যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পদত্যাগ করেছেন লিজ ট্রাস। ক্ষমতায় থাকার সময়টা অল্প। তবে তা ছিল ঘটনাবহুল। ডাউনিং স্ট্রিটে লিজ ট্রাসের কাটানো ছয় সপ্তাহে ঘটা ছয়টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ থেকে শুরু করে বাজেট নিয়ে আলোচনার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস। তবে তিনিই সেই ব্যক্তি, যাঁকে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি রাজশাসকের সঙ্গে ছবিতে সর্বশেষ ছবিতে দেখা গেছে। মৃত্যুর দুই দিন আগে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সরকার গঠনের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে লিজ ট্রাসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বালমোরাল ক্যাসেলে তাঁদের দুজনের করমর্দনের ছবি প্রকাশ হয়েছিল। এটিই মৃত্যুর আগে রানি এলিজাবেথের জনসমক্ষে প্রকাশিত সর্বশেষ ছবি।
করের হার কমানোর পরিকল্পনা করছেন বলে প্রচার চালিয়েছিলেন ট্রাস। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সপ্তাহ দু-একের মাথায় তাঁর সরকারের অর্থমন্ত্রী কোয়াজি কোয়ার্টাঙ সাড়ে চার হাজার পাউন্ড কর কর্তনের কর্মসূচি শুরু করেন। তবে এ বিপুল কর হ্রাসের পর সরকারের প্রতিশ্রুত খরচের জোগান আসবে কোথা থেকে, তা কোয়ার্টাঙ ব্যাখ্যা করেননি। ছোট আকারের বাজেটটি ঘোষণা করা হয়েছিল গত শুক্রবার। আর এরপর সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সোমবার সকালে বাজার খোলার পর দেখা গেল, ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে।
এরপর অর্থমন্ত্রী কিছু পরিকল্পনা পাল্টে ফেলেছিলেন। তবে তা ট্রাসের নিজ দলের রাজনীতিবিদদেরই শান্ত করতে পারেনি।
বাজারে অস্থিরতার মুখে কোয়াজি কোয়ার্টাঙকে বরখাস্ত করা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই এক সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাস। সেখানে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নির্ভরযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কীভাবে টিকে থাকবেন?’
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস মাত্র চারটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি উত্তর দিতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছিলেন। তবে বারবারই বলেছেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত করতে তিনি কাজ করছেন।
আট মিনিটের ওই সংবাদ সম্মেলনে ট্রাসের উত্তরগুলো তাঁর দলের এমপিদের মন গলাতে পারেনি।
ব্রিটিশ রাজা বা রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাপ্তাহিক সাক্ষাতের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের ঘটনা খুব বিরল। তবে বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে ট্রাসের বৈঠকের ছবি প্রকাশ হলেও তা জনগণের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি সামান্যই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিল।
ভাবমূর্তি উদ্ধারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাসের সঙ্গে রাজার কথোপকথনের ছোট একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। তবে সেখানে একটি কণ্ঠস্বর জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজাকে বিড়বিড় করে বলতে শোনা গেছে, ‘ডিয়ার ওহ ডিয়ার’। তবে গুঞ্জন শোনা গেছে যে এটি রাজার ভারবাল টিক।
তবে বৈঠকে তাঁরা কী বিষয়ে কথা বলেছেন, তা নিয়ে গুঞ্জন ওঠে। অনেকে বলেন, ট্রাসের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলেছেন রাজা । তবে বিবিসিকে এক সূত্র বলেছে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রাসকে দুবার প্রাসাদে যেতে হওয়ায় রাজা সমবেদনা প্রকাশ করছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যান পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট থেকে দাপ্তরিক নথি পাঠানোর মধ্য দিয়ে তিনি ‘প্রযুক্তিগত বিধি লঙ্ঘন’ করেছেন এবং এর দায় নিচ্ছেন। এতে ট্রাস চাপে পড়েন। অনেকে সমালোচনা করে বলেন, তাঁর নেতৃত্ব নামে মাত্র আছে।
একজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার মজাচ্ছলে বলেছিলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রাসের স্থায়িত্ব মোটামুটি একটি লেটুসের জীবনকালের সমান। ব্রিটিশ পত্রিকা ডেইলি স্টার আরেক ধাপ এগিয়ে একেবারে লাইভ ওয়েব ক্যামে এ তত্ত্বের সত্যতা যাচাই করতে শুরু করে দেয়। লিজ ট্রাসের ফ্রেমবন্দী একটি ছবির পাশে লেটুস রেখে দেওয়া হয়। একদিকে লেটুসের তাজা ভাব কমতে থাকে, অন্যদিকে লিজ ট্রাসও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের মধ্যে পড়েন।
বৃহস্পতিবার লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পদত্যাগ ঘোষণার পর প্রায় ২০ হাজার মানুষ লেটুসকে ট্রাসের চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে অভিনন্দন জানিয়েছে।
দিনের শেষে পত্রিকাটির প্রথম পাতার শিরোনাম হয় লেটুস পাতা আনন্দিত।