রুশ সেনাদের সহযোগী ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনে যুদ্ধরত ভাগনার গ্রুপ অভিযোগ করেছে, বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পর্যাপ্ত গোলাবারুদ পাচ্ছে না তারা। এতে তাদের সেনারা বিপাকে পড়েছেন। গোলাবারুদের সংকটের জন্য সম্ভাব্য ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ কথাও বলছে ভাগনার গ্রুপ।
বাখমুত শহর দখলে রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ছেন ভাগনার সেনারা। সেখানে গোলাবারুদ সরবরাহ বন্ধের এমন অভিযোগ ভাগনার নেতা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মিত্র ইয়েভজেনি প্রিগোশিনের। প্রিগোশিনের সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে বলে জানা যায়।
গতকাল রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে প্রিগোশিন অভিযোগ করেন, রাশিয়ার যেসব রিজার্ভ সেনা বাখমুতে মোতায়েন করার কথা ছিল তাঁদের বাখমুতে না পাঠিয়ে অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া রুশ বাহিনী গোলাবারুদ সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কয়েক দিন পার হলেও সেসব আসেনি।
গোলাবারুদ সরবরাহে বিলম্বের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রিগোশিন বলেন, ‘আমরা বোঝার চেষ্টা করছি এর কারণ কী—সাধারণ আমলাতন্ত্র নাকি বিশ্বাসঘাতকতা।’
ক্রেমলিনের সঙ্গে ভাগনারের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয়টি উঠে এসেছে প্রিগোশিনের কথায়। তিনি বলেন, ‘বাখমুতে যেসব স্থানে সম্মুখযোদ্ধারা ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছেন, ফেব্রুয়ারির শেষদিকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাশিয়া যদি গোলাবারুদ সরবরাহ না করে তাহলে এই সম্মুখযোদ্ধাদের বিপর্যয় ঘটবে।’
দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের শক্তিশালী অবস্থান সোলেদার ও বাখমুত শহরে। সোলেদার দখলের পর এখন রুশ সেনাদের লক্ষ্য বাখমুত। ইউক্রেনীয় সেনাদের পালানোর জন্য এখনো একটি সড়ক খোলা রয়েছে, সেটি দখলেই লড়াই চলছে এখন। ওই সড়ক রাশিয়ার দখলে চলে গেলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে বাখমুত।
বাখমুতে রুশ বাহিনীর হামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে ভাগনার। শহরটির নিয়ন্ত্রণে চলছে রক্তক্ষয়ী লড়াই। বাখমুত দখল করতে পারলে রুশ বাহিনীর জন্য দোনেৎস্কের বাকি দুই শহর ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক দখলের পথ উন্মুক্ত হবে। প্রিগোশিন বলেন, ‘ভাগনার এখন বাখমুত থেকে পিছু হটলে এত দিনের লড়াই ভেস্তে যাবে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার বলছে, ‘কৌশলগত কারণে ইউক্রেনের সেনারা বাখমুত থেকে ইতিমধ্যে পিছু হটা শুরু করেছে।’
এদিকে আজ সোমবার ইউক্রেনের বিমানবাহিনী দাবি করেছে, দেশটির আকাশসীমা থেকে রাশিয়ার ১৩টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে তারা। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিস্ফোরকবোঝাই এসব ড্রোন ইউক্রেনে পাঠানো হয়েছিল। ড্রোন ভূপাতিত করার আগে কিয়েভে কয়েক ঘণ্টা ধরে সতর্কসংকেতও বাজানো হয়।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানায়, রুশ বাহিনী ১৫টি ড্রোন ইউক্রেনে পাঠায়। এর মধ্যে ১৩টি ড্রোন ভূপাতিত করে তারা। শাহেদ নামে এসব ড্রোন ইরানের তৈরি। গত বছরের অক্টোবর থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে প্রতিদিনই ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে রুশ বাহিনী।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ সেনাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আজ সোমবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় মারিউপোল শহর পরিদর্শনের সময় তিনি রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ সেনা কমান্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। মারিউপোল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসার বছরপূর্তিতে এই সফর করলেন তিনি।