৯০০ কিলোমিটার দূর থেকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ছবিতে রাশিয়ার একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ইউক্রেনে বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দৃশ্য। ১০ অক্টোবর
 ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকালে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এতে অন্তত ১১ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভের একটি পদচারী–সেতুসহ অনেক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ হামলার মধ্য দিয়ে এখনো বড় মাত্রায় নির্ভুল নিশানায় হামলা চালানোর সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে রাশিয়া।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহনাত বলেছেন, কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলের লক্ষ৵বস্তুতে ৮৩টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে ৪৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে কালিবার, ইসকান্দার ও কেএইচ–১০১। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে কৃষ্ণসাগর ও কাস্পিয়ান সাগর থেকে।

কৃষ্ণসাগর ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে হলেও কাস্পিয়ান সাগর অনেক দূরের। মধ্য এশিয়ার দেশ আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আবদ্ধ জলাশয়ের দুই পাড়ে। আর অপর দুই পাড়ে রয়েছে ইরান ও রাশিয়ার সীমান্ত। বর্তমানে এই সাগরে রুশ নৌবাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ইউনিট মোতায়েন রয়েছে। ২০০২ সাল থেকে রাশিয়া নৌবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে শুরু করে। তার ফলশ্রুতিতে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রসংবলিত সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রুশ যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে এই সাগরে।

বিবিসি বলছে, ৯০০ কিলোমিটার দূরের এই কাস্পিয়ান সাগর থেকে এর আগেও ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সেখান থেকে আসা টিইউ–৯৫ বোমারু বিমান থেকে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলের লিভ শহর এবং দক্ষিণের ওদেসা বন্দরে হামলা চালানো হয়েছে।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে সড়কে এভাবে গাড়ি পুড়তে দেখা যায়। কিয়েভ, ইউক্রেন

ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্যমতে, গেল সপ্তাহান্তে জাপোরিঝঝিয়ায় যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, তা–ও হয়েছে টিইউ২২এম৩ বোমারু বিমান এবং এসইউ–৩৫ জঙ্গি বিমানের মাধ্যমে। এগুলোর প্রতিটিতেই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা রয়েছে।

আজকের হামলার বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের জ্বালানি, সামরিক ও যোগাযোগ অবকাঠামো লক্ষ করে আজ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ হামলা চালানো হয়েছে গত শনিবার ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুতে হামলার জবাব হিসেবে।

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে পুতিন বলেছেন, ‘আজ সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ এবং আমাদের জেনারেল স্টাফের পরিকল্পনা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করে দূরপাল্লার অস্ত্রের মাধ্যমে ইউক্রেনের জ্বালানি, সামরিক কমান্ড ও যোগাযোগ স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে।’  

রাশিয়ার এ হামলা ইউক্রেনে আরও আধুনিক পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের তথ্যমতে, আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ইউক্রেনে মার্কিন ন্যাশনাল অ্যাডভান্সড সারফেস–টু–এয়ার মিসাইল সিস্টেম (এনএএসএএমএস) পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানে কিয়েভে হামলা

প্রায় তিন মাস পর আবার আক্রান্ত হয়েছে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ। সেখানকার একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, নগরবাসী যেসব সড়ক ও পার্ক ব্যবহার করে, সেগুলোতেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

ইয়েভহেন পেত্রোভ নামের কিয়েভের ওই বাসিন্দা বিবিসি নিউজকে বলেন, ‘তারা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করেনি, এমনকি বেসামরিক স্থাপনাও নয়। সকাল আটটায় যখন বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে বেরিয়েছে, সে সময় কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে শিশুদের একটি খেলার মাঠকে নিশানা করা হয়েছে।’

আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধসে যাওয়া ভবনে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন ইউক্রেনের জরুরি সেবাকর্মীরা। জাপোরিঝঝিয়া, ইউক্রেন

সকাল নয়টার দিকে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন জানিয়ে পেত্রোভ বলেন, ‘সে সময় আমি দুটি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাই। বিস্ফোরণগুলো যেসব জায়গায় ঘটেছে, সেগুলো আমার অবস্থান থেকে তেমন দূরে ছিল না।’

পেত্রোভ জানান, আক্রান্ত একটি স্থাপনা থেকে ধোঁয়া উড়ছিল। তা দেখতে তিনি কিয়েভের কেন্দ্রস্থলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই হামলা সুনির্দিষ্টভাবে বেসামরিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। কারণ, এ জায়গা হলো শহরের বিভিন্ন দিক থেকে আসা সড়কগুলোর সংযোগস্থল। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে অফিসপাড়ায় যাওয়ার সড়ক সংযুক্ত হয়েছে এখানে।’

যেসব পার্কে হামলা হয়েছে, সেগুলোর একটিতে সকালে লোকজন কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হয় বলে জানিয়েছেন পেত্রোভ। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার অভিযান শুরুর পরের দিনগুলো যেমন ভয়ের ছিল, সে রকমই হয়ে উঠেছিল আজকের সকাল। তবে এখন লোকজন জানে এমনটি হলে কী করতে হবে।’ ইউক্রেনের এই নাগরিক বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র একদিন শেষ হবে। কিন্তু আমরা আগের মতোই থাকব।’