রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ

আগুনে ঘি ঢালছেন বাইডেন: ক্রেমলিন

ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ যখন ক্রমেই অগ্রগতি পাচ্ছে, তখন হঠাৎ করেই নীতিতে পরিবর্তন আনল যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এতে চটেছে মস্কো। ক্রেমলিনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, এ পদক্ষেপ ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সহস্রতম দিন পূরণ হয়েছে আজ সোমবার। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সামরিক সহায়তা পেয়েছে কিয়েভ। তবে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি তারা। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালানোর অনুমতি চেয়েছিল ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র তাতে রাজি হয়নি।

গতকাল রোববার সমর্থিত এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, রাশিয়ার বেশ খানিকটা গভীরে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বাইডেন। কয়েক দিনের মধ্যেই এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে প্রথম হামলাটি চালাবে ইউক্রেন। তবে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বিবেচনায় এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি ওই সূত্র।

এ নিয়ে বিস্তারিত বলতে নারাজ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও। রোববার সন্ধ্যায় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আজ অনেক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি পেয়েছি। তবে মুখের বুলি দিয়ে হামলা চালানো হয় না। ঘোষণা দিয়ে কেউ হামলা চালায় না।’

সূত্রের দেওয়া তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটা সময় এ সিদ্ধান্ত নিল, যখন রাশিয়ার হয়ে উত্তর কোরিয়ার সেনাসদস্যদের ইউক্রেনে মোতায়েন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে কিয়েভ। এ নিয়ে ইউক্রেনের পাশাপাশি উদ্বেগে রয়েছে ওয়াশিংটনও। আর মাত্র দুই মাসের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি শুরু থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর পক্ষে।

‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বাধতে পারে

এদিকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাত্র ব্যবহার করতে বাইডেনের অনুমোদনের খবর সামনে আসার পর এ নিয়ে মুখ খুলেছে মস্কোও। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ঘটনা সত্যি হলে এটা স্পষ্ট যে ওয়াশিংটনের বিদায়ী প্রশাসন ‘আগুনে ঘি ঢালতে’ এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে সংঘাত বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা আরও বেড়ে যাবে।

পেসকভ আরও বলেন, এ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সেপ্টেম্বরেই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ বেধে যাবে। হামলা হলে তার দায় শুধু ইউক্রেনই নয়, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া দেশগুলোর ওপরও বর্তাবে।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির উপপ্রধান ভ্লাদিমির ঝাবারভ। তাঁর মতে, ওয়াশিংটনের এ সিদ্ধান্তের ফলে ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ বেধে যেতে পারে। আর রাশিয়ার ফেডারেশন কাউন্সিলের সদস্য আন্দ্রেই কলিশাস বলেছেন, পশ্চিমাদের সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

এদিকে আজও ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জারি রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ওদেসা অঞ্চলের গভর্নর ওলেগ কিপার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, রুশ বাহিনীর চালানো নতুন হামলায় ওদেসায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। আর রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে নোভোলেকসিয়িভকা নামে আরেকটি গ্রাম দখলে নিয়েছে তারা।