ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমা মিত্রদের কাছে আধুনিক ও ভারী অস্ত্রসহায়তা চেয়ে আসছিলেন। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে প্রতিহত করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। প্রথমবারের মতো জেলেনস্কির এমন আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইউক্রেনকে অস্ত্রসহায়তা হিসেবে অত্যাধুনিক ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ।
আজ শনিবার যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট জানায়, ইউক্রেনকে চ্যালেঞ্জার–২ অত্যাধুনিক ট্যাংক দিতে সম্মত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বিবিসির খবর, যুক্তরাজ্যের এ ঘোষণার পর টুইট করে ঋষি সুনাককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি লিখেছেন, ‘এটা যুদ্ধে আমাদের অবস্থান জোরালো করবে। পাশাপাশি সহায়তার বিষয়ে অন্য মিত্রদেরও সঠিক বার্তা দেবে।’
ইউক্রেনকে চ্যালেঞ্জার–২ অত্যাধুনিক ট্যাংক দেবে যুক্তরাজ্য। এ ছাড়া ফ্রান্স, পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড ট্যাংক পাঠাবে।
এদিকে শিগগির ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য ট্যাংক পাঠাবে ফ্রান্স ও পোল্যান্ড। ফিনল্যান্ড কিয়েভের হাতে ট্যাংক তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। গত বুধবার ইউক্রেনের লাভিভ শহরে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা। এ সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, পশ্চিমা মিত্রদের সহায়তার এসব ট্যাংক দ্রুতই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হাতে আসবে। এসব যুদ্ধাস্ত্র রাশিয়ার হামলা প্রতিরোধ করতে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর শক্তি আরও জোরদার করবে।
ইউরোপের কয়েকটি দেশের এমন পদক্ষেপ জার্মানির ওপর চাপের সৃষ্টি করতে পারে। গত সপ্তাহে জার্মানি জানায়, দেশটি ইউক্রেনকে সামরিক যান সহায়তা হিসেবে দেবে। তবে ট্যাংক সরবরাহের ঘোষণা দেয়নি বার্লিন। এ বিষয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছিলেন, ইউক্রেনকে ট্যাংক দেওয়ার পরিকল্পনা করার আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
তবে পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিজেরাই ইউক্রেনে ট্যাংক পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এটা অন্য দেশের ওপর চাপের সৃষ্টি করবে না। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা করেছে। ইউক্রেনকে সহায়তা হিসেবে কোন দেশ সামরিক সরঞ্জাম আর কোন দেশ অর্থ দিতে পারে, সেসব বিষয়ে আলোচনা ও যাচাই–বাছাই করা হয়েছে।
একজন পশ্চিমা জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকের মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধ নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যুদ্ধ শুরুর বর্ষপূর্তির আগে রাশিয়া হামলা জোরদার করেছে। এ জন্য আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও কয়েকটি দেশ কিয়েভকে সামরিক সহায়তা এখনকার তুলনায় বাড়াতে পারে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মতে, জার্মানি কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের মতো ইউরোপের ১৩টি দেশের কাছে জার্মানির তৈরি লিওপার্ড–২ ট্যাংক রয়েছে। ১৯৭৯ সালে এ ট্যাংক তৈরি করা হলেও পরে কয়েক দফায় আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এখন এসব দেশ যদি কিয়েভের হাতে জার্মান এ ট্যাংক তুলে দিতে চায়, তাহলে বার্লিনের অনুমোদন লাগবে।
এ বিষয়ে জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হাবেক গত বৃহস্পতিবার বার্লিনে বলেছেন, যদি কোনো দেশ তাদের তৈরি ট্যাংক কিয়েভকে দিতে চায়, সে ক্ষেত্রে জার্মান সরকারের বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিত হবে না। অন্যদিকে, জার্মান সরকারের মুখপাত্র ক্রিস্টিনা হফম্যান গত শুক্রবার জানান, পোল্যান্ড বা ফিনল্যান্ড তাঁর দেশকে এখনো কোনো অনুরোধ করেনি।
গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ সামরিক কামান্ডার জেনারেল ভ্যালেরি জালুজনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, যুদ্ধে রাশিয়াকে টেক্কা দিতে হলে তাঁর দেশের প্রায় ৩০০টি আধুনিক ট্যাংক প্রয়োজন।
এদিকে ইউক্রেনের সোলেদর শহর দখল করে নেওয়া হয়েছে বলে রাশিয়ার দাবি নাকচ করে দিয়েছেন জেলেনস্কি। শুক্রবার গভীর রাতে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, সোলেদর ও পূর্বাঞ্চলের শহরগুলোয় তুমুল লড়াই চলছে। শহরটির দখল নিয়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ‘কুখ্যাত’ রুশ ভাড়াটে সেনাদল ‘দ্য ওয়াগনার গ্রুপ’-এর দ্বন্দ্ব নিয়েও বিদ্রূপ করেন জেলেনস্কি।