদি ১০০ বছর আগে প্রজনন সম্পর্কে যেভাবে ভেবেছিলাম, তাতে যদি পিতৃতন্ত্রের প্রভাব কম থাকত, তাহলে হয়তো আমাদের আগে থেকেই পুরুষের জন্য জন্মনিরোধক পিল থাকত।’