রাশিয়ার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ইউক্রেনের অনেক স্বেচ্ছাসেবী মাঠে নেমেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আলেকজান্দার সামশুর (৪১)। তিনি দিনে চুল কাটার কাজ করেন। কিন্তু রাতের বেলা তিনি হামলাকারী ড্রোনের আক্রমণ রুখতে কাজ করেন যোদ্ধা হিসেবে।
২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার বর্ষপূর্তি হতে যাচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়ার বাহিনীর দূরনিয়ন্ত্রিত ড্রোন বা চালকবিহীন ছোট উড়োজাহাজ ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভূপাতিত করার কৌশল শিখে নিয়েছেন ইউক্রেনের যোদ্ধারা। আলেকজান্দার নিজের দায়িত্ব পালন নিয়ে গর্ববোধ করেন। তিনি ইউক্রেনের আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ইউনিটের সদস্য।
এই ইউনিটের অধিকাংশ যোদ্ধা মূলত আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত। তাঁরা অন্যান্য কাজের পাশাপাশি যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে রাজধানী কিয়েভে বিমান বা ড্রোন হামলার সাইরেন বাজার শব্দ শুনলেই তার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা। তাঁদের দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মেশিনগান। এ নিয়ে ইরানের শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ভূপাতিত করার জন্য লড়াই করেন তাঁরা। একটি ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে বিশেষ থার্মাল ক্যামেরায় রাতের আকাশে লক্ষ্যবস্তু খোঁজেন আলেকজান্দার। তিনি বলেন, ‘আমি সুখী মানুষ। কারণ, আমি দেশের সুরক্ষায় কাজ করছি। ইউক্রেনের মানুষকে সুরক্ষা দিচ্ছি।’
আলেকজান্দারের পাশেই আরেক যোদ্ধাকে সোভিয়েত আমলের তৈরি ‘ম্যাক্সিম’ মেশিনগানের সবুজ ব্যারেল ঠিক করতে দেখা যায়। যুদ্ধের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ প্রসঙ্গে আলেকজান্দার বলেন, ‘আমি একটি প্রসাধন সেলুনে কাজ করি। আমি যে কাজ জানি, সেটাই করি। সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলি।’ তিনি বলেন, রুশ সেনাদের ভয়ে তিনি শহর ছাড়েননি।
গত শীতের মৌসুমে কিয়েভেসহ আশপাশের এলাকায় হামলা শুরু করে রুশ বাহিনী। অনেকেই এ সময় লুকিয়ে পড়েন। আলেকজান্দার বলেন, বেসামরিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি লুকাননি। শত্রু যখন দোরগোড়ায়, তখন তিনি নিজের প্রতিরক্ষার জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন।
আলেকজান্দার দাবি করেন, গত ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর রাতে তাঁদের ইউনিট বাড়ির ছাদ থেকে দুটি ড্রোন ভূপাতিত করেন। তাঁরা যুদ্ধ করতে যেসব কৌশল শিখেছেন, তা অন্যদেরও শেখাচ্ছেন। আলেকজান্দারের পোশাকে ইতিমধ্যে একাধিক ব্যাজ দেখা গেছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ড্রোন হান্টার বা ড্রোনশিকারি।
আলেকজান্দারের অবশ্য আগে থেকে সেনাবাহিনীতে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি দেশটির রিজার্ভ সেনাসদস্য। যুদ্ধ শুরুর সময়ে যখন তাঁদের সামরিক ঘাঁটি আক্রান্ত হয়, তখন তিনি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা দপ্তরে যোগ দেন। শুরুতে তিনি বেসামরিক লোকজনের কাজে খাদ্যসহায়তা ও লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করতেন। সেলুনে তিনি খাকি পোশাক পরে কাজ করার পাশাপাশি লোকজনকে যুদ্ধের কথা শোনান তিনি। তিনি জীবনের আলোকিত দিনগুলোর বদলে এখন অন্ধকার এক সময়ের কথা বলেন।