ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মস্কো ও কিয়েভের প্রতি সংলাপের আহ্বান জানিয়েছিল কিয়েভ সফররত আফ্রিকার নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল। তবে গত শুক্রবার জানানো তাঁদের এই আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আজ শনিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে প্রতিনিধিদলটি সেন্ট পিটার্সবার্গ পৌঁছেছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ভোগান্তিতে পড়ে আফ্রিকা মহাদেশ। সেই উদ্বেগের কথা, বিশেষ করে যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তুলে ধরতে শুক্রবার কিয়েভে যায় আফ্রিকার প্রতিনিধিদলটি। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা আলোচনার মাধ্যমে শান্তি অর্জনের ওপর জোর দেন।
তবে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি বৈঠকে আমি বলেছি, যেকোনো আলোচনার জন্য আমাদের ভূমিতে দখলদারদের যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, দুঃখ-দুর্দশার অবসান হতে হবে।’
প্রতিনিধিদলটি কিয়েভে পৌঁছানোর পরপরই ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার সতর্কতা সাইরেন বাজানো হয়। এতে রাজধানীতে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে বাধ্য হয় প্রতিনিধিদলটি।
জেলেনস্কি প্রতিনিধিদলের সফরের সময় কিয়েভে হামলার বিষয়ে বলেন, হয় নিজের সেনাবাহিনীর ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণ নেই অথবা তিনি ‘যৌক্তিক আচরণ করার মতো লোক নন’।
অবশ্য উভয় পক্ষেরই যুদ্ধ বন্ধের প্রয়োজন রয়েছে বলে নানা যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন রামাফোসা। শান্তির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে নেলসন ম্যান্ডেলাকে একাধিকবার উদ্ধৃত করেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে, যেসব ঘটনা আজ আমরা প্রত্যক্ষ করছি...তা উত্তেজনা নিরসনে আমাদের আহ্বান জানাতে বাধ্য করছে।’
এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘রাশিয়ার অপরাধ সংঘটন’ কীভাবে বন্ধ করা হবে আর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে নেতাদের নিজেদের অভিমত জানানোর আহ্বান জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সবার আগে আমাদের অবশ্যই জাতিসংঘের সনদ সমুন্নত রাখতে হবে এবং রাশিয়ার এই নৃশংস আগ্রাসন বন্ধ ও আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে।’
প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল, জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হাকেইন্দে হিচিলেমা ও কমোরোসের প্রেসিডেন্ট আজালি আসোমানি। আজালি বর্তমানে আফ্রিকান ইউনিয়নেরও নেতৃত্বে রয়েছেন। উগান্ডা, মিসর ও কঙ্গো-ব্রাজাভিলের নেতারা শেষ মুহূর্তে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। পরিবর্তে তাঁরা প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে, মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শান্তিপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে আফ্রিকার নেতাদের উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেশটির প্রেসিডেন্ট রামাফোসা গতকাল রাশিয়া পৌঁছেছেন।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর বলেছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার পর রামাফোসা রাশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানীতে (সেন্ট পিটার্সবার্গ) পৌঁছান।
রামাফোসার দপ্তর আরও বলেছে, ১৬ মাস ধরে চলা সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের উপায় খুঁজে বের করতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে প্রতিনিধিদলটি। এই সংঘাত অর্থনীতিতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি প্রাণহানি ও বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতারও কারণ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ খারকিভ অঞ্চলের পূর্ব দিকের ছোট একটি গ্রামে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানলে চারজন নিহত হন। আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনেহুবভ এ কথা জানিয়েছেন।
বার্তা আদান-প্রদানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম অ্যাপে সিনেহুবভ বলেন, হুরিইভ কোজাচোক গ্রামে গোলাবর্ষণ করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। সীমান্তবর্তী গ্রামটির দিকে আসার সময় একটি গাড়িতে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এতে ঘটনাস্থলেই চার বেসামরিক নাগরিক নিহত হন।
রাশিয়া গতকাল বলেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ব্রিয়ানস্কের একটি তেল শোধনাগার লক্ষ্য করে চালানো হামলার সময় তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে দেশটি। এমন সময় রাশিয়া হামলা প্রতিহতের এ দাবি করল, যখন ইউক্রেন রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের গভর্নর আলেক্সান্দার বোগোমাজ বলেন, নোভাজিবকভ জেলার দ্রুঝবা তেল শোধনাগার লক্ষ্য করে রাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর চালানো হামলা প্রতিহত করেছে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা।