তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট গ্রহণ আগামীকাল রোববার। এর আগে শেষ সময়ের প্রচারণায় ব্যস্ত দুই প্রার্থী রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও কেমাল কিলিচদারওলু। ভোটাররাও জানিয়েছেন তাঁদের ভাবনা।
এরদোয়ান বলেছেন, নির্বাচনে কেমালের জয় হলে সন্ত্রাসবাদ জিতে যাবে। অন্যদিকে কেমাল সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের ইস্যু সামনে এনে জাতীয়তাবাদী ভোট নিজের ঝুলিতে ভরার চেষ্টা করছেন।
তুরস্কের এবারের জাতীয় নির্বাচনে চরম নাটকীয় পরিস্থিতি দেখা গেছে। দেশটির নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে যেকোনো প্রার্থীকে ৫০ শতাংশ ভোট পেতে হবে। কিন্তু প্রথম দফার ভোটে কোনো প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। তাই নির্বাচন গড়ায় দ্বিতীয় দফায়।
প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান ৪৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কেমাল পেয়েছিলেন ৪৫ শতাংশ। আর সিনান ওগান ছিলেন তৃতীয় অবস্থানে। তাঁর ঝুলিতে যায় ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। এখন দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে সিনান সমর্থন দিয়েছেন এরদোয়ানকে।
প্রথম দফার ভোটে এরদোয়ান ৪৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। কেমাল পেয়েছিলেন ৪৫ শতাংশ। আর সিনান ওগান ছিলেন তৃতীয় অবস্থানে। তাঁর ঝুলিতে যায় ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট। এখন দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে সিনান সমর্থন দিয়েছেন এরদোয়ানকে।
এরদোয়ান টানা ২০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুরস্কের ক্ষমতায় রয়েছেন। আরও পাঁচ বছর তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকছেন কি না, সেটা নির্ধারিত হবে কাল। এরদোয়ানের অভিযোগ, কেমাল ঘৃণা ছড়াচ্ছেন। বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। কেমাল জয়ী হলে সন্ত্রাসবাদের জয় হবে।
প্রথম দফার ভোটের ফলে এরদোয়ানের চেয়ে প্রায় ২৫ লাখ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন কেমাল। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, দ্বিতীয় দফার ভোটে প্রভাবক হতে পারেন সিনানের সমর্থক ও প্রথম দফায় ভোটকেন্দ্রে না যাওয়া প্রায় ৮০ লাখ ভোটার। যে প্রার্থী এসব ভোটারের ভোট টানতে পারবেন, তিনিই শেষ হাসি হাসবেন।
এ সপ্তাহে চার ঘণ্টা বাবালা টিভি নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ভোটের প্রচার চালিয়েছেন কেমাল। ভোটার ও সমর্থকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ এই অনুষ্ঠান দেখেছেন। বিশেষত তরুণদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই অনুষ্ঠান।
জাতীয়তাবাদী গুড পার্টির তরুণ প্রচারক মেহতেপ বলেন, ইউটিউবে কেমালের এই অনুষ্ঠান তরুণদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। অনেক তরুণ ভোটার প্রথম দফায় ভোটকেন্দ্রে যাননি। তাঁরা এখন নতুন করে ভাবছেন।
আঙ্কারার দক্ষিণ–পূর্বের বালা শহরে কাবাবের দোকান চালান আল ওজদেমির। এরদোয়ানের দল একে পার্টির দপ্তরের সড়কে তাঁর দোকান। তিনি বলেন, ‘আগেরবার এরদোয়ানকে ভোট দিয়েছি। এবারও দিব। আমি চাই, তিনি আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসুক।’
সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কেমালের ওঠাবসা। তিনি (কেমাল) নির্বাচনে বিজয়ী হলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জয় হবে।—রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
তবে পাশের আরেক দোকানি এবারের নির্বাচনে কাকে সমর্থন দেবেন, সেটা সংবাদমাধ্যমে জানাতে চান না। তিনি মনে করছেন, এটা জানালে তাঁর দোকানে গ্রাহক কমে যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে মন্থর অর্থনীতির গতি ফেরানোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তুরস্ক। এর সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে গত ফেব্রুয়ারির প্রাণঘাতী ভূমিকম্পের আঘাত। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক অভিবাসী সামাল দেওয়ার কার্যকর কৌশল নির্ধারণের ইস্যু এবারের নির্বাচনে প্রভাবক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
তুরস্কে অভিবাসনবিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত ভিক্টোরি পার্টি। এই দলের নেতা উমিত ওজদাগ। প্রথম দফার নির্বাচনে দলটি ১২ লাখ ভোট পেয়েছিল। দ্বিতীয় দফায় দলটি কেমালকে সমর্থন দিয়েছে। উমিত বলেন, ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিজ দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেমাল।
ক্ষমতায় গেলে ১ কোটি ৩০ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে নিজ দেশে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কেমাল।—উমিত ওজদাগ, তুরস্কের ভিক্টোরি পার্টির নেতা।
এরদোয়ান বলেছেন, ইতিমধ্যে সিরীয় শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তিনি। আবারও ক্ষমতায় গেলে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হবে। আরও বেশিসংখ্যক শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হবে।
দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে কেমালের তীব্র সমালোচনা করেছেন এরদোয়ান। কেমালের ঘনিষ্ঠ মিত্র কুর্দি পিকেকে। এই সংগঠনকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে তুরস্ক সরকার ও পশ্চিমারা।
পিকেকের সঙ্গে কেমালের ঘনিষ্ঠতার প্রতি ইঙ্গিত করে গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কেমালের ওঠাবসা। তিনি (কেমাল) নির্বাচনে বিজয়ী হলে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জয় হবে।
কুর্দিদের আরেকটি দল এইচডিপি পার্টিও কেমালকে সমর্থন দিয়েছে। এরদোয়ানের অভিযোগ, এই দলের সঙ্গে কুর্দি সন্ত্রাসীদের দহরম–মহরম রয়েছে। যদিও এইচডিপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলটি জানিয়েছে, তারা পরিবর্তন চায়। কারণ, এরদোয়ান অর্থনীতির গতি ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেননি। এ জন্য এরদোয়ানের বিপক্ষে কেমালকে সমর্থন দিয়েছে তারা।
ভোটারদেরও অনেকে এমনটাই ভাবছেন। বালা শহরে একটি রেস্তোরাঁ চালান সোনগুল। এ বিষয়ে সোনগুল বলেন, ‘আমিও পরিবর্তন চাই। আমার গ্রাহকেরাও পরিবর্তন চান।’ এমন মনোভাব পোষণ করলেও তিনি এরদোয়ানকে ভোট দেবেন বলে জানালেন। তাঁর মতে, আপাতত এরদোয়ানের কোনো বিকল্প নেই।