অবসর নীতিমালা পরিবর্তন

ফ্রান্সে ব্যাপক বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৪৫৭

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সরকারি কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করছেন। এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে।

বিক্ষোভকারীদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার তুলুজ শহরে
এএফপি

ফ্রান্সে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে এ সংঘর্ষ হয়। ফ্রান্স সরকারের প্রস্তাবিত অবসর নীতিমালার বিরুদ্ধে তিন মাস ধরে চলমান বিক্ষোভে এটি সবচেয়ে বড় সহিংসতার ঘটনা। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডার্মানিন বলেন, প্রেসিডেন্ট মাখোঁর অবসর নীতিমালার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায় ৪৫৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে ৪৪১ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আহত হয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে ডার্মানিন সিনিউজ চ্যানেলকে বলেন, প্যারিসের রাস্তায় ৯০৩ স্থানে বিক্ষোভকারীরা আগুন দেন। সে আগুন নেভানো হয়েছে।

গত জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সরকারি কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। অবসরের বয়স ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৪ করার পরিকল্পনা হয় এবং পার্লামেন্টে কোনো ধরনের ভোটাভুটি ছাড়াই এ সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিবাদে তিন মাস ধরে ফ্রান্সের রাস্তায় বিক্ষোভ চলছে। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ বড় ধরনের সহিংসতায় রূপ নেয়।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ

ডার্মানিন বলেন, দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। কয়েক স্থানে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। এর মধ্যে প্যারিস শহর অন্যতম। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় ১০ লাখ ৮৯ হাজারের মতো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। শুধু প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার মানুষ। গত জানুয়ারিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এটি ছিল রাজধানী শহরটিতে সবচেয়ে বড় জমায়েত। তবে দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন ৭ মার্চের বিক্ষোভে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ওই দিন বিভিন্ন জায়গায় মোট ১২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন।

পুলিশ সতর্ক করে বলেছে, প্যারিসে কয়েক শ কালো পোশাকধারী উগ্রপন্থী বিক্ষোভকারী ব্যাংক, দোকান ও ফাস্ট ফুড রেস্তোরাঁর জানালা ভেঙে ফেলেছেন এবং সড়কে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট করেছেন।

গত বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট অবসরকালীন সংস্কারকে জরুরি বলে উল্লেখ করার পর বিক্ষোভকারীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এদিন মাখোঁ বলেছেন, এ সংস্কার করতে গিয়ে তাঁর জনপ্রিয়তা কমে গেলেও তিনি তা মেনে নিতে প্রস্তুত আছেন। এর আগে গত রোববার এক জরিপে দেখা গেছে, মাখোঁর জনপ্রিয়তা ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

মাখোঁ সরকারের কট্টরপন্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ডার্মানিন বিক্ষোভকারীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে যে অবসর নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে, তা থাকবে। আমরা সহিংসতার কারণে এটি তুলে নেব না। যদি বিক্ষোভের কারণে তুলে নেওয়া হয়, তবে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব থাকবে না। আমরা গণতান্ত্রিক বিতর্ক বা সামাজিক বিতর্ক করতে প্রস্তুত, কিন্তু সহিংস বিতর্ক চাই না।’

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বর্দো শহরের পৌর ভবনের বারান্দায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সেখানে সফরে যাওয়ার কথা। এটি ব্রিটিশ রাজা হিসেবে চার্লসের প্রথম বিদেশ সফর। তবে বিক্ষোভকারীরা মঙ্গলবার নতুন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করায় রাজা চার্লসের সফরের ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করেছেন।

বর্দো শহরের মেয়র পিয়েরে হারমিক বলেন, ‘এ ধরনের সহিংসতার বিষয়টি বুঝতে এবং গ্রহণ করা কঠিন। কেন বর্দোর লোকজনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হচ্ছে? আমি এর কঠোর নিন্দা জানাতে পারি।’