পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ানোর পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এ কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এই সংকট সমাধানে আগ্রহী রাশিয়া। বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের বরাত দিয়ে গতকাল শুক্রবার আল-জাজিরা এসব কথা জানিয়েছে।
অবশ্য ইউক্রেনকে সতর্ক করে মেদভেদেভ বলেছেন, ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলের যেকোনো প্রচেষ্টা কিয়েভের বিরুদ্ধে মস্কোর ‘যেকোনো ধরনের চূড়ান্ত অস্ত্র’ ব্যবহারের ক্ষেত্র তৈরি করবে।
বর্তমানে মেদভেদেভ রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। এই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁকে পুতিনের ঘনিষ্ঠদের একজন মনে করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর থেকে মেদভেদেভ এই যুদ্ধের সবচেয়ে কড়া সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হন। প্রায়ই তিনি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এসব বক্তব্য ক্রেমলিনের অনেক কট্টরপন্থী নেতার চেয়ে কঠোর।
ইউক্রেনে নিজেদের দখলে থাকা এলাকাগুলো রক্ষায় মস্কো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতেও পিছপা হবে না বলে গত সেপ্টেম্বরে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মেদভেদেভ। তিনি বলেন, এ ধরনের সুরক্ষার জন্য ‘কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রসহ’ রাশিয়ার সব ধরনের অস্ত্র কাজে লাগানো হবে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। কিয়েভ ন্যাটোতে যোগদানের পদক্ষেপ নিয়েছে এমন অভিযোগেই ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল রাশিয়া। কিয়েভের এই পদক্ষেপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে আসছে মস্কো।
এদিকে রুশ বাহিনী প্রয়োজনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ কিংবা পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লিভিভ পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেদভেদেভ। বাখমুতে রুশ বাহিনী অবস্থান হারিয়েছে এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএকে মেদভেদেভ বলেন, ‘এখানে কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই ‘ব্যাধি’ ধ্বংস করার জন্য আপনার যদি কিয়েভে যেতে হয়, তাহলে যেতে হবে। আবার যদি লিভিভে যেতে হয়, তাহলে লিভিভেও যেতে হবে।’
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। ইউক্রেনের শিশুদের জোরপূর্বক রুশ নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মেদভেদেভ এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানাকে আইনত ‘অকার্যকর’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক তিক্ত ও উত্তেজনাপূর্ণ। নতুন করে এই পদক্ষেপ সে তিক্ততা আরও বাড়াবে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।