গোয়েন্দা বেলুন ওড়ানো এবং তা ভূপাতিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনে বেলুন পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। ইউক্রেন বলছে, রাজধানী কিয়েভের আকাশে উড়তে থাকা অন্তত ছয়টি বেলুন শনাক্ত করা হয়েছে। পরে এর বেশির ভাগ ভূপাতিত করা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে কিয়েভের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, বেলুনগুলো সম্ভবত রাশিয়া থেকে ওড়ানো হয়েছিল। বেলুনের সঙ্গে এমন কিছু সরঞ্জাম ছিল, যা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা চিহ্নিত এবং দুর্বল করতে সক্ষম।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বেশির ভাগ বেলুন ভূপাতিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বের সঙ্গে ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করেছে।
আকাশে বেলুন শনাক্তের পর গতকাল বুধবার কিয়েভজুড়ে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। সাধারণত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের ঝুঁকি দেখা গেলে সাইরেন বাজানো হয়।
এর আগে গতকাল সকালে ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইগনাট অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর দেশের বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা দুর্বল করতে গোয়েন্দা বেলুন উড়িয়েছে মস্কো।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকে কিয়েভের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, তাদের দেশের আকাশে বিভিন্ন সময় রুশ বেলুনের উপস্থিতি দেখা গেছে। মূলত, যুদ্ধের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে এসব বেলুন পাঠিয়েছে মস্কো।
এমনকি গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী দেশ মলদোভার আকাশেও এমন বেলুন উড়তে দেখা গেছে। এর জেরে দেশটি তাদের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটা আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহের জন্য রাশিয়া থেকে ওড়ানো হয়েছিল।
এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি এফ-২২ যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে উড়তে থাকা চীনা গোয়েন্দা বেলুন ধ্বংস করা হয়। বেলুনটির ধ্বংসাবশেষ আটলান্টিক মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র জানায়, বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক স্থাপনার ওপর দিয়ে উড়ে নজরদারি করছিল। এতে একাধিক অ্যানটেনা ছিল। ছিল সৌরপ্যানেল। এই প্যানেল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে সক্ষম একাধিক সেন্সর চালানোর ক্ষমতা রাখে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, চীনা বেলুনটি ৪০টির বেশি দেশের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছে। প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও লাতিন আমেরিকার আকাশেও চীনা গোয়েন্দা বেলুন শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার আকাশে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে বেলুনসদৃশ রহস্যময় একাধিক বস্তু।
বেলুনকাণ্ডের জেরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, চীনের এমন কাজ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী কাজ।
তবে চীন বলেছে, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণের জন্য বেলুন আকাশে ওড়ানো হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট পথে না গিয়ে বেলুনটি ভুল করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বেলুনটি চলে যাওয়ার ঘটনার জন্য বেইজিং অনুতপ্ত।