যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ক্লাস্টার বোমা (গুচ্ছবোমা) ইউক্রেন পৌঁছে গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন ও ইউক্রেনের এক সেনা কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বেসামরিক প্রাণহানির ঝুঁকি থাকায় ১২০টির বেশি দেশে এই গুচ্ছবোমা নিষিদ্ধ।
বৃহস্পতিবার সকালে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওলেকসান্দর তারনভস্কি বলেন, ‘কেবলই আমরা এসব অস্ত্র হাতে পেলাম, এখনো সেগুলো ব্যবহার করিনি। তবে এই অস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রের চিত্র ব্যাপকভাবে বদলে দেবে।’
তারনভস্কি ‘তাভরিয়া’ জয়েন্ট ফোর্সেস অপারেশন কমান্ডার। ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল এলাকায় এই বাহিনী রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘শত্রুরাও জানে, এসব অস্ত্র হাতে আসায় আমরা যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধা পাব...। রুশরা মনে করছে, এই অস্ত্র আমরা সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রের সব এলাকাতেই ব্যবহার করব। এটা একেবারেই ভুল ধারণা। তবে তারা (রুশরা) খুবই আতঙ্কিত।’
যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া গুচ্ছবোমা ইউক্রেনে পৌঁছার বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বীকার করেছে পেন্টাগন। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে ইউক্রেনে গুচ্ছবোমা আছে।’
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনী আরও ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করেছে। দেশটির উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়ার গত বৃহস্পতিবার এ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, নোভোদানিলিভকা, মালা তোকমাচকা, নোভোপোক্রোভকাসহ ওরিকহিভ শহরের দক্ষিণে কয়েকটি গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে ইউক্রেনের বাহিনী।
হানা মালিয়ার দাবি করেন, ওরিকহিভ শহরের দক্ষিণে মেলিতোপোল ও বেরদিয়ানস্ক শহরের আশপাশে রুশ বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী
উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘শত্রুপক্ষ এখন নতুন করে সেনা ইউনিট মোতায়েন করছে এবং হাতে থাকা রিজার্ভ সেনাদের কাজে লাগাচ্ছে। আমাদের সেনারা নিয়মিত শত্রুদের অস্ত্রের মজুত ধ্বংস করে যাচ্ছেন। শত্রুদের হামলার তীব্রতাও কিছুটা কমে এসেছে।’
মেলিতোপোল শহরের ইউক্রেনীয় মেয়র ইভান ফেদেরভ দাবি করেছেন, রাশিয়ার দখলে থাকা দক্ষিণাঞ্চলীয় তোকমাক শহরের একটি ঘাঁটিতে সম্প্রতি ইউক্রেনীয় বাহিনীর হামলায় রুশ কমান্ডারসহ প্রায় ২০০ সেনা নিহত হয়েছেন।
বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে ফেদেরভ বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী তোকমাকে দখলদারদের অবস্থানে সফলভাবে অভিযান শেষ করেছে।’
মেলিতোপোল রাশিয়ার দখলে থাকায় মেয়র ফেদেরভ বর্তমানে রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনি দাবি করেন, সুরক্ষিত একটি কারখানায় গড়ে তোলা রুশ বাহিনীর এই ঘাঁটিতে হামলা চালানোর বিষয়টি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইরানের তৈরি ১৬টি শাহেদ ড্রোনসহ ২৩টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী। গতকাল দেশটির বিমানবাহিনী এ দাবি করেছে।
টেলিগ্রামে দেওয়া পোস্টে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বলেছে, ইরানের তৈরি ১৭টি শাহেদ ড্রোনের সাহায্যে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল দিয়ে হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। তবে এসব ড্রোনের ১৬টিই ভূপাতিত করা হয়েছে।
বিমানবাহিনী দাবি করেছে, গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী একটি নজরদারি ড্রোনের পাশাপাশি ছয়টি অপারেশনাল ও ট্যাকটিক্যাল ড্রোনও ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
ইউরোপে তিন হাজার রিজার্ভ সেনা পাঠাতে প্রতিরক্ষা দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার চলমান যুদ্ধের মধ্যেই এসব সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিলেন তিনি।
বর্তমানে ইউরোপে এক লাখের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করলে ইউরোপে সেনা বাড়াতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধে কোনো মার্কিন সেনার সরাসরি অংশগ্রহণ নেই। কারণ, কিয়েভ ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য নয়।