ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুত কার্যত ঘিরে ফেলেছে রুশ বাহিনী ও তাদের সমর্থিত ভাড়াটে সেনারা। আজ শুক্রবার শহরে প্রবেশের শেষ পথটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চলমান রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ছয় মাসের মধ্যে বড় ধরনের কোনো জয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে মস্কো। অব্যাহত লড়াইয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বাখমুত। রাশিয়ার বেসরকারি বাহিনী ভাগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন বলেছেন, শহরটি প্রায় পুরোপুরি ঘিরে ফেলা হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য মাত্র একটি পথ খোলা আছে।
শহরের পশ্চিমে থাকা রয়টার্সের সাংবাদিকেরা দেখেছেন, ইউক্রেনীয়রা সেখানে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানের জন্য নতুন পরিখা খনন করছেন। ইউক্রেনের একটি ড্রোন ইউনিটের কমান্ডার কয়েক মাস ধরে বাখমুতে অবস্থান করছিলেন। তাঁকে শহর থেকে সরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
যুদ্ধ শুরুর আগে বাখমুত শহরের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। শহরটি জয় হবে রাশিয়ার শীতকালীন অভিযানে প্রথম বড় ধরনের কোনো অর্জন। এই অভিযানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় রুশ বাহিনী। শীতকালীন অভিযান শুরুর আগে গত বছর কয়েক লাখ রিজার্ভ সেনা তলব করেছিল মস্কো। বলা হচ্ছে, শহরটি জয় রুশ বাহিনীর আশপাশের দনবাস অঞ্চল দখলের পথ উন্মুক্ত করে দেবে, যা চলমান যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
ইউক্রেন ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বিশাল ভূখণ্ড পুনর্দখল করেছিল। কিন্তু গত তিন মাস ইউক্রেনীয় বাহিনী আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে রয়েছে। দেশটি বলছে, বাখমুত শহরের কৌশলগত গুরুত্ব তেমন নেই। তবে এই শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এই যুদ্ধের গতিপথ ঠিক করে দিতে পারে।
একটি ছাদে ধারণ করা ভিডিওতে যুদ্ধের পোশাকে দেখা যায় ভাগনার প্রধানকে। ভিডিওতে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে তাঁর সেনাদের প্রাণ বাঁচাতে বাখমুত থেকে পিছু হটার নির্দেশ দেওয়ার আহ্বান জানান। ইয়েভজেনি বলেন, বেসরকারি সামরিক কোম্পানি ভাগনার বিভিন্ন ইউনিট বাখমুতকে কার্যত ঘিরে ফেলেছে। কেবল একটি পথ খোলা রয়েছে।
ভিডিওতে তিন বন্দী ইউক্রেনীয়কেও দেখানো হয়। তাঁদের একজন বয়স্ক পুরুষ আর দুজন কিশোর। দেশে ফিরতে তাঁরা আকুতি জানান। বাখমুতের লড়াই ঘিরে দুই পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিয়েভ বলে আসছে, তাঁদের বাহিনী এখনো সেখানে অবস্থান ধরে রেখেছে। অবশ্য চলতি সপ্তাহে অবস্থার অবনতি হওয়ার বিষয়টিও স্বীকার করেছে।
ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ডের ডেপুটি কমান্ডার ভলোদিমির নাজারেঙ্কো দেশটির এনভি রেডিওকে বাখমুতের পরিস্থিতি ‘জটিল’ জানিয়ে বলেন, বিরতিহীন লড়াই চলছে। তিনি বলেন, ‘হামলা চালিয়ে শহর দখল করে নেওয়ার চেষ্টায় তারা (রুশ বাহিনী) নিজেদের ক্ষয়ক্ষতিকেও পাত্তা দিচ্ছে না। বাখমুতে আমাদের বাহিনীর কাজ হলো, যত বেশি সম্ভব শত্রুর ক্ষতিসাধন করা। প্রতি মিটার ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের জন্য শত্রুদের কয়েক শ প্রাণ দিতে হচ্ছে।’