চেরনোবিলের মতো কোনো ঘটনা সৃষ্টি হবে না : রাশিয়া

জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে পাহারায় এক রুশ সেনা
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের উদ্বেগের মুখে রাশিয়া বলেছে, সেখানে চেরনোবিলের মতো কোনো ঘটনা সৃষ্টি হবে না। খবর আল–জাজিরার

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের লড়াইয়ের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, জাপোরিঝিয়ার সম্ভাব্য যেকোনো ধরনের ক্ষতিসাধন হবে আত্মঘাতী। জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ইউক্রেন সফরে এসে তিনি বলেন, জাপোরিঝিয়া কেন্দ্র ঘিরে ‘আরেকটি চেরনোবিল’ বিপর্যয়ের বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

এমন উদ্বেগের পর রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রায়াবকভ বলেন, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি চেরনোবিলের মতো কোনো ঘটনা সৃষ্টি করবে না, এ নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

১৯৮৬ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত বর্তমান ইউক্রেনে অবস্থিত চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছিল। পারমাণবিক এ দুর্ঘটনাকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইভান নিকায়েভ বলেন, জাপোরিঝিয়া এলাকা নিরস্ত্রীকরণ করতে জাতিসংঘের প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। আন্তোনিও গুতেরেসের প্রস্তাব মানলে এ অঞ্চল আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরপরই ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্র গত মার্চ মাসে রুশ সেনাদের হাতে চলে যায়। ওই এলাকায় রুশ ও ইউক্রেনের সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকায় পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিরাপত্তা এবং পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে আশঙ্কা বেড়েছে। সম্প্রতি হামলায় কেন্দ্রটির অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ হামলার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন একে অপরকে দায়ী করছে।

ইউক্রেনের অভিযোগ, রুশ সেনারা পারমাণবিক স্থাপনাটি নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছেন। সেখানে ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছেন। তবে মস্কোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

পারমাণবিক কেন্দ্রটির নিরাপত্তা ও যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিভিভে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরদোয়ান ও গুতেরেস। বৈঠক শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা আরেকটি চেরনোবিল চাই না। আমরা এর একটা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আমাদের ইউক্রেনীয় বন্ধুদের পাশে আছি।’

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ইউক্রেনের ওই পারমাণবিক স্থাপনা ঘিরে বর্তমান যে পরিস্থিতি, সেটা নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। স্থাপনাটি বেসামরিকীকরণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এভাবে বলতে হবে, জাপোরিঝিয়ার কোনো ক্ষতিই হবে আত্মঘাতী।’

এদিকে রুশ বাহিনী জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ইউক্রেনের গ্রিড থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব এ উদ্যোগ না নিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের জ্বালানি অপারেটর এনারগোতম বলেছে, মস্কো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা করছে।

লিভিভে বৈঠকের পর জাতিসংঘ মহাসচিব ওদেসা বন্দরে গেছেন। সেখানে তিনি বলেন, জাপোরিঝিয়ার বিদ্যুৎ ইউক্রেনের। এ নীতির প্রতি সম্মান দেখানো উচিত। তিনি কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার চুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, শস্য সমস্যা এখনো শেষ হয়নি।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য প্রায় ৮০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত সামরিক সহায়তার প্রস্তুতি নিচ্ছে।