স্পেনের একটি ক্যাথলিক গির্জায় ১৯৪০-এর দশক থেকে দুই লাখের বেশি শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ দেশটির প্রতি ২০০ নাগরিকের মধ্যে ১ জনের বেশি ক্যাথলিক গির্জায় যাজকের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় আগে হওয়া তদন্তগুলোর তুলনায় এবারের সংখ্যাটি অনেক বড়।
স্পেনের মানবাধিকারবিষয়ক ন্যায়পালের কার্যালয় থেকে করা এক তদন্তে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার স্পেনের পার্লামেন্টে তদন্ত প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
তদন্তের নমুনা হিসেবে আট হাজারের বেশি মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। স্পেনের মানবাধিকারবিষয়ক ন্যায়পাল অ্যাঞ্জেল গ্যাভিলোন্দো বলেন, নমুনা হিসেবে নেওয়া মানুষদের শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বলেছেন, শৈশবে গির্জায় যাজকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাঁরা। গির্জার আওতাধীন পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে জবানবন্দি নেওয়ার পর দেখা গেল, এ হার আরও বেড়েছে। ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, গির্জা ও গির্জার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাঁরা।
স্পেনের মানবাধিকারবিষয়ক ন্যায়পাল অ্যাঞ্জেল গ্যাভিলোন্দো মনে করেন, পুরো জনসংখ্যার দিকে থেকে বিবেচনা করলে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ—হারটি অনেক বড়। স্পেনের জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ।
নিপীড়নের শিকার হওয়া মানুষদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ন্যায়পাল।
বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশের গির্জায় যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। ২০২১ সালে স্পেনের এল পাইস সংবাদপত্রে এ ধরনের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, স্পেনের গির্জায় ১২ শতাধিক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এরপর গত জুনে স্পেনে অভ্যন্তরীণ এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৪০–এর দশক থেকে এ পর্যন্ত ৭২৮ নিপীড়নকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। নিপীড়নের শিকার হয়েছে ৯২৭ জন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে এল পাইস পত্রিকায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পরই শিশু যৌন নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। আনুষ্ঠানিক এ তদন্ত শুরু হয় ২০১৮ সালে।
স্পেনের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যানশেজ সাংবাদিকদের বলেন, অনেক বছর ধরে নিপীড়িত মানুষদের অনেকে তাঁদের নিপীড়নের ঘটনাগুলো প্রকাশ করতে পারেননি।
মাদ্রিদের বাসিন্দা ও পর্যটক গাইড ফার্নান্দো গার্সিয়া স্যালমোনেস (৬২) রয়টার্সকে বলেন, তাঁর বয়স যখন ১৪ বছর ছিল, তখন তাঁর স্কুলের এক পাদরি তাঁকে ধর্ষণ করেছিলেন। এখন তিনি সে তথ্য প্রকাশ করতে পারছেন।
স্যালমোনেস আরও বলেন, তিনি ১৯৯৫ সালে ঘটনাটি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তবে তখন মামলাটি খারিজ হয়ে গিয়েছিল।
স্যালমোনেসের আশা, মানবাধিকারবিষয়ক ন্যায়পালের প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে গির্জায় এসব নিপীড়নের বিরুদ্ধে নীরবতা ও দায়মুক্তির অবসান ঘটবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত করার ক্ষেত্রে গির্জা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনটির ব্যাপারে স্পেনের গির্জাটির মুখপাত্রের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেছিল রয়টার্স। তবে সাড়া পাওয়া যায়নি।