সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে আজ সোমবার আবারও ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন ৬৯ জন। আর ধসে পড়েছে ২৯ ভবন।
দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের মালাতিয়া প্রদেশের ইয়েসেলিরুত শহরে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬।
তুরস্ক ও সিরিয়া সীমান্তে ৬ ফেব্রুয়ারি ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। আজ শুধু তুরস্কেই ১ লাখ ৭৩ হাজার ভবনের ক্ষতি হয়েছে।
ইয়েসেলিরুতের মেয়র মেহমেত সিনার হেবারতুর্ক টেলিভিশনকে বলেছেন, ভূমিকম্পে শহরটির কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। কাহরামানমারাস অঞ্চলে একটি কারখানা ধসে একজন নিহত হয়েছেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন তুর্কের লাইভ ফুটেজে দেখা যায়, উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একজনকে জীবিত বের করে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন। এর একটু পরে এক নারীকে একই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। বলা হয়, এই নারী আগে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির মেয়ে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এএফএডি) প্রধান ইউনূস সেজার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, পাঁচটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।
এএফএডির ভূমিকম্প ও ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক মহাপরিচালক অরহান তাতার বলেন, গত তিন সপ্তাহে এই অঞ্চলে নতুন করে চারটি ভূমিকম্প হয়েছে। সেই সঙ্গে ৫ থেকে ৬ মাত্রার মধ্যে ৪৫টি পরাঘাত অনুভূত হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে একের পর এক ভবন ভেঙে পড়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে তুরস্ক সরকার। চলছে তদন্ত। ভেঙে পড়া ভবনগুলো নির্মাণের সময় কোনো ত্রুটি ছিল কি না, থাকলে এর পেছনে কার গাফিলতি রয়েছে—এসব খুঁজে বের করতে ছয় শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮৪ জনকে। তুরস্কের বিচারমন্ত্রী বেকির বোজদাগ জানান, সন্দেহভাজন ১৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ভেঙে পড়া ভবনের মালিক ও ঠিকাদারেরাও রয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছিলেন, তুরস্কে ভবন নির্মাণে নিয়ম মানা হচ্ছে না। লাগামহীন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশটির নির্মাণ খাতে। অর্থের বিনিময়ে ভবন নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি দেশটির সরকার।
ভূমিকম্পের পর ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও গাফিলতির কারণে তুরস্কে ১১৩ জনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। দেশটির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ভূকম্পনকবলিত এলাকার কাছাকাছি একটি শহরের মেয়রও রয়েছেন।
এবারের ভূমিকম্পে তুরস্কে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি ভবন ভেঙে পড়েছে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্কের বিরোধী দল ও বিশেষজ্ঞদের অনেকের অভিযোগ, ভবন নির্মাণের নিয়মনীতি মানতে এবং এই খাতের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রশাসন।
৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বড় পরিসরে তদন্ত শুরু হয়েছে। চলছে গ্রেপ্তার। ইতিমধ্যে তুরস্ক সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যেসব ভবনের বেশির ভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো একেবারে গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে।