ইউক্রেনের বাহিনী রাশিয়ায় ঢুকে বেসামরিক মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দাবি করেছে মস্কো। তবে কিয়েভ এ অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে ‘ইচ্ছাকৃত উসকানি’ বলে দাবি করেছে।
রাশিয়ার ভাষ্য, ইউক্রেন সীমান্ত ঘেঁষে তাদের এলাকায় ইউক্রেনীয় সেনারা নিয়মিত গোলা ছোড়ে। কিন্তু অনুপ্রবেশের এ অভিযোগ যদি সঠিক হয়, তবে এটি হবে রাশিয়ার ভূখণ্ডের ভেতরে যুদ্ধের একটি বিরল উদাহরণ।
রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বৃহস্পতিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। সেখানে ব্লিঙ্কেন রাশিয়াকে ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। এর মধ্যেই রাশিয়ার পক্ষ থেকে হামলার এ অভিযোগ করা হয়।
রাশিয়ার এমন দাবির কিছু সময় পরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, হামলাকারীরা ‘নব্য নাৎসি ও সন্ত্রাসী’...যারা আজ আরও একটি সন্ত্রাসী হামলা চালাল। সীমান্তে অনুপ্রবেশ করে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি ছুড়ল।
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক খুব দ্রুত মস্কোর এ দাবি খারিজ করে দেন। তিনি বলেন, রাশিয়ায় হামলা চালানোর গল্পটি ইচ্ছাকৃত উসকানি। অন্য দেশের ওপর হামলা ও যুদ্ধের কারণে দেশটিতে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্যকে ন্যায্যতা দিতে, রাশিয়া তার জনগণকে ভয় দেখাতে চায়।
মস্কোর এফএসবি সিকিউরিটি সার্ভিস জানায়, ইউক্রেন সীমান্তঘেঁষা রাশিয়ার ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের ক্লিমোভস্কি জেলায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে ‘প্রচুর বিস্ফোরক’ দেখা গেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘ইউক্রেন বাহিনী এ হামলা চালিয়েছে।’
দিনের শুরুতে ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ বলেছিলেন, ইউক্রেনের ‘একটি পর্যবেক্ষণকারী ও নাশকতাকারী দল’ সীমান্তবর্তী গ্রাম লিউবিচেনের কাছ দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। গ্রুপটি চলন্ত গাড়ির ওপর গুলি ছোড়ে। এতে একজন নিহত হয় ও ১০ বছরের এক শিশু আহত হয়। বোগোমাজ বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বোগোমাজ বলেন, ইউক্রেনের একটি ড্রোন দিয়ে সুশানি গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। একটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের লোমাকোভকা এলাকায় মর্টারের গোলার আঘাতে দুটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার আরেকটি সীমান্তবর্তী অঞ্চলের গভর্নর রোমান স্তারোভয়েত বলেন, ইউক্রেনের ছোড়া গোলায় তেতকিনো গ্রামে একজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া তিনটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও পুরো গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জাপোরিঝঝিয়ায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে রাশিয়ার হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রটি আমাদের প্রতিটি দিনকে সন্ত্রাসের দিনে পরিণত করতে চায়। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো খারাপ শক্তি রাজত্ব করবে না। আমরা সব দখলদারকে বিতাড়িত করব ও অবশ্যই সবকিছুর জন্য তারা দায়ী থাকবে।’