মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করার কোনো ইচ্ছা মস্কোর নেই বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর দেশও মহাকাশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শুধু নিজের সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।
প্রেসিডেন্ট পুতিন গতকাল মঙ্গলবার এ বিবৃতি দেন। এর আগে গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউস দাবি করেছিল, রাশিয়া স্যাটেলাইট-বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির এক ‘যন্ত্রণাদায়ক’ সক্ষমতা অর্জন করেছে। যদিও এমন ধরনের অস্ত্র এখনো প্রয়োগ হয়নি।
রাশিয়াসহ ১৩০টির বেশি দেশ এক চুক্তি সই করেছে, যেখানে কক্ষপথে ‘পারমাণবিক বা যেকোনো ধরনের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের’ মোতায়েন কিংবা মহাকাশের বাইরে অন্য কোনো উপায়ে অস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার ওই তৎপরতা মহাকাশসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ‘আউটার স্পেশ ট্রিটি’ লঙ্ঘন করবে। তবে এ অস্ত্র পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রাশিয়াসহ ১৩০টির বেশি দেশ এ চুক্তি সই করেছে। চুক্তিতে কক্ষপথে ‘পারমাণবিক বা যেকোনো ধরনের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের’মোতায়েন কিংবা মহাকাশের বাইরে অন্য কোনো উপায়ে অস্ত্র মোতায়েন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, এ বিষয়ে তারা তাদের উদ্বেগে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষকে সরাসরি যুক্ত করতে চায়।
পুতিন বলেছেন, ‘আমাদের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। আমরা সব সময় ও স্পষ্টভাবে মহাকাশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েনের বিরোধিতা করে আসছি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বিদ্যমান সব চুক্তি মেনে চলতে আমরা সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযোগকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ‘পশ্চিমাদের হইচই করার’ অংশ বলে আখ্যায়িত করেন।
পুতিন বলেন, ‘মহাকাশে যৌথ সহযোগিতা জোরদার করার ব্যাপারে রাশিয়া অনেকবার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমাদের কিছু কারণে বিষয়টি আর সামনে আসেনি।’
রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিন উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়াও তার মহাকাশ সক্ষমতার শুধু উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) এটা জানেও।’
এ বিষয়ে সের্গেই শোইগু বলেন, ‘মহাকাশে আমরা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র বা এর কোনো উপকরণ মোতায়েন করিনি, যা স্যাটেলাইট ধ্বংস বা স্যাটেলাইট ঠিকভাবে কাজ না করার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।’
শোইগু অভিযোগ করেন, রাশিয়ার নতুন মহাকাশ সক্ষমতা নিয়ে হোয়াইট হাউস এ কারণেই অভিযোগ তুলে থাকতে পারে, যেন ইউক্রেনকে মার্কিন সহায়তায় সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। সেই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলা উত্তেজনার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আলোচনা থেকে রাশিয়া যে সরে এসেছে, মস্কোকে তাতে আবার ফিরিয়ে আনা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনার সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি পুতিন। তবে তিনি তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দিয়েছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার পরাজয়ে ওয়াশিংটনের যে চাপ, তা এ মুহূর্তে ওই সম্ভাবনা অসম্ভব করে তুলেছে।