তুরস্কে ভূমিকম্পে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতিকে শতাব্দীর মধ্যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কাহরামানমারাস শহর। ভয়াবহ ভূমিকম্পে দৃশ্যত এই শহর মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সেখানে যা ঘটেছে, অনেক চলচ্চিত্রের সঙ্গেও মিলে যায়। তবে শুধু মিলে যাওয়া নয়, ঠিক চলচ্চিত্রের মতো ঘটনাও ঘটেছে সেখানে।
ভূমিকম্প আঘাত হানার পর কাহরামানমারাসের প্রত্যন্ত একটি গ্রাম বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তুরস্কের সংবাদমাধ্যম হুররিয়েত ডেইলি নিউজ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর গ্রামটিতে এক বয়স্ক দম্পতি পরিবারের দুই শিশুকে নিয়ে আটকা পড়েন। একপর্যায়ে পা দিয়ে তুষারের ওপর বড় অক্ষরে ‘ইয়ারদিম এত’ লিখে রাখেন তাঁরা। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় ‘সাহায্য চাই’। উদ্দেশ্য ছিল, প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাহায্য নিয়ে যাওয়া হেলিকপ্টারের দৃষ্টি আকর্ষণ।
সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার পাইলট আয়তেকিন চাকিরকের্ক বলেন, তুষারের ওপর প্রথমে তিনি শব্দগুলো দেখতে পান। তিনি বলেন, ‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়াটা কঠিন ছিল। একটি গ্রাম থেকে একবার ফেরার সময় আমি বড় অক্ষরে “সাহায্য চাই” শব্দগুলো দেখতে পাই। আশপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছিল না। তাই আমি আবারও নিচু দিয়ে উড়ে যাই।’
পাইলট বলেন, লেখাটির সামান্য দূরেই ওই উপত্যকায় দুটি ঘর দেখা যায়। সেখান থেকে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া সৃষ্টি করে হেলিকপ্টারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘যখন আমি আরও কিছুটা কাছে যাই, একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে তুরস্কের পতাকা দোলাতে দেখি।’
আয়তেকিন বলেন, ঝুঁকি নিয়েই উপত্যকার একটি ঢালু জায়গায় হেলিকপ্টার অবতরণ করে। সেখানে গিয়ে বয়স্ক এক দম্পতি ও দুই শিশুকে দেখতে পান তাঁরা। তাঁদের সাহায্যের খুবই প্রয়োজন ছিল। পাইলট তাঁদের তালিকা করে কাহরামানমারাসে ফিরে আসেন। আধা ঘণ্টার মধ্যেই আবার সাহায্যসামগ্রী নিয়ে ওই গ্রামে পৌঁছান।
পাইলট বলেন, ‘তাঁদের ঘর অক্ষত ছিল, কিন্তু তাঁরা ছিলেন বিধ্বস্ত। বাকি জীবনে আমি এ ঘটনা ভুলতে পারব না। এভাবে “সাহায্য চাই” লিখতে আমি চলচ্চিত্রে দেখেছি।’