রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

ভাগনার যোদ্ধারা কি ইউক্রেনে ফিরছেন

প্রয়াত ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিনের এক সহযোগীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট পুতিনের বৈঠক।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন
ছবি: রয়টার্স ফাইল ছবি

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী রুশ প্রতিষ্ঠান ভাগনারের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের মৃত্যুর পর এই বাহিনীর টিকে থাকা নিয়ে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে আছেন এই বাহিনীর যোদ্ধারাও।

গতকাল শুক্রবার ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধা ইউনিট দেখভালের দায়িত্ব আন্দ্রেই ত্রোশেভকে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ত্রোশেভ প্রিগোশিনের সাবেক সহযোগী। পুতিনের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভাগনার যোদ্ধারা ইউক্রেনে ফিরছেন কি না, সে জল্পনা শুরু হয়েছে।

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করছিলেন ভাগনার সেনারা। তবে রুশ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন ভাগনারপ্রধান প্রিগোশিন। এই অসন্তুষ্টি থেকে গত জুন মাসের শেষ দিকে তিনি বিদ্রোহ করে বসেন। ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কো অভিমুখে ভাগনার সেনাসহ যাত্রা করেছিলেন প্রিগোশিন। পরে বেলারুশের মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ থেকে সরে আসেন তিনি।

বিদ্রোহ থেকে সরে আসার পর প্রিগোশিনসহ ভাগনারের বেশ কয়েকজন কমান্ডারের সঙ্গে ক্রেমলিনে বৈঠক করেছিলেন পুতিন। ওই বৈঠকে তিনি ভাগনারের নতুন প্রধান হিসেবে ত্রোশেভের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তবে এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত ছিলেন না প্রিগোশিন।

গত ২৩ আগস্ট রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাওয়ার সময় উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রিগোশিনসহ ১০ জন নিহত হন।

‘ধূসর চুলের’ কমান্ডার

ত্রোশেভ রুশ সামরিক বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল। তিনি ‘সেদোয়’ নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘ধূসর চুল’। তিনি পুতিনের নিজ শহর সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দা। আফগানিস্তান, চেচনিয়া ও সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানে তাঁর অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।

ত্রোশেভের উদ্দেশে বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ‘সর্বশেষ বৈঠকে আমরা আপনাকে (ত্রোশেভ) স্বেচ্ছাসেবক ইউনিটগুলো গঠনের তদারকির বিষয়ে কথা বলেছিলাম, যেগুলো বিশেষ সামরিক অভিযান চলা অঞ্চলে বিভিন্ন কাজ করতে পারে।’

বৈঠকে ইউক্রেনে রুশ স্বেচ্ছাসেবক ইউনিট দেখভালের দায়িত্ব ত্রোশেভকে দেন পুতিন। এতে রাশিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনুস-বেক ইয়েভকুরভও উপস্থিত ছিলেন।

সিরিয়ায় রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা ভাগনারের অন্যতম কমান্ডার ছিলেন ত্রোশেভ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ভাগনার কি ফিরছে

বিদ্রোহের পর সমঝোতা অনুযায়ী ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভাগনার যোদ্ধাদের বেলারুশে সরিয়ে নেওয়া হয়। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিনের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ভাগনার বাহিনী হিসেবে ইউক্রেন যুদ্ধে না ফিরলেও যোদ্ধারা যে ফিরবেন, সে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিতই মিলেছে।

সর্বশেষ বৈঠক থেকে এই ইঙ্গিতও পাওয়া যায়, ভাগনার যোদ্ধাদের কাজের সমন্বয়ে ত্রোশেভের পাশাপাশি উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনুস-বেকও দায়িত্ব পালন করবেন।

ভাগনার যোদ্ধাদের সম্মুখসমরে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে রাশিয়া, ইউক্রেন ও পশ্চিমা সূত্রগুলো। ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ভাগনারের সঙ্গে যুক্ত থাকা কয়েক শ যোদ্ধাকে ইউক্রেনে বিভিন্ন ইউনিটে নানা দায়িত্ব দিয়ে নতুন করে মোতায়েন শুরু হয়েছে।

ব্রিটিশ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, পুনরায় মোতায়েন করা যোদ্ধাদের পদমর্যাদা কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী কোম্পানির অংশ হিসেবে সম্ভবত তাঁদের পাঠানো হচ্ছে।

যুদ্ধবিষয়ক রুশ ব্লগ রাইবারে বলা হয়েছে, ভাগনার যোদ্ধারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর বাখমুতে ফিরছেন।

রুশ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে হামলা

রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলের একটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে গতকাল ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এতে একটি হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বলে আঞ্চলিক গভর্নর রোমান স্তারোভোইৎ জানিয়েছেন।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল বলেছে, আগের দিন রাতে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইউক্রেনের ১১টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। কালুগা অঞ্চলে ১টি আর কুরস্ক অঞ্চলে ১০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়।

পাল্টা আক্রমণে সাফল্য পাচ্ছে কিয়েভ

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাল্টা আক্রমণে রাশিয়ার সুরক্ষিত প্রতিরক্ষাবলয়ের বিরুদ্ধে ‘ধীরে ধীরে সাফল্য’ পাচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার কিয়েভে অঘোষিত সফরে গিয়ে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলটেনবার্গ এ কথা বলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে পাশে নিয়ে ন্যাটোপ্রধান বলেন, ‘এখন আপনাদের বাহিনী সামনে অগ্রসর হচ্ছে। তারা ব্যাপক লড়াইয়ের মুখে পড়ছে; কিন্তু ধীরে ধীরে সাফল্য পাচ্ছে। ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রতিটি মিটার পুনরুদ্ধার মানে ওই এক মিটার রাশিয়ার হাতছাড়া হচ্ছে।’