রাশিয়ার সীমানার ভেতরে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর এ নিয়ে কোনো ধরনের ইঙ্গিত দেননি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বৈঠক করেন জো বাইডেন ও কিয়ার স্টারমার।
দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলার বিষয়ে বাইডেনকে রাজি করানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে জানতে চাইলে স্টারমার বলেন, তাঁরা দুজন দীর্ঘ ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী ইউক্রেন, মধ্যপ্রাচ্য ও এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, রাশিয়াকে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
এর আগে রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ইউক্রেনকে কোনো ধরনের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
পুতিনের বলেছেন, এমন অনুমতি দেওয়া এটাই বোঝাবে যে ন্যাটোর দেশগুলো সরাসরি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।
হোয়াইট হাউসে স্টারমারের সঙ্গে বৈঠকের প্রাক্কালে বাইডেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে খুব বেশি ভাবছি না।’
রাশিয়ার ভূখণ্ডে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ইউক্রেনকে এ পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এমন অনুমতি দেয়নি দেশ দুটি।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা মিত্রদের কাছে বারবার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জন্য অনুমতি চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, এটি যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায়।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। এর পর থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর ও যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিদিনই বোমাবর্ষণ করছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা, বেসামরিক আবাসন, জ্বালানি অবকাঠামো, হাসপাতালে আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা রাশিয়ার সীমান্তের ভেতর থেকে ছোড়া বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, আত্মরক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করার ‘স্পষ্ট অধিকার’ ইউক্রেনের রয়েছে। এর অর্থ, সেসব অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া হবে না। গত মাসে ইউক্রেনের বাহিনী আকস্মিকভাবে রুশ সীমান্তের অনেকটা ভেতরে ঢুকে গিয়ে অভিযান পরিচালনার পর এমনটা বলেছিল লন্ডন।
তবে নিজেদের আন্তর্জাতিক সীমানার বাইরে পরিচালিত এসব অভিযানে দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা এখানে বলা হয়নি।
এ বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পশ্চিমা মিত্ররা কিয়েভকে এসব ক্ষেপণাস্ত্র রুশ সীমান্তের ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জো বাইডেনের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকটি ইউক্রেন–সম্পর্কিত কৌশলের বিষয়ে আলোচনা করার একটি সুযোগ ছিল। এটা কোনো ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ বা কৌশল’ নিয়ে আলোচনা নয়।
স্টারমার আরও বলেন, বৈঠকে তাঁরা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেছেন। বছরখানেক ধরে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বিশ্বের অন্যান্য এলাকা নিয়েও তাঁদের কথা হয়েছে।
সাংবাদিকদের যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এসব বিষয় নিয়ে তাঁরা আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবারও আলোচনা করার সুযোগ পাবেন।