পুতিনের ‘পাচক’ থেকে যুদ্ধের কমান্ডার, কে এই প্রিগোশিন

ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের মৃত্যু নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। রাশিয়ার উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষ রোসাভিয়াৎসিয়া বলেছে, উড়োজাহাজটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে যাচ্ছিল। উড়োজাহাজের ১০ আরোহীর মধ্যে প্রিগোশিন ছিলেন। প্রিগোশিনের ভাগনার বাহিনীর টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন বলেছে, উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। আর রুশ সংবাদমাধ্যম সারগ্রাদ টিভি নিজস্ব সূত্রের বরাতে বলছে, প্রিগোশিনের মৃতদেহ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে, তবে ডিএনএ বিশ্লেষণের কাজ এখনো বাকি।

ভাগনার প্রধান প্রিগোশিন আসলে কে। কীভাবে তিনি পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন আর কীভাবেই বা নিজের এমন প্রভাববলয় এবং পাশবিকতা চালানোর কুখ্যাতি অর্জন করলেন? এসব নিয়ে গত মার্চ মাসের শেষের দিকে বিবিসির প্রতিবেদন ধরে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পাঠকদের জন্য প্রতিবেদনটি আবার সামনে আনা হলো।

পুতিন তখন রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। প্রিগোশিনের প্রতিষ্ঠান তখন সরকারি স্কুলগুলোয় খাবার সরবরাহ করে। সেই খাবার তৈরির একটি কারখানা তিনি পুতিনকে ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন। সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি ইয়েভজেনি প্রিগোশিন। ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ সেনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে যে ভাড়াটে সেনাদল, সেই ভাগনার গ্রুপের প্রধান তিনি। কিছু কিছু অঞ্চলে এই ভাগনার গ্রুপ ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

রাশিয়ার কারাগারগুলোতে প্রিগোশিন খুব পরিচিত এক মুখ। মূলত, বিভিন্ন কারাগারে থাকা দণ্ডিত হাজার হাজার আসামিকে নিজের বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের অপরাধ কত গুরুতর, তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আসামিরা ইউক্রেনে লড়াই করতে রাজি থাকেন।

গত বছর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে ‘সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে ইউরোপে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত হয়। এই যুদ্ধ শুরুর আগে প্রিগোশিনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব আরও বাড়াতে তৎপরতা চালানোর অভিযোগও ছিল।

সাধারণের মধ্যে কম পরিচিত একজন ব্যক্তি কীভাবে নিজের এমন প্রভাববলয় এবং পাশবিকতা চালানোর কুখ্যাতি অর্জন করলেন?

উত্থান

প্রিগোশিনের জন্ম রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। এই সেন্ট পিটার্সবার্গেই জন্ম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ১৯৭৯ সালে প্রিগোশিন প্রথম যখন অপরাধী সাব্যস্ত হন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। চুরির দায়ে আড়াই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে যদি আবার একই অপরাধ করেন তাহলে কারাভোগ করতে হবে। এর দুই বছর পরই চুরি ও ডাকাতির দায়ে তাঁকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯ বছর প্রিগোশিনকে কারাভোগ করতে হয়েছিল।

ভাগনার গ্রুপের প্রধান প্রিগোশিন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র হিসেবে পরিচিত

কারাভোগ শেষে ব্যবসা শুরু করেন প্রিগোশিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে কয়েকটি দোকান দিয়ে হট ডগ বিক্রি শুরু করেন তিনি। ব্যবসা বেশ ভালো চলতে শুরু করে। এর কয়েক বছর পর নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে শুরু হয় অরাজকতা। এই সময়ে কৌশলে শহরে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি।

এই সময় থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের বিত্তবান, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় প্রিগোশিনের। পরে সেটা শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাশিয়ায় প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে। পিটার্সবার্গে প্রিগোশিনের রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে একটির নাম ছিল নিউ আইল্যান্ড। ভাসমান এ রেস্তোরাঁটি নেভা নদীতে ভেসে বেড়াত। পুতিনের বেশ পছন্দের রেস্তোরাঁ ছিল এটি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিন তাঁর বিদেশি অতিথিদের এই ভাসমান রেস্তোরাঁয় আনতেন।

এভাবে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন প্রিগোশিন। এক সাক্ষাৎকারে প্রিগ্রোশিন বলেছিলেন, ‘অতিথিদের নিজের হাতে খাবার প্লেট দিতে আমার কোনো সমস্যা যে নেই, তা দেখেছিলেন পুতিন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী মোরিকে নিয়ে যখন তিনি আমার রেস্তোরাঁয় আসেন সেবার তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল।’

২০০০ সালের এপ্রিল মাসে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করেছিলেন। তার কিছুদিন আগে ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার শাসনভার নিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্‌যাপনেও প্রিগোশিন ছিলেন পুতিনের প্রিয়পাত্র। ২০০৩ সালে এই নিউ আইল্যান্ডে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলেন পুতিন।

এরও কয়েক বছর পরের কথা। প্রিগ্রোশিনের মালিকানাধীন একটি ক্যাটারিং কোম্পানি কনকর্ড ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব পায়। ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের মধ্য দিয়ে ‘পুতিনের পাচক’ পরিচিত পান প্রিগোশিন। এরপর সামরিক বাহিনী ও সরকারি স্কুলেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পায় প্রিগোশিনের কনকর্ড।

ভাগনার গ্রুপের প্রধান কার্যালয় রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে। এই শহরেই জন্ম পুতিন ও প্রিগোশিনের

ভাগনার

২০১৪ সালের কথা। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালায় রাশিয়া। দখল করে নেয় ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। এই সময় থেকেই এমন ইঙ্গিত আসতে শুরু করে প্রিগোশিন কোনো সাধারণ ব্যবসায়ী নন। প্রথম জানা যায়, একটি ছদ্মবেশী বেসরকারি সামরিক প্রতিষ্ঠান তাঁর সঙ্গে যুক্ত এবং ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে এর সেনারা লড়ছে।

প্রিগোশিনের সেই ভাড়াটে সেনাদলের নাম ভাগনার। প্রথম দিকে ভাড়াটে এই সেনাদলের যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন সংক্ষিপ্ত এই নাম দেন। তিনি নাৎসি জার্মানির সমর্থক বলে শোনা যায়।

মজার বিষয় হলো, গত বছর পুতিন যখন ইউক্রেনে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ঘোষণা দেন তখন এর লক্ষ্য হিসেবে ইউক্রেনকে ‘নাৎসিমুক্ত’ করার কথা বলা হয়।

তবে শুধু ইউক্রেন নয়, বিশ্বজুড়ে নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে ক্রেমলিন ভাগনার গ্রুপকে ব্যবহার করছে। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয় ভাগনার। ক্রেমলেনির ‘অ্যাজেন্ডা’ বাস্তবায়নই এই গোষ্ঠীর লক্ষ্য। সিরিয়ায় বাশার আল–আসাদ সরকারকে সহযোগিতা থেকে শুরু করে মালিতে ফ্রান্সের প্রভাব ঠেকানো পর্যন্ত যা বিস্তৃত।  

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাড়াটে এই সশস্ত্র সেনাদল (মার্সেনারি গ্রুপ) ক্রেমলিনের নির্দেশে নিষ্ঠুর ও পাশবিক অভিযান চালানোর জন্য বিশ্বজুড়ে কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। ২০১৭ সালে সিরিয়ায় এক বন্দীকে হাতুড়ি দিয়ে নির্যাতন চালানোর পর তাঁর শিরশ্ছেদ করে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে এই ভাগনার গ্রুপের বিরুদ্ধে। পরের বছর মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ভাগনারের উপস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান চালানোর সময় তিনজন রুশ সাংবাদিককে হত্যা করেছিলেন ভাগনারের ভাড়াটে সেনারা।

২০১১ সালে এক নৈশভোজে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে খাবার পরিবেশন করছেন ইয়েভজিনি প্রিগোশিন

তবে বছরের পর বছর ভাগনারের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলেন প্রিগোশিন। এমনকি যাঁরা বলতেন যে প্রিগোশিন ভাগনারের নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতেন। কিন্তু ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রিগোশিন স্বীকার করেন, ২০১৪ সালে তিনিই ভাড়াটে এই সেনাদল প্রতিষ্ঠা করেছেন।

ভাগনারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউর। তবে রাশিয়ার আইন অনুযায়ী অবৈধ হলেও দেশটিতে কার্যক্রম চালাতে বাধা দেওয়া হয় না।

অদৃশ্য ‘যুদ্ধ’

একদিকে যেমন ভাড়াটে সেনাদের হাতে বন্দুক তুলে দিয়ে ক্রেমলিনের স্বার্থরক্ষার লড়াই করছেন, তেমনি অন্যদিকে ‘অদৃশ্য’ এক লড়াই চালাচ্ছেন প্রিগোশিন। এই যুদ্ধের ‘সেনাদের’ হাতে বন্দুক নেই, আছে কি–বোর্ড আর কম্পিউটার। অনলাইন মাধ্যমে ক্রেমলিনের পক্ষে প্রচারণা চালানোর কাজে নিয়োজিত এসব সেনা।

প্রিগোশিনের নেতৃত্ব এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যার কাজ ওয়েবসাইট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ক্রেমলিনের মতাদর্শিক অবস্থানের প্রচার করা। এতে নেতৃত্ব দেয় পিটার্সবার্গের ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি (আইআরএ)। সংস্থাটির বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) সাবেক প্রধান রবার্ট মুলার ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়টি তদন্ত করার দায়িত্বে ছিলেন। তদন্ত শেষে তিনি উপসংহার টানেন, যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা উসকে দিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার চালিয়েছিল আইআরএ।

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রিগোশিন ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার চালান বলে অভিযোগ রয়েছে

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়ার পর আইআরএ ও প্রিগোশিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

আইআরএর আরেকটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু ইউক্রেন। যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে অপপ্রচার চালানোর কাজে নিয়োজিত আছে সংস্থাটি। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউক্রেন নয় যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মতো দেশেও প্রিগোশিনের ‘সাইবার সেনারা’ বিভিন্ন অপপ্রচার চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

ভাগনারের মতোই আইআরএর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ এত দিন অস্বীকার করে আসছিলেন প্রিগোশিন। একই সঙ্গে যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রিগোশিন বলেন, তিনিই আইআরএ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর নির্দেশেই এটি পরিচালিত হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ

তবে এত কিছু করলেও প্রিগোশিনকে নিয়ে এ রকম আলোচনা আগে ছিল না। গত বছরের শুরুতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে আলোচনার কেন্দ্রে আসেন তিনি। এত দিন প্রিগোশিনকে সাধারণত তাঁর প্রতিষ্ঠিত ক্যাটারিং কোম্পানি কনকর্ডের মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার কাজ করতে দেখা গেছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরই তা বদলে যায়। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই আবারও পুতিনের ক্রেমলিনের কাছে প্রিগোশিনের চাহিদা হঠাৎ করে অনেক বেড়ে যায়।

বছরের পর পর বছর ধরে ভাগনারের অস্বিত্বের বিষয়টি অস্বীকার করার পর ২০২২ সালের ২২ জুলায় ক্রেমলিন নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আচমকা জানায়, ভাড়াটে এই সেনাদল পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে লড়ছে। প্রিগোশিনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন। এসব ভিডিও ইউক্রেনের রুশ বাহিনীর দখলে যাওয়া এলাকায় ধারণ করা। এসব ভিডিওতে ইউক্রেনে ভাগনারের অভিযান নিয়ে গর্ব করতে দেখা যায় তাঁকে। বর্তমান বিশ্বে প্রিগোশিন প্রতিষ্ঠিত ভাগনারের চেয়ে ক্ষমতাধর কোনো ভাড়াটে সেনাদল নেই। যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে হেলিকপ্টার ও ট্যাংক পর্যন্ত এমন কোনো যুদ্ধাস্ত্র নেই, যেটা ভাগনারের অস্ত্রভান্ডারে নেই।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পুতিনের ক্রেমলিনের কাছে প্রিগোশিনের গুরুত্ব ও চাহিদা আরও বেড়েছে

তবে ইউক্রেন যুদ্ধে ভাগনার সেনারা লড়াই শুরু করার কিছুদিন পর রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। রাশিয়ার সেনা কমান্ডারদের সমালোচনা করতে দেখা যায় প্রিগোশিনকে। তাঁর দাবি, যুদ্ধ করার জন্য রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভাগনারকে যেসব অস্ত্র–গোলাবারুদ সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা রক্ষা করছে না। এমনকি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই সোইগু এবং চিফ অব জেনারেল স্টাফ ভ্যালিরি জেরাসিমভকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহীও’ বলেন তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধে কয়েক হাজার রুশ সেনা নিহত হওয়ার পর প্রিগোশিনকে কারাগারগুলো থেকে আরও বেশি বন্দী নিয়োগ দেওয়ার অনুমতি দেয় ক্রেমলিন। এরপর তিনি নিজেই কারাগারে ঘুরে ঘুরে বন্দী নিয়োগের কাজটি তদারকি করেন। দণ্ডিত আসামিদের প্রতিশ্রুতি দেন, ইউক্রেনে ছয় মাস যুদ্ধ করে তাঁরা মুক্ত। এরপর তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন। তাদের সাজা মওকুফ করে দেওয়া হবে। তবে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় এ বছরের শুরুতে তাঁর বন্দী নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে।