লড়াইয়ে এগিয়ে ঋষি সুনাক, দেশে ফিরলেন বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। দলীয় প্রধান হতে তিনি ৩৫৭ জন কনজারভেটিভ (টোরি) এমপির মধ্যে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ১০০ জনের সমর্থন পেয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে নিজেকে শামিল করতে বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে আজ শনিবার দেশে ফিরেছেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যদিও এখন পর্যন্ত তাঁদের কেউই এ লড়াইয়ে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেননি। খবর বিবিসি ও এএফপির।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লিজ ট্রাসের আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণার পর তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংবাদমাধ্যমের আলোচনায় এগিয়ে রয়েছে সুনাক ও জনসনের নাম।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে ৩৫৭ জন কনজারভেটিভ (টোরি) এমপির মধ্যে ন্যূনতম ১০০ জনের সমর্থন পেতে হবে। আগামী সোমবারের মধ্যে তাঁদের এই সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। আর ২৮ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষ হবে। যিনি দলের নেতা হবেন, তিনিই দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন।

সুনাকের নির্বাচনী প্রচারশিবিরের বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনাক পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রয়োজনীয় ১০০ জন টোরি এমপির সমর্থন নিশ্চিত করেছেন। টোরি এমপি টোবিয়াস এলউড শনিবার টুইট করে এ তথ্য জানিয়েছেন।

জনসনের সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন সুনাক। পরে পদত্যাগ করে তিনি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে শামিল হন। শেষ পর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান।

জনসনের উত্তরসূরি হন ট্রাস। যদিও ট্রাসের কর পরিকল্পনা অর্থনীতি ধ্বংস করবে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন সুনাক। করোনা মহামারির সময় অর্থনীতি সচল রাখতে সচেষ্ট ছিলেন সুনাক। কিন্তু করসুবিধা নেওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তাঁর।

এদিকে ছুটি কাটাতে ক্যারিবীয় অঞ্চলে গিয়েছিলেন জনসন। এর মাঝেই দেশের রাজনীতিতে ঝড় ওঠে। আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণার পর ট্রাসের উত্তরসূরি হতে তাঁর নাম আলোচনায় চলে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার লন্ডনে ফিরেছেন জনসন।

বরিসের প্রচার সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে বরিসও ১০০ জন টোরি এমপির সমর্থন পেয়েছেন।

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনসন। ওই সময় থেরেসা মের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। কিন্তু বিতর্ক-সমালোচনা তাঁর পিছু ছাড়েনি।

মহামারিতে করোনা বিধিনিষেধ ভেঙে পার্টির আয়োজন ও জরিমানা প্রদান ছাড়াও নিজ দলের এমপি ক্রিস পিনচারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ ছিল জনসনের বিরুদ্ধে।

ভঙ্গুর অর্থনীতির গতি ফেরাতে না পারা ও জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে না পারার অভিযোগও ছিল জনসনের বিরুদ্ধে। এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বাঁধে। টোরি এমপিরাও তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন। সরকারের একের পর এক মন্ত্রী ও সহযোগী পদত্যাগ করে চাপে ফেলেন জনসনকে। শেষ পর্যন্ত গত ৬ সেপ্টেম্বর পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।

পদত্যাগের দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে আবারও কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে জনসনের সামনে। টোরি এমপিদের অনেকেই চাইছেন জনসন ছেড়ে যাওয়া পদে ফিরে আসুন। সংকটের সময় দল ও দেশের হাল ধরুন। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, এ সুযোগ কাজে লাগাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন জনসন। যদিও এ জন্য একসময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও তাঁর সরকারের অর্থমন্ত্রী সুনাকের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে ৫৮ বছর বয়সী জনসনকে।

তবে জনসনকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন তাঁর সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব। শনিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত, পেছনে নয়।’ এ সময় চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সুনাকের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান তিনি। এ অভিজ্ঞতার প্রশংসা করে রাব বলেন, ‘সুনাক একজন আদর্শ প্রার্থী।’

প্রার্থী হচ্ছেন পেনি মরডান্ট

কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচনের লড়াইয়ে জনসন-সুনাকের পাশাপাশি আলোচনায় ছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মরডান্ট। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার ৪৯ বছর বয়সী মরডান্ট নিজের প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের নতুন করে শুরু করতে হবে। দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় একজন যোগ্য নেতা নির্বাচন করতে হবে।’

২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন মরডান্ট। জনসনের পদত্যাগের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে শামিল হলেও বাছাইয়ে হেরে যান। পরে ট্রাসকে সমর্থন দেন। সরকার গঠনের পর ট্রাস তাঁকে হাউস অব কমন্সের নেতা এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন। প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনায় যখন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট উত্তাল, তখন ট্রাসের সমর্থনে জোরালো বক্তব্য দিয়ে নজর কেড়েছিলেন মরডান্ট।