বিদ্রোহ থেকে সরে আসার পর প্রথমবারের মতো অডিও বার্তায় প্রিগোশিন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার নেতৃত্বকে উৎখাতে মস্কো যাত্রা করিনি।’
সশস্ত্র বিদ্রোহের পর ভাগনার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানির (পিএমসি) প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করতে নয়, বরং প্রতিবাদ জানাতে মস্কো অভিমুখে যাত্রা করেছে তাঁর বাহিনী। গতকাল সোমবার ১১ মিনিটের এক অডিও বার্তায় ভাগনারপ্রধান এ দাবি করেছেন।
বিদ্রোহ থেকে সরে আসার পর প্রথমবারের মতো দেওয়া এই অডিও বার্তায় প্রিগোশিন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার নেতৃত্বকে উৎখাত করার জন্য যাত্রা করিনি।’ ভাগনারপ্রধান আরও বলেন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি সই এবং ১ জুলাই থেকে তাঁর ভাড়াটে বাহিনী বিলুপ্ত করা নিয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি।
এ ছাড়া রাশিয়ার বিমানবাহিনীকে আঘাত করতে বাধ্য হয়েছেন উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রিগোশিন। তিনি বলেন, রুশ সেনাদের রক্তপাত এড়াতে তারা (ভাগনার বাহিনী) মস্কো অভিমুখী যাত্রা থেকে সরে আসে।
প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল দপ্তরের একটি সূত্র রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রটি বলেছে, ‘প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। তদন্ত চলমান রয়েছে।’ রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) মামলাটি তদন্ত করছে বলে কোমেরসান্ত পত্রিকা জানিয়েছে।
এর আগে গত শনিবার প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তর জানিয়েছিল, সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত করার অভিযোগে রাশিয়ার দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় গত শুক্রবার প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা করে এফএসবি। ভাড়াটে যোদ্ধাদের এই বাহিনীর একটি শিবির আক্রান্ত হয়েছে অভিযোগ করে প্রিগোশিন মস্কো অভিমুখে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান নিয়ে যাত্রা শুরুর ঘোষণা দিলে মামলাটি করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১২ থেকে ২০ বছরের সাজা হতে পারে।
আমি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছি। ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা হয়েছে।ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট
যদিও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় শনিবার মস্কো অভিমুখের অভিযাত্রা বন্ধ করেন প্রিগোশিন। বিনিময়ে তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার এবং ভাগনার যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সমঝোতা অনুযায়ী ভাগনারপ্রধানের বেলারুশে যাওয়ার কথা। তবে গতকাল পর্যন্ত তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। শনিবার রোস্তভ-অন-দন শহরের সামরিক স্থাপনা ছেড়ে যাওয়ার সময় সর্বশেষ প্রিগোশিনকে একটি গাড়িতে দেখা গিয়েছিল। এর পর থেকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যাচ্ছে না।
আল-জাজিরার সাংবাদিক ইয়ুলিয়া শাপোভালোভা মস্কো থেকে জানান, ‘এই মুহূর্তে প্রিগোশিনের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানা যাচ্ছে না।’
এএফপির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাগনারের বিদ্রোহ দমনের পর গতকাল প্রথমবারের মতো ক্রেমলিন থেকে ভিডিও ভাষণে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
‘ভবিষ্যতের নির্মাতা’ নামের একটি যুব ফোরামের অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে পুতিন ‘মারাত্মক বাহ্যিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও’ দেশের শিল্প খাতের কর্মকাণ্ড স্থিতিশীল রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করায় কোম্পানিগুলোর প্রশংসা করেন।
এদিকে রাশিয়ায় ভাগনারের বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ফোনে কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গত রোববার জেলেনস্কি ও বাইডেনের মধ্যে এই ফোনালাপ হয়। এই ফোনালাপ নিয়ে পরে টুইট করেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলেছি। ইতিবাচক ও অনুপ্রেরণামূলক আলোচনা হয়েছে।’
ভাগনার বিদ্রোহের মধ্যেই রাশিয়ার দখলে থাকা আরেকটি গ্রামের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে ইউক্রেন। গতকাল বার্তা আদান-প্রদানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হানা মালিয়ার বলেন, ‘রিভনোপিল গ্রামের নিয়ন্ত্রণে আমাদের মধ্যে ফিরিয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনী। চলো, এগিয়ে যাই।’